মঈন চৌধুরী: সে অনেকদিন আগের কথা। আমি প্রথমবারের মতো রবীন্দ্রনাথের শিলাইদহ দেখতে গেছি। সবকিছু দেখার পর প্রায় সন্ধার দিকে গেলাম দিঘির ঘাটে। পাকা ঘাটলার দু’পাশে দুটো বকুল গাছ। কে যেন আমাকে বললো, বকুল গাছ দুটো কবিগুরুর নিজের হাতে লাগান, তবে ডান দিকের গাছটা মরে যাওয়াতে নতুন ভাবে লাগানো হয়েছে, কিন্তু বা দিকের বকুল গাছ সেই পুরাতন রবীন্দ্রনাথের হাতে লাগানো গাছ। এই বকুল গাছতলায় বসেই রবীন্দ্রনাথ নাকি লিখেছিলেন তার সেই বিখ্যাত গান ‘যেদিন পরবে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে...’।
তখন সন্ধ্যে হয়ে গেছে। আমি কবির নিজ হাতে লাগানো গাছটাকে জড়িয়ে ধরে গুন গুন করে গাইলাম, ‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে, বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে, ... ফুলের বাগান ঘন ঘাসের পরবে সজ্জা বনবাসের, শ্যাওলা এসে ঘিরবে দিঘির ধারগুলায়’। হঠাৎ আমার কি হলো জানি না, চোখ দিয়ে লোনা জলের বৃষ্টি নামলো, আমি বকুল গাছটাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম। কতক্ষণ আমি কেদেছিলাম আর ওখানে ছিলাম তা জানি না, তবে অন্ধকার হয়ে যাবার পর কুঠি বাড়ির একজন আমাকে বাইরে যেতে বললে আমি ওই গাছ ছেড়ে কুষ্টিয়া শহরে ফিরেছিলাম। আমি এখনো যখন শিলাইদহে যাই, ওই বকুল গাছ আমাকে ইমোশনাল করে ফেলে।
আজ কবিগুরুর জন্মদিন। আমি আমার অন্তরের সমস্ত ইমোশন আর আবেগ নিয়ে আমার গুরু, আমার রবীন্দ্রনাথকে শ্রদ্ধা আর সালাম জানাই। আদি বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আমার জন্মও হয়েছিল বাংলা ২৫ বৈশাখ, এপ্রিল ৯, শুক্রবার, শেষরাত ৪:৩০ মিনিটে (ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১০ মে, শনিবার, ভোর ৪:৩০ মিনিটে)। আমি ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১০ মে আমার জন্মদিন পালন করি আর কামনা করি আমার রবীন্দ্রনাথ সুখে, দুখে, আনন্দ ও বেদনায় আমাকে পথ দেখাক। ফেসবুক থেকে