শিরোনাম
◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ ভিত্তিহীন মামলায় বিরোধী নেতাকর্মীদের নাজেহাল করা হচ্ছে: মির্জা ফখরুল ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অপরাধের কারণেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের  বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী  ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি  ◈ ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক ◈ বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বাস ঢু‌কে প্রকৌশলী নিহত ◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন

প্রকাশিত : ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ০১:১১ রাত
আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ০১:১১ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাঙালি কি আসলেই ‘মিডিওকার’ জাতি!

কাজী এম মোরশেদ

কাজী এম মোরশেদ: নিউজে শুনলাম, বাংলা একাডেমি সিদ্ধান্ত জানাইছে আদর্শকে স্টল দেওয়া হবে না। আদর্শ অবশ্য অনুরোধ করছিলো তারা বইটা বা বইগুলা ছাড়া স্টল চায়, তাতেও কাজ হয় নাই। বাংলাদেশে একটা কথা আছে, ‘উপরের নির্দেশ’। ছোটবেলায় ভাবতাম সাত আসমান থেকে আসে, এখন বুঝি এর অর্থ আলাদা। এইটা এমন এক জায়গা যার নাম বললে চাকরী থাকবে না। 

আবার বই প্রকাশনী ও ব্যবসায়ী সমিতির চিঠি দেখলাম, কলকাতা বই মেলায় এই বই নেওয়া যাবে না। পুস্তক ও ব্যবসায়ী সমিতি বা বাংলা একাডেমি কি কলকাতা বইমেলার কমিটির সদস্য? তারা কোন এখতিয়ারে চিঠি দেয় তা বোধগম্য হলো না। কলকাতার বইমেলায় দেশীয় প্রকাশক ও ব্যবসায়ী সমিতির কোনো এখতিয়ার নাই। কেন নাই না বললেও বুঝে নেন, বাংলাদেশে যতো নিষিদ্ধ বই আছে ভারতে পাওয়া যায়, সেটা কিনে পড়লে কেউ ঠেকানোর আছে? অথবা ভিক্টোরিয়ান আমলে যেসব বই গ্রেটব্রিটেন নিষিদ্ধ করে, সব ছাপা হতো ভারতবর্ষে, সেগুলো ফ্রান্স পর্যন্ত পৌঁছাতো, ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতো না। ইংলিশরা বাইরে আসলে লেডি চ্যাটার্লিস লাভার বা ললিটা সবই পড়েছে। ফাহামের বই মাঝ থেকে কিছু পড়েছি। তার ফেসবুক পোস্টও পড়েছি। আমার কাছে লেখা যেকোনো শক্ত ভিতের উপর মনে হয় নাই। এটা ইন জেনারেল লেখা। তবে একটা জায়গায় আমিও মানি, বাঙালি আসলেই মিডিওকার জাতি। উনি কেনো মিডিওকার বলছেন তার জন্য বইটা দরকার ছিলো। পেলাম না। কেউ একজন ফ্রি দিচ্ছিলেন, লাইন দিয়েছিলাম, হয়তো লটারীতে সু্যােগ পাই নাই। 
অন্য কথা বলার আগে বলি, বিচারপতি সায়েমের বই জিয়া সরকার নিষিদ্ধ করে, মতিউর রহমান রেন্টুর বই আওয়ামী সরকার নিষিদ্ধ করে, হুমায়ুন আজাদের বই, তসলিমা নাসরিনের বই বিভিন্ন সময় নিষিদ্ধ হয়। এর মানে কি বই মানুষ পড়ে নাই? যাঁদের পড়ার ইচ্ছা ছিলো না ঠিকই পড়েছে। একটা বই নিষিদ্ধ করলে সেটা ফটোকপি হবে বা স্ক্যান করে অনলাইনে থাকবে। পিনাকী ভট্টাচার্যের বই নিষিদ্ধ করে নাই, বিক্রির রাস্তা বন্ধ করেও থামাতে পারে নাই। ই-বুক আকারে পাওয়া যায়। আমি ঢাকার এক দোকানে স্যাটানিক ভার্সেসও দেখেছি। 

যা বলতে চাচ্ছি, বই নিষিদ্ধ করে কোনো লাভ হয় না। এটা অনেকটা টেকনোলজির মতো, থামানোর চেষ্টা করে লাভ নাই। কোনো না কোনোভাবে আসবেই। ফাহাম যা যা বলছেন, না পড়েও বলতে পারি বিশেষ করে কিছু রিভিউ দেখে, অনেক কিছুর সাথে আমার ধারণার মিল থাকবে, অনেক কিছুর সাথে থাকবে না। সেটা কোনো বড় বিষয় না। আমার ব্যক্তিগত ধারণা কি যদি বলতে বলেন, আমি মনে করি বাঙালি একটা মিডিওকার জাতি। সেটা লোভ থেকে, গর্ব থেকে, মিথ্যা থেকে, ব্যবসা থেকে, তোষামোদি থেকে, সবদিক দিয়ে এটা মিডিওকার জাতি। তার মূল কারণ যেই দেশের মানুষ ১. মেরিটোক্রিসির সম্মান করে না। ২. আইন মানা নিজের কর্তব্য মনে করে না। ৩. শিক্ষার উপর কোন জোর দেয় না। ৪. পয়সা ও ক্ষমতার দিয়ে ভেদাভেদ তৈরি করে। ৫. সামাজিক ও ন্যায় বিচারিক সমতা থাকে না। এমন আরো অনেক কিছু বলতে পারবো, সেই জাতি মিডিওকার হতে বাধ্য। চাইলে উদাহরন দিতে পারি। খুব ভালো দেখাবে না বলে বললাম না। 

ইতিহাস থেকে টানি। বঙ্গ নামীয় এই ভূখণ্ডের মানুষকে ম্লেচ্ছ বলা হতো, যার অর্থ বর্বর। খৃস্টপূর্ব ছয়শত বিসিতে বৌদ্ধ ধর্মের প্রচলন হয়, তার আগে আমরা সনাতন ধর্মী ম্লেচ্ছ ছিলাম। তিনশত বিসিতে অশোকা যখন ভারতবর্ষ দখল করে, তখন পাটালিপুত্র বা পাটনা পর্যন্ত এসে চলে যায়, কারণ বাঙালি বর্বর জাতি। যীশুখ্রীস্টের যেই স্ক্রিপচার ছিলো, তার উপর কলকাতা ১৯২০ সালে সিরিজ প্রকাশ হয়, সেখানে বলা ছিলো ৮০০ খৃস্টাব্দের রেফারেন্স সহ, যীশু কাশ্মীরের এক পাহাড়ে বিশ্রাম নেবার সময় স্বয়ং রাজার সাথে দেখা হয়, তিনি জিজ্ঞাস করেন কোথায় যাবে। তার উত্তরে বলে ম্লেচ্ছদের রাজ্যে যেখানে তাদের ধর্মচেতনায় ফেরানো যায়। যীশু প্রায় সুন্দরবন পর্যন্ত আসেন, এরপর নেপালে চলে যান। তখনো ধর্মে বৌদ্ধ হলেও জনপদ বর্বর ছিলো। সেই বর্বরতার অন্ত ঘটে মুসলিম সুফীদের সময় এখন ধীরে ধীরে ইসলাম প্রচারের মাধ্যমে। এই বঙ্গে আজ থেকে বিদেশিরা আসছে না, আরব, পর্তুগীজ, ফরাসি, আফগান, ওলন্দাজ, একের পর এক এসেছে। মুঘলদের স্বর্ণযুগের পর ইংরেজরা এসে লুটপাট করেছে। ইংরেজরা ডিভাইড এ্যন্ড রুল চালুর আগ পর্যন্ত বঙ্গকে নিরাপদ জনপদ ধরা হতো। কিন্তু যতদিন গেছে বঙ্গ সেই বর্বরতার যায়নি, এক অংশ পদলেহনে ব্যস্ত হয়ে জমিদার হয়েছে, অন্য অংশ প্রজা হয়ে কষ্ট করা শিখেছে। ১৭৮০ সালে আলিয়া মাদ্রাসা আর ১৮৫৬ সালে কওমী মাদ্রাসা না চালু হলে মুসলমানদের একতা ঐতিহ্য থাকতো না। ১৯০৬ সালে অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ গঠন একটা বড় মোড়, ১৯১১ তে বঙ্গভঙ্গ রদ তেমনি একটা বিনাশ। কিন্তু খিলজী, সুলতানী বা মুগল সম্রাজ্যের সময়কার অসমসাহসী দেশপ্রেম ফিরে আসেনি। আমাদের মিডিওকার হওয়ার শুরু ১৭৫৭ সাল থেকে। 

সংক্ষেপে ইতিহাস বললাম। এর সাথে যুক্ত করি, জমিদার রবিঠাকুর যে জাতীয়সংগীতের রচয়িতা তা ১৯০৭ সালে লেখা, মূলত বঙ্গভঙ্গ করে ঢাকাকে রাজধানী করার বিরোধিতা করতে শতশত দেশাত্মবোধক গানের একটা। ভারতের জাতীয়সংগীত জনগনমন অধিনায়ক জয় হে রাজা পঞ্চম জর্জের স্তুতি করে ১৯১১ সালে লেখা। এর মাঝে পূর্ব এবং পশ্চিমবঙ্গের কিছু ব্যাক্তিত্ব তা ক্ষুদিরাম বা তিতুমীর বা সুভাষ বোস ছাড়া তেন জন্মায় নাই। আমরা স্তুতি করে আসছি আমাদের পূর্বপুরুষের সময় থেকে। এই জাতি মিডিওকার হবে না তো কে হবে? বিজ্ঞানে আমাদের অবদান হাতে গোনেন, জগদীশ চন্দ্র, সত্যেন বোস, আব্দুল আজিজ এমন ছাড়া কতো নাম পাবেন? সমগ্র বাঙালি, সেটা পূর্ববঙ্গ এবং পশ্চিমবঙ্গ, এমনকি ব্রিটিশদের করা বিহার, উড়িশ্যা ও আসাম পর্যন্ত আমি কখনোই মিডিওকারের বেশি দেখি না। আপনি আমি এর মধ্যে আছি। ফাহাম যদি তার লেখায় উদাহরণসহ আসে, সেটা তার চিন্তার অধিকার। পড়তে চাইলে পড়বেন, না হলে ফেলে দেবেন। আমাদের আরেকজনকে পড়তে না বলাও প্রমাণ করে আমরা মিডিওকার। 

সংবিধানে মৌলিক অধিকারে চিন্তার স্বাধীনতা, বিবেকের স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা এইসব মিলায় বলতে পারি, যেই জিনিস অসততা করেও অবুঝ্র মতো একজন মিডিওকার বাঙ্গালী চিন্তার অধিকারী হয়ে ঠেকাতে পারবেন না, খামোখা চেস্টা করেন কেনো? ফেসবুক থেকে 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়