শিরোনাম
◈ ভোলায় স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ: প্রধান আসামিসহ তিনজন গ্রেপ্তার, অভিযুক্ত নেতারা দল থেকে বহিষ্কৃত ◈ মুরাদনগরে মাদককারবারির অভিযোগে তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা, একজন গুরুতর আহত ◈ গণঅভ্যুত্থান সরকারের কেউ কেউ ‘লুটপাট’ করে বেহুঁশ হওয়ার দশা: ইশরাক হোসেন ◈ যে কারণে পিআর পদ্ধতি চায় জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন ◈ ‘মেগাস্টার’ শব্দকাণ্ডে বিতর্ক: “আমি মানুষটা ছোট, অন্যকে ছোট করব কীভাবে” — জাহিদ হাসান ◈ এবার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন শিল্পকলার চারুকলা পরিচালক ◈ কেশবপুর পৌরসভার  সাবেক মেয়র রফিকুল গ্রেফতার ◈ বেনাপোল কাস্টমসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩১৬ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় ◈ পার্বত্য চট্টগ্রামের একশ স্কুলে এবছরই ই-লার্নিং চালুর নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার ◈ ডার্পা প্রযুক্তি : যেভাবে তারবিহীন বিদ্যুৎ আবিষ্কার করে অবাক করলো বিশ্বকে (ভিডিও)

প্রকাশিত : ২৫ মার্চ, ২০২৩, ১২:০৮ রাত
আপডেট : ২৫ মার্চ, ২০২৩, ১২:০৮ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

প্রচণ্ড সাহস ও পরোয়াহীন জীবনের প্রেরণা হয়ে বেঁচে থাকবেন

মঞ্জুরে খোদা টরিক

মঞ্জুরে খোদা টরিক: ১৯৮৮ সালে একটা মামলার কারণে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে আত্মগোপনে ছিলাম। সে বছরই শামীম সিকদারের করা টিএসসির স্বোপার্জিত স্বাধীনতা’ ভাস্কর্যটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। জগন্নাথ হল ও শামসুন্নাহার হলের কোনায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য করা নতুন বহুতল ভবনের ওখানে একটা পুরনো লাল ইটের বাড়িতে শামীম শিকদার থাকতেন। তাঁর সেই বাড়ির সামনেই একটা বড় ভাস্কর্য ছিলো। তার মধ্যে রঙিন লাইট-পানির ব্যবস্থাও ছিল। সেখানে অনেক গাছপাল-জঙ্গলের মতো ছিল, পরিবেশটা কিছুটা ভূতরে ছিল। সেখানে উনাকে মাঝেমধ্যে হাটাহাটি, কাজ করতে দেখেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চারুকলাসহ বিভিন্ন স্থানে উনাকে দেখেছি কিছু কথাও হয়েছে। 

ভাস্কর অনেকেই আছে, ভাস্কর্যও অনেক আছে। কিন্তু উনাকে মনে করার কারণ উনি সাধারণ বা গড়ের মানুষে ছিলেন না। তার জীবনযাপন, কথাবার্তা, চলাফেরা ছিল অন্যরকম। বুক পকেটে সিগারেট রাখা, সেখান থেকে সিগারেট বেড় করে প্রকাশ্যে ধূমপান করা, সবসময় জিন্স, প্যান্ট টি-শার্ট, বোতাম ছাড়া শার্ট, জ্যাকেট পরা, সাইকেল চালানো, নানা ধরণের জিনিস ব্যবহার ইত্যাদি। 

আমরা যে মেয়েদের-নারীদের দেখে অভ্যস্ত উনি তার ধারেকাছেও ছিলেন না। কিন্তু তার এই পোশাক-চলাফেরার কারণে সমালোচিত হয়েছেন হয়তো কিন্তু কখনো হুমকি পেয়েছেন, তার জীবনযাপন থমকে গেছে তেমনটা শুনিনি। আর তিনি পরোয়া করা, মাথানত করার মানুষও ছিলেন না। উনার ভাস্কর্যের অনেক সমালোচনা শুনেছি। কিন্তু একজন নারী হিসেবে তিনি যে সময় এই কাজগুলো করেছেন এখন আর সে রকম কাউকে দেখি না বা শুনিনা। তার মানে তার সাহসী কর্ম ও পরোয়াহীন জীবনযাপনকে অনুসরণ করার মতো নারী আর দেখা যায়না, দেশে সেই পরিবেশ-বাস্তবতা নেই। উনাকে নিয়ে অনেক মিথ প্রচলিত ছিলো। বড়ভাই কমরেড সিরাজ শিকদারকে হত্যা করার পর তিনি তাঁর ভাইয়ের হত্যার প্রতিশোধ নিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন। শুনেছি, তিনি স্বশস্ত্রও হয়েছিলেন, আত্মগোপনে গিয়েছিলেন। আহমদ ছফার ‘অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী’ প্রকাশ হবার পর উনাকে নিয়ে ভিন্নমাত্রার মিথ তৈরি হয়। উনার জীবনযাপন নিয়ে বিভিন্ন ধরনের রোমাঞ্চকর মিথ ছিল।  

শামীম সিকদারের মৃত্যু একটা সাহসÑস্পর্দ্ধার ইতি হয়তো। আমাদের সমাজ তাঁদের ধারণ করার উপযোগী হতে পারেননি। আজ থেকে ৪-৫ দশক আগে এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ভাস্কর হিসেবে তিনি যে জীবনযাপন করেছেন, যেভাবে চলাফেরা করেছেন এখন সেই বাস্তবতা নেই। তার মানে সমাজ আরো পিছিয়েছে। যে দেশে একটি পাথরের মূর্তি-ভাস্কর্যও নিরাপদ নয় সেখানে মানুষ নিরাপদ হয় কী করে? শামীম সিকদার আর নেই, তিনি হয়তো পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে মিথ হয়েই থাকবেন। প্রচলিত সমাজের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড সাহস ও পরোয়াহীন জীবনের প্রেরণা হয়ে বেঁচে থাকবেন। লেখক ও গবেষক

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়