রবিউল আলম: দেশের উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প এখনো নিন্দুকেরা আবিষ্কার করতে পারেনি। ভিন্নমতের রাজনীতিকেরা শুধু মেগাপ্রকল্পের মেগা চুরির গায়েবি অপবাদ ছাড়া আর কিছুই বলতে পারেননি। পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়েও কম বিতর্ক হয়নি। বিশ^ব্যাংক থেকে বিশ^ পরিমন্ডলে আলোচিত, দুর্নীতির অপবাদের শেষ ছিলো না। কানাডার আদালত সাক্ষী দিয়েছে, পদ্মা সেতু নিয়ে কোনো দুর্নীতি হয়নি। শেখ হাসিনার অনমনীয় মনোভাবে বাঙালির স্বপ্নপূরণে কোনো বাধা হতে পারেনি, নিজেদের অর্থায়নে তৈরি করে বিশ্বব্যাংকে পদ্ম সেতুর ছবি উপহার দেওয়া হয়েছে। অর্থনীতির চালিকাশক্তি এখন আমাদের পদ্মা সেতু। কিছুটা অভিমান থেকে অনেক দেরিতে পদ্মা সেতু দেখা হলো, মোটরসাইকেলের অনুমতি না থাকার জন্য। মোটরসাইকেল ছাড়া যে আমার আর কোনো বাহন নেই!
তিন ঘণ্টায় ঢাকা থেকে ভাঙা যাওয়া-আসা করেছি। এই যাওয়া-আসার আনন্দ উপভোগের ইতিহাস লেখে শেষ করা যাবে না। ইতোমধ্যেই অনেকেই অবগত আছেন। স্বীকার করবে না শুধু বিএনপি-জামায়াত। তারা জানেন না, মেগাপ্রকল্প ছাড়া জাতিকে বড় স্বপ্ন দেখানো যায় না। তারা তো এটাও জানতেন না, ভিক্ষার টাকা, বিদেশের অনুদানে দেশ জাতির সম্মান থাকে না। মাথা নীচু করে বিদেশিদের সব ষড়যন্ত্র মেনে নিতে হয়। ওরা কোনো সরকারের স্থায়িত্ব সহ্য করতে পারে না, দেশ উন্নত হয়ে যাওয়ার ভয়ে। শেখ হাসিনার সরকার উন্নয়নের প্রমাণ দিয়েছে, সরকারের স্থায়িত্ব আছে এমন সরকার জাতির জন্য কতোটা অবদান রাখতে পারে সে তো এখন আর বলার অপেক্ষা রাখে না। জনগণের রোষানল বিএনপিকে ডাস্টবিনে, জামায়াতকে নালা-নরদমায় পশ্চিমাদের হাত ছিলো, আজ শেখ হাসিনার ধমক খেতে হচ্ছে। এই ক্যারিশমার সবই অর্জন মেগাপ্রকল্পের জন্য, অর্থনীতির গতির জন্য।
মেট্রোরেল, কর্ণফুলি টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরী, কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশন, বিমানবন্দর, ঢাকায় তৃতীয় টার্মিনাল, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর, পায়রা বন্দর ও বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে বাংলাদেশ কোন উচ্চতায় বিশ্বের পরিচয় বহন করবে? ইতোমধ্যে মধুমতি, রূপসা, পায়রা সেতু-সহ শতাধিক বৃহৎ সেতু উদ্বোধন করা হয়েছে। মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে শুরুটা ছিলো পাবলিক-প্রাইভেট পাটশিপের মাধ্যমে, খিলগাঁও, রামপুরা, মগবাজার, তেজগাঁও, মহাখালী, বিমানবন্দর সড়ক এখন অবিশ্বাস্য মনে হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ, পুর্বাঞ্চল দক্ষিণাঞ্চল, যেদিকে আপনি তাকাবেন, শেখ হাসিনার উন্নয়ন আপনাকে অবাক করবে। মেট্রোরেল, পাতালরেল মানুষের দেশের প্রয়োজন, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প কোনটা? অনেকের প্রশ্ন, ঋণের কিস্তি আসলে নাকি বাঙালির নাভিশ্বাস উঠবে। যারা পারেন না, তাদের নাভিশ্বাস এমনিতেই ওঠে। বাবার জমিতে হাউজ বিল্ডিংয়ের ঋণ নিয়ে বাড়ি করতে পারেননি, বাড়ি বিক্রি করে খেতে হয়েছে।
তিরিশ-চল্লিশ বছরে ঋণ পরিশোধ করার সুযোগ ছিলো। একটু কষ্ট, একটু পরিকল্পনা আপনার সমৃদ্ধির পথ আবিষ্কার করতে পারতো। বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বিদেশিরা উঠিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না। আমাদের প্রকল্প থেকে কিছুটা আয়, বিদেশের শ্রমিকের জীবনযুদ্ধ, জাতিসংঘে শান্তি রক্ষার দায়িত্বে দেশের গর্বিত সেনাবাহিনীর অর্থ ও বাঙালির ট্যাক্সের টাকায় শতবছর হলেও আমরা ঋণমুক্ত হবো ইনশা আল্লাহ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ছাড়া মেগাপ্রকল্পের স্বপ্ন ও বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। তার একটি কথা আমার মনে অনেকটা নাড়া দিয়েছে। আমরা বিদেশিদের চাপিয়ে দেওয়া কোনো বিলাসবহুল প্রকল্প গ্রহণ করি না, জাতির প্রয়োজনে, দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সামঞ্জস্য থাকতে হবে।
‘একটি টাকা বাঁচানোর চেষ্টা করি। আমার জীবন একটাই, যেভাবে হোক একদিন চলেই যেতে হবে। মা-বাবা, ভাই, আত্মীয়-স্বজন সবাইকে হারিয়ে আমি নিঃস্ব। চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। বাঙালির ও বাংলাদেশের জন্য এই জীবন উৎসর্গ করে রেখেছি। আমাকে ধমক দিয়ে, ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না’।Ñ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে স্যালুট, জানি আপনার বিচক্ষণতার তুলনা করার মতো দুঃসাধ্য আমার এবং আমাদের কারও নেই। আপনার চেয়ে দেশ ও জাতিকে ভালোবাসতে পারবো না, যেটুকু দেশের জন্য দলের জন্য অর্জন, আপনাকে অনুসরণ করে। মনের আশা ও আকাক্সক্ষা থেকে লিখতে হয় নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারিয়ে মুজিব পাগল হয়েছি। একসময়ের পাগলামি ছিলো হরতাল, অবরোধে, আগুনের লেলিহানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, প্রতিবাদ, মিটিংমিছিল। এখন পাগলামি হচ্ছে কলমে! সবসময় চেয়ে থাকি আপনার মুখে দিকে, হুকুমের আশায়। এই দেশ ও বিশ্ব আপনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে।
দেশের এখন ঋণ কতো? এই ভাবনা থেকে আপনাকে বেরিয়ে আসতে হবে। দেশের ছোট ছোট কিছু প্রকল্প কাটছাঁট করে হলেও ভোলা বরিশাল ও নগরবাড়ী দৌলদিয়া পাটুরিয়া সেতুর কাজ শুরু করতে হবে। প্রয়োজনে পাতাল রেলের কাজ কিছুটা ধীরগতি হলেও। ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করতে যতোটা দেরি হবে, ততোটাই জনদুর্ভোগ হবে। বিদেশি ঋণের টাকার কিস্তির প্রতিবন্ধকতা হবে। গ্যাসের জন্য ভোলা ভাসছে, গ্যাসের অভাবে শিল্পকারখানা, বিদ্যুৎ সার-কারখানাসহ রপ্তানির প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। গ্যাস আমদানির বৈদেশিক মুদ্রার সংকট পূরণে ভোলা বরিশাল সেতু অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। মাত্র ১১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প, খুব বড় বিষয় নয়, ইতোমধ্যে সাতশ কোটি টাকা আমাদের পদ্মা সেতুর আয়। ভোলার গ্যাসের টাকা যুক্ত হলে, আপনার হাতে শক্তি অনেকাংশে বেড়ে যাবে। আপনি এর চেয়ে অনেক বড় বড় প্রকল্পের স্বপ্নপূরণ করেছেন। যে কারণে আপনার প্রতি জাতির এতোটা নির্ভরতা। পাটুরিয়া সেতুর বাংলাদেশে নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করবে, আপনি ছাড়া আমাদের আর কে আছে, যাকে বলা যায়। দেশ ও জাতির জন্য পদ্মা সেতুর শ্রমিকের অভিজ্ঞতা আামাদের জাতীয় সম্পদ, এই সম্পদ কাজে লাগাতে হবে। কালো টাকার তালিকা করা হয়েছে, ইতোমধ্যে বেগম খালেদা জিয়া সহ অনেকেই জরিমানা দিয়ে কিছু টাকা সাদা করেছেন। নিজ দলের অনেক রথি-মহারথী সুইস ব্যাংকে, সেকেন্ড হোমে, বেগমপাড়ায় জমিয়ে বসেছে আছে। আপনার কিছুই অজানা নয়। দুর্নীতির মূলোৎপাটন করতে চাইলে দুই-চারটাকে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত বাংলাদেশ কোনো স্বপ্নের বিষয় নয়, বাঙালি জেগে উঠলে, জাগিয়ে তুলতে পারলে এই দুর্নীতিবাজ, মাদককারবারীদের ঘুম হারাম করে দেবে। শুধু রাজনৈতিক ঐক্যের প্রয়োজন। বিএনপি-জামায়াতের কাছে আশা করা যায় না, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এ বছরের শেষে অথবা ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে, শেখ হাসিনার কারিশমা দেখতে চাইলে।
লেখক: মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি