অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন: শিক্ষায় প্রতিবছরই বরাদ্দ বাড়ছে : শিক্ষামন্ত্রী। তারা কি সত্যিই জনগণকে বোকা ভাবেন! আর বোকা বানিয়ে রাখার জন্য শিক্ষাকেই তারা হাতিয়ার বানিয়েছেন। আসুন একটু সার্জারি করে পর্যালোচনা করি। আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষার জন্য মোট বাজেটের ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ শিক্ষাখাতে বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে। যা চলতি অর্থবছরে ছিল ১২ দশমিক ১ শতাংশ। কী বেড়েছে, না কমেছে? মন্ত্রী কীভাবে বলেন বরাদ্দ বেড়েছে? আগামী অর্থবছরে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দিয়েছে জিডিপির মাত্র ১.৭৬%! যা চলতি অর্থবছরে ছিল জিডিপির ১.৮৩%, আর এর আগের বছর ছিল ২.০৮%। তাহলে কী দাঁড়ালো? বেড়েছে, না কমেছে? মন্ত্রী কীভাবে বলেন বরাদ্দ বেড়েছে?
হ্যাঁ, টাকার অংকে বেড়েছে। আগামী অর্থবছরে শিক্ষা খাতে টাকার অংকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরে ছিল ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা। হ্যাঁ সংখ্যায় বেড়েছে। কিন্তু জিডিপির শতাংশ কিংবা মোট বাজেটের শতাংশের হিসাবে কমেছে। মন্ত্রী কেবল অংকের হিসাবে বাড়াকেই বাড়া বলছেন। কিন্তু আসলেই কি বরাদ্দ বেড়েছে? গত বছরের ১০০ টাকার মূল্য কি আজও ১০০ টাকা আছে? মুদ্রাস্ফীতি, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টির জন্য খরচ বৃদ্ধি, নতুন শিক্ষাক্রমের জন্য খরচের বৃদ্ধি বিবেচনায় নিলে বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ নজিরবিহীনভাবে কমেছে। অথচ মন্ত্রী অবলীলায় বলে দিলেন, শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে।
সরকারের সঙ্গে তাঁর দেনদরবার করা উচিত ছিল এবং এখনো আছে। এখনো সংশোধন আনার সুযোগ আছে। জিডিপির সর্বকালের সর্বনিম্ন বরাদ্দ নিয়ে একজন শিক্ষামন্ত্রী যদি আত্মতুষ্টিতে ভুগেন, তাহলে তাঁর নেতৃত্বে দেশের শিক্ষা ভালোর দিকে এগোবে কীভাবে আশা করবো? লেখক: শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়