অধ্যাপক ডা. মো. তাজুল ইসলাম: আবুল মনসুর আহমেদ তার ‘আত্মকথা’ বইয়ে উল্লেখ করেন শৈশবে ওনার দুটি রোগ ছিল এবং সে দুটোই ‘মানসিক রোগ’। [১] ঘুমের ঘোরে হাঁটা (স্লিপ ওয়াকিং) : ওনার নিজের লেখায়, ‘মা-বাবার সঙ্গে রাতে ঘুমাতাম। কেমন করিয়া জানি আমি তাদের পাশ হইতে ঘুমের ঘোরে উঠিয়া যাইতাম। সাধারণত বাড়ির আশেপাশেই আমাকে পাওয়া যেতো। তবে দুই বার দূরে মাঠে পাওয়া গিয়েছিল। তালাশকারীরা দেখিয়াছেন আমি জাগ্রত লোকের মতোই সাবধানে পথ চলিতেছি। আঁকাবাকা, উঁচু নীচু পথ কোথাও আমি হোটচ খাইতেছি না। আমাকে ধরে কোলে তুলে নেওয়ার পরই আমার ঘুম ভেঙে যেতো-তখন আমি কান্না কাটি করতাম। সবাই ভাবতো, আমাকে জীনের আছরে ধরেছে’। এখন আমরা জানি এটা একধরনের মানসিক রোগ, নাম ‘স্লিপ ওয়াকিং’।
আরেকদিনের বর্ণনা : ‘আমাদের বাড়িতে প্রচুর মেহমান এসেছে। আমি ঘুমাচ্ছি লাম। হঠাৎ দেখা গেলো আমি বাড়ির উঠানের কোনের নারিকেল গাছের অনেক খানি উচায় উঠিয়া দুই হাতে গাছটি জড়ায়ে ধরে আছি। সবাই বুঝিলেন হইচই করলে আমার ঘুম ভেঙে যাবে ও তখন মাটিতে পড়ে যাবো। তারা একজন দক্ষ গাছ-বাওয়া লোক গাছে উঠালেন ও আমাকে ঘুমন্ত অবস্থায় কোলে তুলে নিলেন। তখন আমি কান্না জুড়ে দিলাম’।
[২] ঘুমে চিতকার (স্লিপ টেরর) : ওনার বর্ণনা : ‘আমি ঘুম হইতে চিৎকার করিয়া উঠিতাম। এই চিৎকার অনেকক্ষণ পর্যন্ত চলতো। শীতের মধ্যেও ঘামে সারা গা ও কাপড়চোপড় ভিজিয়া যাইতো। স্বপ্নে আমি ভয়াবহ কিছু দেখিয়া ভয়ে কাদিয়া উঠিতাম। কিন্তু সেটা কি গুছিয়ে বলতে পারতাম না’। এটিও একটি মানসিক রোগ। লেখক: মনোবিদ