শিরোনাম
◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ চলচ্চিত্র ও টিভি খাতে ভারতের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করলেই ব্যবস্থা: ইসি আলমগীর  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো

প্রকাশিত : ২৫ নভেম্বর, ২০২২, ০৩:২০ রাত
আপডেট : ২৫ নভেম্বর, ২০২২, ০৩:২০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নেত্রী চাইলে, দলের প্রয়োজনে যেকোনো মুহূর্তেই দেশে ফিরতে প্রস্তুত

ডা. আবুল হাসনাৎ মিল্টন

ডা. আবুল হাসনাৎ মিল্টন: দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের দুঃসময়ের নির্যাতিত কর্মী, সাবেক কর্মী ড. রূপন রহমান ফোন করে বললেন, ‘কবি, স্বাচিপ সম্মেলনে মহাসচিব প্রার্থী হচ্ছো তো?’ একই সময়ে দেশ-বিদেশের আরও অনেক চিকিৎসকই আমাকে এই প্রশ্নটি করেছেন। চিকিৎসকদের গণআকাক্সক্ষার প্রেক্ষিতে আমার মনে হলো, এবার সম্মেলনে আমার আসলে প্রার্থী হওয়া উচিত। আমি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) জন্মের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলাম। কেন, কোন পরিস্থিতিতে, নিজের প্রভাবশালী অংশের বিরোধিতা সত্ত্বেও স্বাচিপের জন্ম হয়েছিলো, অনেকের চেয়েই আমি তা বেশি বৈ কম জানি না। এই সংগঠনটির সাথে আমার আত্মার সংযোগ। সম্মিলিতভাবে আমরা এই সংগঠনটিকে জননেত্রী শেখ হাসিনার অনুপ্রেরণায় এবং ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ভাইয়ের নেতৃত্বে প্রকৃত অর্থে একটি আদর্শিক সংগঠনে পরিণত করেছিলাম। তখনকার স্বাচিপের প্রতিটি পোস্টার নান্দনিকতায় এবং রাজনৈতিক বক্তব্যে ভীষণ সমৃদ্ধ ছিলো। পোস্টারে ব্যবহৃত শ্লোগানটি দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করতো। আর সেই স্বাচিপের এবারের সম্মেলনের পোস্টারটির শ্লোগান ইতিমধ্যে তিনবার পরিবর্তন করতে হয়েছে। পত্রিকায় এই পোস্টারটি নিয়ে তুলোধুনা করা হয়েছে। 

কথা ছিলো বঙ্গবন্ধুর গণমুখী স্বাস্থ্যব্যবস্থা বাস্তবায়নে স্বাচিপ অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। আমরা স্বপ্ন দেখতাম, স্বাস্থ্যখাতের সকল দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনার বিরূদ্ধে স্বাচিপ সোচ্চার থাকবে। আমরা সবসময় ভাবতাম, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশিত পথে স্বাস্থ্যখাতের সংস্কার ও পরিবর্তনে স্বাচিপ নেতৃত্ব দেবে। কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকরা নির্যাতিত হলে স্বাচিপ তার প্রতিবাদ করবে। আমাদের সেই স্বপ্ন ও ভাবনারা অনেকদিন হয়ে গেলো পথ হারিয়েছে। স্বাচিপকে দেখে দূর থেকে আজকাল অনেকটাই চেনা যায় না। সংগঠনটি যেন আজ খাজা বাবার দরগার মতো হয়ে গেছে। এককালের ড্যাব-শিবিরপন্থী যে কোনো চিকিৎসক চাইলেই আজ এই সংগঠনের সদস্য হতে পারেন। অনেক জেলার স্বাচিপ নেতৃত্বই ড্যাব থেকে আমদানীকৃত। হিজরত করেই তারা নানাধরণের দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির সাথে জড়িত। তাদের অনেকেই এখন ডিজি অফিসে আসন গেড়েছে। সংগঠনের সদস্য করার জন্য কোথাও কোন স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা নাই। বরং আত্মকলহে মগ্ন এই সংগঠনে নিজেরাই আজ নিজেদের বিরুদ্ধে লেগে থাকায় ব্যস্ত। আজিজ ভাইয়ের মতে দুয়েকজন ছাড়া অনেক নেতাকেই দেখেছি নিজেদের স্বার্থ ছাড়া আর কিছুই বোঝে না। নেতা হিসেবে পদ-পদবী ভাঙ্গিয়ে নিজের প্রাপ্তিটুকু নিশ্চিত করতেই এরা ব্যস্ত। সংগঠনের নিবেদিত কর্মীদের কথা এরা ভুলেও ভাবে না। গতানুগতিক ধারায় বিশেষ দিবসসমূহ উদযাপন আর সরকারের পক্ষে শ্লোগান দেওয়া ছাড়া স্বাস্থ্যখাতে কার্যকরী পরিবর্তনের লক্ষ্যে স্বাচিপের তেমন কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না। চাটুকারিতা না করেও যে সরকারের হাতকে শক্তিশালী করা যায়, এটি যেনো এই সংগঠনের অনেকেরই বিবেচনায় নেই। বিশ্বের যে প্রান্তেই থাকি না কেন, স্বাচিপের বর্তমান অবস্থা দেখে আমাদের অনেকেরই হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। আমরা ভালো থাকি না, এক ধরণের অস্থিরতায় ভুগি।

দল বা সংগঠন নিয়ে আমরা কিছু বলতে গেলে ‘তোমরা তো বিদেশে থাকো’ এই ধূয়ো তুলে প্রথমেই তাকে উড়িয়ে দেবার একটা চেষ্টা আমি বরাবরই লক্ষ্য করেছি। তার উপর ব্যক্তিগতভাবে আমি সবসময় নেপথ্যে থেকেই কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। জন্ম ও পারিবারিক সুত্রে এবং কিছুটা পড়াশুনার কারণে আমি বঙ্গবন্ধুকে বোধের গভীরে ধারণ করি। আমার কাছে সবসময়ই মনে হয়েছে, পদ-পদবীর চেয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে কাজ করা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। দেশ ও দশের উন্নয়নে শেখ হাসিনার দর্শন বাস্তবায়নে সামান্য ভূমিকা রাখাটা নিজের প্রাপ্তির চাইতে অনেক বেশি জরুরী। আমি শারীরিকভাবে বিদেশে থাকলেও মানসিকভাবে একটি দিনও দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকি নি। আমি বিদেশে থেকেও বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে কার্যকরভাবে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেছি। একাধিকবার সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও আমাদের সমর্থিত সরকার গত চৌদ্দ বছর ক্ষমতায় থাকলেও আমি দেশে ফিরে এসে কোনো রাজনৈতিক বা পেশাগত পদ-পদবী গ্রহণ করিনি। ব্যক্তিগতভাবে আমার ব্যাপক পরিচিতি ও প্রভাবশালী মানুষদের সাথে সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও ন্যূনতম কোনো স্খলনকে আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রশ্রয় দেইনি। অনেক চিকিৎসকের প্রয়োজনে আমি সাধ্যমতো পাশে দাঁড়িয়েছি, অনেকের জন্য কাজ করেছি। কিন্তু কেউ কোনোদিনও বলতে পারবে না, এর জন্য কারো কাছ থেকে আমি কোনোধরণের পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ কোনো সুবিধা বা অর্থ গ্রহণ করেছি। আমার যা কিছু আবদার তা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কাছে, আমার বন্ধুর বাবা ডা. এস এ মালেকের কাছে, আমার অভিভাবকতূল্য অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী ও ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন এবং আমার কিছু বড়ভাই ও বন্ধুর কাছে। এক জীবনে একটা মানুষের কতটুকুই বা প্রয়োজন? বরং একটা সাদামাটা, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তুলনামূলকভাবে সৎ জীবনযাপনের আনন্দটাই আলাদা। আমি সেই আনন্দেই অবগাহন করি রোজ। 

আজ যখন পেছন ফিরে তাকাই, তখন দীর্ঘ চলার পথে রাজপথের সাথীদের কথা খুব মনে পড়ে। অগ্রজসম রুহুল হক স্যার, কামরুল স্যার, শফিক ভাই, কালাম ভাই, ডাব্লু ভাই, শারফুদ্দিন ভাই, ইউনুস ভাই (প্রয়াত), নজরুল ভাই, ইকবাল ভাই, রোকেয়া আপা, মিল্টন ভাই, হামিদ আসগর ভাই, তবিবুর ভাই, নান্নু ভাই, দুলাল ভাই, বাদশা ভাই, জামাল ভাই, সর্দার নঈম ভাই, মোমেন ভাই, লিটন ভাই, সফু ভাই, ইসমাইল ভাই, এমদাদ ভাই, হীরু ভাই, রূপন ভাই, পাঠান ভাই, তারেক ভাই, জহীর ভাই, মিজান ভাই, আসাদ ভাই, ধীমান দা, লিয়াকত ভাই, মীরজাহান ভাই, মান্নান ভাই, ফরহাদ ভাই, শামীম ভাই, লিটু ভাই, পারভেজ ভাই, মুহিত ভাই, শিল্পী ভাই, রায়হান ভাই, টনি ভাই, অনুপ দা, বন্ধু কাওসার, মনিসুর, দেবেশ, হাদি, মুন্না, শেখ মামুন, মিজানুর রহমান কল্লোল, চিত্ত, অনুজসম মশিউর, জহির, ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী, যোসেফ, রবি, শাহীন, বায়েজিদ, নাজির, মুনীর, ত্বরিত, জুলফিকার লেনিন, দীপু,  চিশতি, আরিফ, মুনীর, তুষার, বাবুল, রাহাত, রিন্টু, টিটু, হাসান, বশির, বাদল, ফিরোজ, তুলিন, লিপন, বিদ্যুত, লিপন বড়ুয়া, বিপ্লব, বিপুল, রনি, রাশিদুল রানা, রিগ্যানসহ আরো কতো শত নাম মনে পড়ে। রাজপথের নির্যাতিত বঙ্গবন্ধুর এইসব আদর্শের অনুসারী চিকিৎসকরা তো অধিকাংশই আজো দেশে আছেন, বেঁচে আছেন। তারপরও স্বাচিপ কেনো লক্ষ্যভ্রষ্ট হবে? কেনো এটি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দীক্ষিত চিকিৎসকদের ঐক্যবদ্ধ সংগঠন হবে না? কেনো এটি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক হাতকে শক্তিশালী করবে না? কেনো এটি সাধারণ চিকিৎসকদের কাছে আস্থার সংগঠনে পরিণত হবে না? এতসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে মনে হয়েছে, আগামী ২৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য স্বাচিপের আসন্ন সম্মেলনে আমার মহাসচিব পদপ্রার্থী হওয়া প্রয়োজন। আমি মনোনীত/নির্বাচিত হলে সবাইকে নিয়ে স্বাচিপের রিব্রান্ডিং করবো। উপরোল্লিখিত সমস্যাসমূহ সমাধানে দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত সবাই মিলে কাজ করবো। ঐতিহ্য ও অভিজ্ঞতার মিশেলে আমরা চাইলেই আমূল বদলে দিয়ে স্বাচিপকে একটি কার্যকর সংগঠনে পরিণত করা সম্ভব। শক্তিশালী স্বাচিপ মানে শেখ হাসিনার হাত আরো বেশি শক্তিশালী হওয়া। স্বাচিপ পুনর্গঠনের সেই লড়াইয়ে আমি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে চাই। সন্তানের প্রয়োজনে মা যেভাবে সব ছেড়ে এগিয়ে আসেন, অনেকটা সেরকম ভাবেই। সুসময়ে আমি নেপথ্যে থেকেই কাজ করেছি। আজ যখন সরকারবিরোধী একটি ষড়যন্ত্র দেশব্যাপী মাথা চাড়া দিয়ে উঠবার চেষ্টা করছে, তখন আমি দায়িত্ব নিয়ে সামনে দাঁড়াতে চাই। আমার সাইত্রিশ বছরের দেশি-বিদেশি রাজনৈতিক-সাংগঠনিক অভিজ্ঞতাকে দেশ-জনগণ ও সংগঠনের কাজে লাগাতে চাই। প্রাণপ্রিয় নেত্রী, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা চাইলে দলের প্রয়োজনে যে কোন মুহূর্তেই আমি দেশে ফিরতে প্রস্তুত।

লেখক: স্বাচিপের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, প্রতিষ্ঠাতা গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক, সাবেক সমাজকল্যাণ সম্পাদক ও ভারপ্রাপ্ত সহ-সভাপতি, ঢামেকসু ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়