আশরাফুল আলম খোকন: সাংগঠনিক ক্ষমতা বলে যে কাউকে নেতা বানিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু একজন রাজনীতিবিদ তৈরি হতে অনেক ত্যাগ, শ্রম, মেধা ও প্রজ্ঞার দরকার হয়। যখন এর মূল্যায়ন না হয়ে অবজ্ঞা, অবহেলা কপালে জোটে তখন রাজনীতির সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিটিও নিঃশেষ হয়ে যায়। যেমনটি ঘটলো ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক মনির হোসেনের ক্ষেত্রে। হৃদরোগে মারা গেলেন তিনি। আমাদের সময় (১৯৯৬-২০০২) যারা ক্যাম্পাস ছিলেন তারা সবাই মনির ভাইকে চিনতেন। মনির ভাই ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি সাজ্জাদ ভাই কবি জসীম উদ্দীন হলে পাশাপাশি ৪২১ ও ৪২২ নম্বর রুমে থাকতেন, পাশে ৪১৬ নম্বর রুমে থাকতাম আমি। একজন পরিচ্ছন্ন ছাত্রনেতা হিসাবে মনির ভাইকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও অনেক সম্মান করতো।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর পিন্টু বাহিনী যখন ক্যাম্পাসে অস্ত্র ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে, তখন যে কয়জন এর লাগাম টেনে ধরেন, সাহাবুদ্দিন লান্টু ভাই, মনির ভাই ও এবি এম মোশারফ ভাই এদের অন্যতম। সবার ধারণা ছিল মনির ভাই ছাত্রদলের কোনো শীর্ষ পদে অবশ্যই আসবেন। তাকে বাদ দিয়ে তখন ছাত্রদলের রাজনীতি কল্পনাও করা যেতো না। না, তিনি কোনো কোনো পদই পাননি। একেবারেই তাকে দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। কারণ তিনি হাওয়া ভবনের লোক ছিলেন না, খাঁটি রাজনীতিবিদ ছিলেন। তার রাজনীতি করার অধিকারটুকু পর্যন্ত কেড়ে নেয়া হয়েছিল।
সেই থেকে ওনার জীবনের অধঃপতন শুরু। রাজনীতি ছাড়া জীবনে কিছুই করেননি। গত ২০ বছর অনেক কষ্ট করেছেন, কিন্তু বিএনপি ছেড়ে যাননি। চিকিৎসার জন্য তার সতীর্থরা চাঁদা তুলে সহায়তা করেছেন। অনেক অবজ্ঞা, অভিমান ও কষ্ট নিয়ে পৃথিবী ছেড়েই চলে গেলেন তিনি। সর্বশেষ আমার সঙ্গে দেখা হয়েছিল আমাদের এক শিক্ষকের জানাজায়। যখন এই লেখাগুলো লিখছিলাম তখন কেন জানি চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছিল। ওপারে ভালো থাকবেন আমাদের সবার প্রিয় মনির ভাই। ফেসবুক থেকে