রুমি আহমেদ: আগে রেজাল্টের পরদিন পত্রিকার প্রথম পাতায় ছেলেমেয়েদের হাস্যজ্বল মুখের ছবি দেখতাম, এখন দেখি ফেসবুকের পাতায়। আমাদের সময় এসএসসি আর এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্টে স্টার আর স্ট্যান্ড বলে দুটা কথা ছিলো, স্ট্যান্ড করা সর্বোচ্চ সম্মান- তার পর হচ্ছে স্টার পাওয়া। এতদিন পরে এসে আর মনে নাই কে স্টার পেয়েছিল আর স্ট্যান্ড করা কে কে ছিল আমার মেডিকেল ক্লাসে। আগে মাত্র দু’চার জনের কৃতিত্ব সেলিব্রেটেড হতো বোর্ড স্ট্যান্ডের কল্যাণে, এখন জিপিএ ফাইভ-এর কল্যাণে শুধু দু’চার জন না, হাজার হাজার ছেলেমেয়ে স্ট্যান্ড করছে সগৌরবে সবার সামনে- এটাই অনেক ভালো। আমাদের পরীক্ষার সিস্টেমের কখনোই লক্ষ লক্ষ শিশুর মাঝথেকে একজনকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে পিনপয়েন্ট করার সেনসিটিভিটি ছিলো না, এখনও নেই। বোর্ড স্ট্যান্ড ব্যাপারটা লটারির মতো ছিল, কিছুটা ফ্লুক পর্যায়ের।
এখন জিপিএ ফাইভ পাওয়ার সুবাদে আমাদের শিশুদের একটা বড় অংশ নিজেদের ব্যাপারে কনফিডেন্ট হয়ে গেলো এবং বিশ্বাস করতে শিখলো যে ওরা অনেক দূর যেতে পারবে, অনেক কিছু করতে পারবে- তাদের স্বপ্নের সীমাটা আকাশ ছাড়িয়ে গেলো। যারা জিপিএ ফাইভ পেয়েছে তাদের শুভেচ্ছা, যারা পাওনি তাদের আরো বেশি করে শুভেচ্ছা। যারা গোল্ডেন জিপিএ ৫ পায়নি তাদের বলছি, এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্টের পর প্রায় চল্লিশ বছর পর এটা বলতে পারি- আমাদের স্কুল পরবর্তী কলেজ জীবনের সাফল্যের নির্ণায়ক বিষয়গুলোর মধ্যে এসএসসি বা এইচএসসিতে স্টার, স্ট্যান্ডের ভূমিকা খুবই গৌণ ছিল এবং সত্যিকারে কর্মজীবনের ক্ষেত্রে একদম হলফ করেই বলতে পারি- এসএসসি বা এইচএসসি সাইট স্টার, স্ট্যান্ডের কোনো ভূমিকাই নেই। আমার মনে হয় কর্মজীবনে যাকে আমরা সাফল্য বলি, তার পিছনে মূল চালিকাশক্তি পারসিসটেন্স, ফোকাস, কমিউনিকেশন স্কিল, এম্বিশন আর ইনফর্মেশন। এসএসসি রেজাল্টে যারা সোনালী জিপিএ ফাইভ পাওনি তাদের বলছি- জীবনের সত্যিকারের পরীক্ষাগুলোতে সোনালী জিপিএ ফাইভের কোনো মূল্যই হয়তো থাকবে না। যেই গোল্ডেন কম্বিনেশনটার দরকার তাহলো- পারসিসটেন্স, ফোকাস, কমিউনিকেশন স্কিল, এম্বিশন আর ইনফর্মেশন এর কম্বিনেশন। জীবনের বিশাল ক্যানভ্যাসে একটা পরীক্ষার রেজাল্ট ক্ষুদ্র একটা ডটের মতো, একটা মাত্র পিক্সেল- এরকম লক্ষ্য কোটি মেগা পিক্সেল দিয়ে ফুটে উঠবে জীবন ক্যানভাসের ছবিটা। একটা পরীক্ষার রেজাল্টের একটা পিক্সেল না, ট্রিলিয়ন পিক্সেলের পুরো জীবনটাই সুন্দর হোক। লেখক: জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ