শিরোনাম
◈ টাকা ফেরাতে আইন, প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক সমন্বয়ে জোর দিচ্ছে সরকার ◈ দুর্বৃত্তের হামলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে ঢাবি শিক্ষার্থী নিহত ◈ যেসব এলাকায় বুধবার বিদ্যুৎ থাকবে না জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি ◈ ব্যাটারি চালিত রিকশা বন্ধে কড়া বার্তা: তিন রিকশা ভাঙচুর, চালকদের ক্ষতিপূরণ ও বিকল্প আয়ের আশ্বাস ◈ যে কারণে বাংলাদেশে বিমানবন্দরে আটকানো হয়েছিলো কলকাতার অভিনেতা শাশ্বতকে! (ভিডিও) ◈ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টি পুরোপুরি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার : প্রেস সচিব ◈ আ. লীগের নিবন্ধন বাতিলের পর সম্পদ বাজেয়াপ্তের দাবি উঠেছে, নেতারা এখন কি করবে?  ◈ প‌রি‌স্থি‌তি স্বাভা‌বিক, পাকিস্তান-বাংলাদেশ সিরিজের নতুন সূচি প্রকাশ ◈ ভারত আবার বাড়াবা‌ড়ি কর‌লে আমরা চুপ থাকবো না: শহীদ আফ্রিদি ◈ ভারত শাসিত কাশ্মীরে আবারও বন্দুকযুদ্ধ, নিহত ৩

প্রকাশিত : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ০১:৪৫ রাত
আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ০১:৪৫ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

  মাতৃভাষা কী?

গরীব নেওয়াজ: মাতৃভাষা কাকে বলে? এ প্রশ্নের উত্তরে প্রায় সবাই নির্দ্বিধায় বলবেন, মায়ের ভাষাই মাতৃভাষা, মায়ের মুখের ভাষা শুনে মানুষ যে ভাষা বলতে শিখে তাই মাতৃভাষা। মা ও মাতৃভাষার নিবিড় সম্পর্ককে স্বীকার করলেও গর্ভধারিণী মায়ের ভাষাই যে মাতৃভাষা, তা সর্বতো সত্য নয়। নেওয়ার পর তার স্ত্রী এক পুত্রসন্তান জন্ম দিয়ে মৃত্যুবরণ করে। এরপর সৈনিকও মারা গেলে সন্তানটি আপত্য স্নেহে ব্রাহ্মণের ঘরে লালিত হতে থাকে। তার নাম রাখা হয়, গোরা। সে তার মাতৃ-পিতৃ পরিচয় জানতো না। যদিও গোরার মায়ের ভাষা ছিলো আইরিশ, কিন্তু গোরা আইরিশ ভাষার এক বর্ণও জানতে পারেনি। বাংলা ভাষাই হয়ে ওঠে তার নিজের ভাষা। তার চিন্তা-ভাবনা ও তা প্রকাশের ভাষা হয়ে ওঠে বাংলা। 
শিশুরা কোনো নির্দিষ্ট ভাষা শিক্ষার প্রতি আকৃষ্ট হয় না। বরং যে ভাষা তাদের আশেপাশে বলা হয়, সেই ভাষাই তারা শিখে ফেলে, এমনকি যদি তাদের পিতা-মাতা অন্য কোনো ভাষাতে কথা বলে, তাহলেও। এর বাস্তব প্রমাণ পাবেন ইংল্যান্ড, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও অন্য অনেক দেশে। সেসব দেশে গিয়ে আত্মীয়-স্বজনের ঘরেই দেখেছি, মা-বাবা দুজনেই বাংলায় কথা বলছে, কিন্তু ছেলেমেয়েরা যেহেতু ইংরেজি ভাষার সমাজ-জীবনের মধ্যে বেড়ে উঠেছে, সেহেতু ইংরেজিই হয়ে উঠেছে তাদের চিন্তা-চেতনার বাহন, ইংরেজিতেই তারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। 
আক্ষরিক অর্থে সত্য না হলেও মর্মার্থের দিক দিয়ে একথা সত্য যে, মানুষ জন্ম থেকেই মানুষ নয়। তাকে মানুষ হয়ে উঠতে হয়। বিশ^াস-সংস্কার, মূল্যবোধ-যুক্তিবিচার, আচার-আচরণ, সৃজন-মনন ইত্যাদি যা কিছু মানুষের মনুষ্যত্বকে ধারণ করে, তার কোনো কিছু নিয়েই মানুষ জন্মায় না, এগুলোর সবকিছুই জন্মের পর মানুষকে অর্জন করে নিতে হয়। মনুষ্যত্ব অর্জন করার জন্য তাকে নতুন করে জন্ম নিতে হয়, এই নতুন জন্মের জন্য অন্যতর এক মায়ের গর্ভকে আশ্রয় করতে হয়। সেই মা-ই হচ্ছে, ভাষা। 
মানুষের যা কিছু পশু থেকে স্বতন্ত্র, তার প্রথমটি হচ্ছে তার চিন্তাশক্তি। মানুষ চিন্তা করতে পারে, চিন্তা দিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করতে পারে, যা পশু পারে না, বা খুবই সীমিত। এই চিন্তার বাহন হচ্ছে ভাষা। চিন্তাকে আমরা ধারণ করি ভাষা দিয়েই। কিন্তু চিন্তা আর ভাষা, এই দুটোর কোনোটি নিয়েই মানুষ জন্মায় না। জন্মের মুহূর্তে পশুর সন্তানের মতো মানুষের সন্তানও থাকে চিন্তাহীন ভাষাহীন। তবে মানুষের সন্তানের মানুষ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা সুপ্ত অবস্থায় থাকে। সমাজের ভেতরেই সে সম্ভাবনা বিকশিত হয়। 
সমাজহীন জীবনে বিরল দ্বীপে বা জঙ্গলে বাস করলে তা বিকশিত হয় না। যে সমাজে সে বড় হয় সেই সমাজের ভাষাকে তাকে আশ্রয় করতে হয়। সেই ভাষাই তাকে মায়ের মতো গর্ভে ধারণ করে মানুষরূপে তাকে নতুন করে জন্ম দেয়। এ কারণেই সেই  ভাষা  হয়ে যায় তার মা, এর নাম তাই মাতৃভাষা। এই মাতৃভাষা, মায়ের ভাষা নয়। এই ভাষা নিজেই মা, ‘মাতৃভাষা’ শব্দটির ব্যসবাক্য হলো,‘মাতৃস্বরূপিনী ভাষা’। মানুষ সারা জীবন যে ভাষা দিয়ে চিন্তা করে ও চিন্তাকে প্রকাশ করে সেটি আর কোনো ভাষাই নয়, সেটি  একান্তই তার মাতৃভাষা। সেটা মায়ের ভাষা হতেও পারে, নাও পারে। একমাত্র মাতৃভাষাই মানুষের সারা সত্তায়, তার চিন্তা-চেতনায় মিশ্রিত হয়ে থাকে সারাজীবন ধরে। 
এই ভাষা মাতার গুরুত্ব গর্ভধারিণী মাতার চেয়ে কোনো অংশে কম তো নয়ই, এক অর্থে বরং বেশিই বটে। গর্ভধারিণী মাতা আমাদের জন্ম দেন ‘মানুষ হওয়ার সম্ভাবনাপূর্ণ একটি প্রাণী’ রূপে, আর সেরকম প্রাণী হয়ে জন্মানোর পর নতুন করে আবার আর এক মায়ের অর্থাৎ মাতৃভাষার গর্ভে পুষ্ট হয়েই আমরা পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে উঠি। আর তার কোলেই আমাদের সারাজীবন সারাক্ষণ অবস্থান করতে হয়। মাতৃভাষাই তাকে সারাজীবন প্রকৃত মায়ের মমতা দিয়ে আগলে রাখে, তার চিন্তাকে ধারণ করে, প্রকাশ করে। স্বতঃস্ফূর্ত চিন্তা একমাত্র মাতৃভাষাতেই করা সম্ভব। চিন্তাশক্তির অধিকারী হয়েছে বলেই তো মানুষজাতি সকল প্রাণীর ওপরে শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে তার রাজ্যপট বিস্তার করেছে। 
তাই বলা যায়, মাতৃভাষা ছাড়া মানুষের মনুষ্যত্বের বিকাশই সম্ভব নয়। পেশাগত, ধর্মগত, মতাদর্শগত কোনো পরিচয়ই মানুষের মৌলিক পরিচয় নয়, কোনোটিই  অপরিবর্তনীয় নয়। অনেক সময়ই মানুষ তা পরিবর্তন করে থাকে। কিন্তু মাতৃভাষা পুরোপুরি পরিত্যাগ করে অন্য কোনো ভাষা মানুষের পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব নয়। Onindita Chowdhury  সুন্দর একটা কথা বলেছেন, ‘মানুষ স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেললে সবকিছু ভুলে যায়, এমনকি আত্মীয়-স্বজনসহ সবাইকে। কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো মাতৃভাষা কেউ ভুলে না।’ 
মাতৃভাষা পরিচয়ের কাছে ধর্মের পরিচয় একান্তই গৌণ। কোনো ভাষারই কোনো ধর্মীয় চরিত্র নেই, যেকোনো ভাষার মানুষই যেকোনো ধর্মের অনুসারী হতে পারে। একইভাবে ভাষার কোনো শ্রেণীচরিত্রও নেই। শ্রেণীভাষা বলে কোনো ভাষা থাকতে পারে না। ধনী-গরিব, শোষক-শোষিতের ভাষা একই। মাতৃভাষা পরিচয়টাই কেবল কোনো জনগোষ্ঠীকে শ্রেণীর ঊর্ধ্বে স্থাপন করে। তবে অনেকসময় প্রতাপশালী গোষ্ঠী দুর্বল গোষ্ঠীর মাতৃভাষাকে দাবিয়ে রাখতে চায়, এমনকি ধ্বংস করে দিতে চায়। তখন সংঘাতের সৃষ্টি হতে পারে। মাতৃভাষা সম্পর্কে খুবই সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন, যতীন সরকার তাঁর ‘মাতৃভাষা ও মানুষের মৌলিক পরিচয়’ প্রবন্ধে। ফেসবুক থেকে 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়