শিরোনাম
◈ চুয়াডাঙ্গার পরিস্থিতি এখন মরুভূমির মতো, তাপমাত্রা ৪১ দশমিক  ৫ ডিগ্রি ◈ ফরিদপুরে পঞ্চপল্লীতে গণপিটুনিতে ২ ভাই নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১ ◈ মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ ভারতে লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় ভোট পড়েছে ৫৯.৭ শতাংশ  ◈ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ ভিত্তিহীন মামলায় বিরোধী নেতাকর্মীদের নাজেহাল করা হচ্ছে: মির্জা ফখরুল ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী

প্রকাশিত : ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ০২:৫৬ রাত
আপডেট : ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ০২:৫৬ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কেমন ছিলো মেলার প্রথম দিনের পরিবেশ-পরিস্থিতি?

রেজা ঘটক

রেজা ঘটক: শুরু হলো আমাদের প্রাণের মেলা অমর একুশে বইমেলা ২০২৩। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা অমর একুশে বইমেলার শুভ উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী বইমেলা প্রাঙ্গন ছেড়ে যাবার পর ধীরে ধীরে বইমেলায় পাঠক ও দর্শনার্থীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। সত্যি কথা বলতে কী বইমেলায় ঘুরে ঘুরে বই দেখার মতো কোনো পরিস্থিতি ছিল না। কারণ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বইমেলা অংশে স্তূপাকার ময়লা আবর্জনার পাহাড় ডিঙ্গিয়ে স্টল পর্যন্ত যাওয়ার সুযোগ খুব একটা ছিল না। 
বইমেলা শুরু হয়ে গেছে, অথচ মেলার মাঠে ময়লা-আবর্জনার বিশাল বিশাল স্তূপ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না করায় প্রথম দিনটি ছিল আদতে আবজর্নার মেলা। বইমেলায় আগত প্রায় সবাই এই ময়লা আবর্জনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে ময়লা আবর্জনা নিয়ে বাংলা একাডেমি এবং প্রকাশকরা পাল্টা পাল্টি দোষারপ করেই প্রথম দিন শেষ করেছেন। 
বাংলা একাডেমি বলছে, ময়লা আবর্জনা প্রকাশকদেরই পর্কিার করতে হবে। আর প্রকাশকরা বলছেন, সময় কম হওয়ায় তাদের স্টল নির্মাণের কাজ অনেকেরই এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। তাছাড়া স্টল নির্মাণ শেষ হলে মেলার মাঠের ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করার দায়িত্ব নাকি বাংলা একাডেমির। পরম্পরা দোষারোপ করা জাতি আমরা। ময়লা আবর্জনা আমাদের অত্যাধিক প্রিয়। পরিচ্ছন্নতা আমাদের ধাতুতে নেই। নেই মানে একদমই নেই। 
শুধু অমর একুশে বইমেলা নয়, দেশের প্রতিটি অনুষ্ঠান ও উৎসবে দেখবেন, অনুষ্ঠান বা উৎসব শেষে আমরা নিজেরাই সেই জায়গাটি কত নোংরা করে রেখে আসি। এবারের বিশ্বকাপ ফুটবলে জাপানের দর্শকরা খেলা শেষে গ্যালারি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার যে নিদর্শন দেখিয়েছিল, সেটি বাংলাদেশের ২০ কোটি জনগণই দেখেছে। কিন্তু তা থেকে আমরা আদতে কোনো শিক্ষা নিইনি। কারণ আমরা একটা নোংরা জাতি। আমরা মানুষের মুখের সামনেই থুতু ফেলে অভ্যস্ত।
আশা করবো অমর একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণে কাক্সিক্ষত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা চোখে পড়বে। যদি অমর একুশে বইমেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি কিংবা প্রকাশকরা মেলা প্রাঙ্গন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না করে, তাহলে কোনো স্কুল বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে বইমেলা প্রাঙ্গন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার দায়িত্ব নিতে পারে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরাই কেবল পারবে এই জাতিকে কিছু করে দেখাতে। একবার তারা ঢাকার রাস্তার ট্রাফিক ব্যবস্থা কয়েকদিন ঠিক করে দেখিয়েছিল আদতে কেমন হওয়া উচিত ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব। 
প্রয়োজনে আমি নিজেও তাদের সাথে বইমেলার মাঠ পরিচ্ছন্ন করার দায়িত্ব পালন করবো। তবুও আমি চাই অমর একুশে বইমেলা প্রাঙ্গন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হোক। এবার আসি লিটলম্যাগ প্রাঙ্গনে। লিটলম্যাগ প্রাঙ্গনে এখন পর্যন্ত কোনো ছোট কাগজের লোগো সম্বলিত ব্যানার লাগেনি। লিটলম্যাগ কর্নারে ব্যানার লাগানোর ব্যাপারেও দুই পক্ষের বক্তব্য অস্পষ্ট। লিটলম্যাগ তুর্কি সেনারা বলছেন, ব্যানার লাগিয়ে দেবার কথা বাংলা একাডেমির। 
আর তাদেরই আরেক গ্রুপ দাবি করেছেন, ব্যানারের জন্য বাংলা একাডেমিতে আলাদাভাবে নাকি টাকা জমা দেবার কথা। যা অনেক ছোট কাগজ সম্পাদক পর্যন্ত জানেন না। লিটলম্যাগ চত্বরে ব্যানার যেমন লাগেনি, তেমনি সেখানে কোনো ছোট কাগজের সম্পাদকও কাগজ নিয়ে পসরা বিছিয়ে বসেননি। আমার পর্যবেক্ষণ হলো, প্রতি বছরই লিটলম্যাগ কর্নারকে বাংলা একাডেমি একটু তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেই অভ্যস্ত। এবারও তার ব্যতিক্রম চোখে পড়েনি। 
পরে আমরা কয়েক বন্ধু মিলে আহমেদ শিপলুর সম্পাদনায় ছোট কাগজ ‘মগ্নপাঠ’-এর স্টলে ব্যানার লাগিয়ে লিটলম্যাগ চত্বরকে আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করি। পুরো বইমেলা ঘুরে দেখার সুযোগ হয়নি। কিন্তু বিখ্যাত সব প্রকাশকদের বইমেলা মাঠে অনেকটা গুচ্ছ গ্রামের মতো কাছাকাছি অবস্থান হওয়ার মধ্যে হয়তো অলৌকিক স্টিমারের মতো কোনো পাললৌকিক সুসম্পর্কের ব্যাপার-স্যাপার লুকিয়ে আছে। প্রতিদিন বইমেলার মাঠে যতো ধরনের গল্প ও কাহিনি কিংবা সাক্ষাৎ চিত্রনাট্য চোখে পড়বে, তা সোজা কথায় বলতে গেলে অনেকেরই আতে ঘা লাগতে পারে। তাই সেই ফিকশন না হয় নাইবা লিখলাম। 
আমরা চাই সকলের অংশগ্রহণে একটি সুন্দর নান্দনিক পরিচ্ছন্ন অমর একুশে বইমেলা হোক। বইমেলায় গিয়ে আমি আদতে আত্মশুদ্ধির উৎস খুঁজে বেড়াই। নানান কিসিমের ক্যারেক্টার পর্যবেক্ষণ করার অবাধ সুযোগ পাই। প্রতিটি ঘটনার আড়ালে সুন্দর সুন্দর গল্প লুকিয়ে থাকে। সেসব গল্প নিয়ে আমি ভাবনার নতুন নতুন খোরাক পাই। ভবিষ্যতে আমি সময় পেলে কখনো হয়তো ‘বইমেলায় লুকিয়ে থাকা গল্প’ নামে একটি গল্পের সংকলন লিখবো।
বইমেলায় যেসব রথি-মহারথির সাথে আমার মোলাকাত হয়েছে তারা হলো- চারুশিল্পী ও নির্মাতা প্রশান্ত অধিকারী, চারুশিল্পী চারু পিন্টু, কবি শাফি সমুদ্র, শিল্পী ফাতেমা আক্তার সুহী, কবি ও প্রকাশক নীল সাধু, কবি শিমুল আহমেদ, কবি ও প্রকাশক শ্রাবণী মজুমদার, প্রকাশক রুম্মান তার্শফিক, কবি ও প্রকাশক শতাব্দী ভব, অভিনেত্রী ও প্রকাশক মেহরান সানজানা, লেখক, গবেষক ও আলোকচিত্রী সাহাদাত পারভেজ, কবি ও প্রকাশক রবীন আহসান, প্রকাশক শহিদুল ইসলাম বিজু, প্রকাশক আলমগীর শিকদার লোটন, ফটোগ্রাফার জাফরীন রহমান, প্রকাশক মাধব চন্দ্র দাশ, কবি মোশতাক মুকুল, কবি আহমেদ শিপলু, কবি ইসমত শিল্পী, কবি গোলাম মোর্শেদ চন্দন প্রমুখ।  
এছাড়া অনেক নতুন বন্ধুদের সাথে আজ বইমেলায় প্রথম পরিচয় হয়েছে। পাঠক সমাবেশের প্রকাশক শহিদুল ইসলাম বিজু ভাই আমাদের চা দিয়ে আপ্পায়ন করেছেন। বন্ধুরা বইমেলায় আসুন, পছন্দের বই কিনুন। প্রিয়জনকে পছন্দের বই উপহার দিন। আসুন অমর একুশের চেতনায় আমাদের প্রাণের মেলাকে আমরা রাঙিয়ে রাখি। সবাইকে মহান একুশের শুভেচ্ছা।
 লেখক: কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। ফেসবুক থেকে 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়