শিরোনাম
◈ ফলকার টুর্ককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করল ভেনেজুয়েলার পার্লামেন্ট ◈ ভোলায় স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ: প্রধান আসামিসহ তিনজন গ্রেপ্তার, অভিযুক্ত নেতারা দল থেকে বহিষ্কৃত ◈ মুরাদনগরে মাদককারবারির অভিযোগে তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা, একজন গুরুতর আহত ◈ গণঅভ্যুত্থান সরকারের কেউ কেউ ‘লুটপাট’ করে বেহুঁশ হওয়ার দশা: ইশরাক হোসেন ◈ যে কারণে পিআর পদ্ধতি চায় জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন ◈ ‘মেগাস্টার’ শব্দকাণ্ডে বিতর্ক: “আমি মানুষটা ছোট, অন্যকে ছোট করব কীভাবে” — জাহিদ হাসান ◈ এবার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন শিল্পকলার চারুকলা পরিচালক ◈ কেশবপুর পৌরসভার  সাবেক মেয়র রফিকুল গ্রেফতার ◈ বেনাপোল কাস্টমসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩১৬ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় ◈ পার্বত্য চট্টগ্রামের একশ স্কুলে এবছরই ই-লার্নিং চালুর নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

প্রকাশিত : ৩০ মার্চ, ২০২৩, ১২:৫০ রাত
আপডেট : ৩০ মার্চ, ২০২৩, ১২:৫০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সাংবাদিক বা কোনো নাগরিককে কি যথাযথ প্রক্রিয়া না মেনে গ্রেপ্তার করে নেওয়া যায়?

স্বকৃত নোমান

স্বকৃত নোমান: সংবাদপত্রে প্রকাশিত কোনো খবর বা ছবির জন্য সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যেতেই পারে। কেননা সাংবাদিকরা আইনের ঊর্ধ্বে নন। কোনো সংবাদপত্র যা খুশি তা প্রকাশ করে দিতে পারে না। স্বাধীনতা দিবসে ‘প্রথম আলো’র অনলাইনে প্রকাশিত সাভারের সেই ফুল বিক্রেতা কিশোরের ছবিটি প্রকাশ করে ‘প্রথম আলো’ ভুল করেছিলো। ‘চাল-মাংসের স্বাধীনতা’ বিষয়ে আরেক ফুল বিক্রেতা জাকির হোসেনের সেই বক্তব্যটিও যে জাকিরের ছিলো না, তা সাংবাদিকতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যে কেউ সহজেই বুঝতে পারবেন। ওটা ছিলো প্রথম আলোর স্থানীয় প্রতিনিধির বানানো কথা। কোনো ফুল বিক্রেতা বুদ্ধিজীবীর মতো এভাবে কথা বলে না। মানুষ ভুল করে। ভুল করাটাই মানুষের স্বভাব। ভুল না করলে মানুষ নির্ভুল ফেরেশতা হয়ে যেত। সাংবাদিকরাও ভুল করে। আগে ভুল কম করত। এখন বেশি করে। কারণ এখন বিস্তর ‘অসাংবাদিক’ ঢুকে বসে আছে সাংবাদিকতা জগতে। সাংবাদিকের ভুল সাধারণের ভুল এক নয়। সাংবাদিকের ভুলে গৃহযুদ্ধ লেগে যেতে পারে, দাঙ্গা লেগে যেতে পারে, সরকারের পতন হয়ে যেতে পারে, সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হয়ে যেতে পারে। ‘প্রথম আলো’ সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকেরা বুঝতে পেরেছিলো ওই নিউজ ও ছবিটি প্রকাশ করা যে ভুল ছিলো। ভুল বুঝতে পেরে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তারা সংশোধনীও দিয়েছিলো।

সংশোধনীতে লিখেছিলো, ‘প্রথমে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনের শিরোনাম এবং ব্যবহার করা ছবির মধ্যে অসঙ্গতি থাকায় ছবিটি তুলে নেওয়া হয়েছে এবং শিরোনাম সংশোধন করা হয়েছে। শিরোনামে উদ্ধৃত বক্তব্য ছবিতে থাকা সবুজ মিয়ার ছিলো না, ছিলো দিনমজুর জাকির হোসেনের। একই কারণে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া পোস্টও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে’। পত্রিকায় ভুল কিছু প্রকাশ হলে সংশোধনী দেওয়া হয়। এটা সংবাদপত্রের রীতি। কারও বিরুদ্ধে কিছু ছাপা হলে তার প্রতিবাদও ছাপা হয়। ছাপতে বাধ্য থাকে পত্রিকা। এটাই রীতি। প্রথম আলোয় প্রকাশিত সেই নিউজটি হয়তো সম্পাদক মতিউর রহমান দেখেনইনি। হতে পারে, এমনটা হতেই পারে যে, সম্পাদকের অজান্তে অনেক নিউজ চলে যায়। তাই বলে এর দায় সম্পাদক এড়াতে পারেন না। এড়ানোর কথা বলছিও না। কিন্তু আমরা কী করলাম? আমরা মনে করলাম প্রথম আলো ভুল করতেই পারে না। আমরা মনে করলাম মতিউর রহমান নির্ভুল ফেরেশতা। আমরা সতত নেতির পক্ষে। ইতিবাচকতার চেয়ে আমরা নেতিবাচকতা প্রচারে বেশি উৎসাহী। এটা আমাদের রক্তগত সমস্যা। ভুলে করে ভুল স্বীকার করলেও আমরা মানি না। আমরা নির্দয়, আমরা নিষ্ঠুর, আমরা ক্ষমাহীন, আমরা সদাই খড়গহস্ত। আমরা মতিউর রহমানকে রাজাকার বানিয়ে দিলাম, দেশদ্রোহী বানিয়ে দিলাম, রাষ্ট্রদ্রোহী বানিয়ে দিলাম, পাকিস্তানপন্থী বানিয়ে দিলাম। তার অর্ধনগ্ন ছবিও প্রচার করলাম। আমরা সার্ফ এক্সেল দিয়ে তাঁকে এবং তার ‘প্রথম আলো’কে ধুয়ে দিলাম।

কেউ একটিবার বললাম না ‘প্রথম আলো’র সেই সংশোধনীর কথা। কেউ সংশোধনীর জন্য একটিবার ধন্যবাদ দিলাম না। ফলে ‘প্রথম আলো’র বিরুদ্ধে গণসম্মতি উৎপাদন হয়ে গেলো। সেই গণসম্মতির ফলাফল হিসেবে গ্রেপ্তার হলো প্রথম আলোর সাভারের সাংবাদিক শামসুজ্জামান। সিআইডির লোকজন তাকে ২৯ মার্চ সকালে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেলো। সংবাদিকরা সাংবাদিকতা সংক্রান্ত কোনো ভুল করলে তার জন্য প্রেস কাউন্সিল আছে। তাই তো নাকি? নাকি প্রেস কাউন্সিল নামসর্বস্ব কোনো প্রতিষ্ঠান? আচ্ছা, বাদ দিলাম প্রেস কাউন্সিলের কথা। সাংবাদিকেরা সাংবাদিকতা সংক্রান্ত কোনো ভুল করলে তার জন্য তথ্য মন্ত্রণালয় তো আছে। আচ্ছা, মন্ত্রণালয়ের কথাও না হয় বাদ দিলাম। সাংবাদিকেরা সংবাদ সংক্রান্ত কোনো ভুল করলে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবাদী মামলা হতে পারে। মামলার পর ওয়ারেন্ট জারি হতে পারে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক, সম্পাদক, প্রকাশক ও নিউজ এডিটরে বিরুদ্ধে। তারপর তাদের গ্রেপ্তারও করা যেতে পারে। বিচারে তাদের কারাদণ্ডও হতে পারে। 

এসব প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে না গিয়ে সিআইডি যে সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেলো, তা কি সমর্থনযোগ্য? কোনো সাংবাদিক বা কোনো নাগরিককে কি এভাবে গ্রেপ্তার করে নেওয়া যায়? আর সেই নিউজ ও ছবির জন্য কেবল তার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেওয়া হবে কেন? নিলে তো সম্পাদক, প্রকাশক ও নিউজ এডিটরের বিরুদ্ধেও নেওয়ার কথা। নিয়ম তো তা-ই বলে। কেবল শামসুজ্জামানকে এভাবে তুলে নেওয়া অন্যায়। রীতি পরিপন্থী। আইনের পরিপন্থী। সুশাসনের পরিপন্থী। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে রাখলাম। 

 লেখক: কথসাহিত্যক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়