স্বকৃত নোমান: যার জীবনের লক্ষ্য যতো বড়, তার জীবনের সমস্যাও ততো বড়। জীবন তার কাছ থেকে পরীক্ষা নেয়। বিন্ধ্যাচলের মতো অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয় তাকে, মোকাবেলা করতে হয় অনেক শত্রুর। সে ছোট ছোট শত্রুর পরোয়া করে না, গুরুত্ব দেয় না। তার ধ্যান নিবিষ্ট থাকে বড় শত্রুর প্রতি। অর্জুনের কর্ণ যেমন, একিলিসের হেক্টর যেমন। সে যদি লক্ষ্যে অবিচল থেকে এগিয়ে যায়, তার সকল বাধা দূর হবেই, সকল শত্রু মাথা নোয়াবেই। একজন পুরুষের সাফল্যের নেপথ্যে থাকে একজন নারী এটা কেবল কথার নয়, এ এক মহান সত্য। নারীবিহীন পুরুষ অসম্পূর্ণ। ভারতীয় পুরাণে বিস্ময়ে দেখি, সতীহীন শিব চলে গেছেন সমাধিস্থ ধ্যানে। শিব শংকর বারবার বলছেন, গৌরী ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ। আমি অর্ধনারীশ্বর। সেই অর্ধেক নারী হচ্ছেন গৌরী। আদ্যশক্তি। গৌরীর মধ্যেও তো সেই শিবেরই বাস, সেই পরমব্রহ্মেরই অধিষ্ঠান।
যে শিব সে-ই গৌরী, যে গৌরী সে-ই শিব। একইভাবে লক্ষ্মী ছাড়া বিষ্ণু শ্রীহীন এবং সরস্বতী ছাড়া ব্রহ্মা। আর শ্রীরাধিকা বিহীন কৃষ্ণকে কি কল্পনা করা যায়? এভাবেই পুরাণ শিক্ষা দিচ্ছে নরÑনারীর ঐক্যের। সে কারণেই নারীকে রবীন্দ্রনাথ দেখেন পুরুষের হৃদয়েশ্বরী রূপে। তিনি বলেন, ‘মানুষের সৃষ্টিতে নারী পুরাতনী। নবসমাজে নারীশক্তিকে বলা যেতে পারে আদ্যাশক্তি। এই সেই শক্তি যা জীবলোকে প্রাণকে বহন করে, প্রাণকে পোষণ করে।...আমি আপন মনের মাধুরী মিশায়ে তোমারে করেছি রচনা/তুমি আমারই, তুমি আমারই, মম জীবন-মরণ বিহারী।’
সে কারণেই কাজী নজরুল বলেন, ‘কোনো কালে একা হয়নিকো জয়ী পুরুষের তরবারি/প্রেরণা দিয়েছে শক্তি দিয়েছে বিজয়ালক্ষ্মী নারী।’ যে পুরুষের জীবনে নারীর প্রেম নেই, নারীর প্রেরণা নেই, নারীর শক্তি নেই সেই পুরুষ পঙ্গু, অসমাপ্ত, দুর্বল, দুর্ভাগা। যে পুরুষের সংসারে নারী প্রেরণাদায়িনীর ভূমিকা থেকে সরে যায়, সে পুরুষ পৃথিবীতেই নরক দর্শন করে। কতো পুরুষকে বসন্তের ঝরা পল্লবের মতো ঝরে যেতে দেখেছি একজন নারীর অভাবে, একজন প্রেরণদায়িনীর শূন্যতায়। লেখক: কথাসাহিত্যিক