শিরোনাম

প্রকাশিত : ০৮ অক্টোবর, ২০২২, ০৩:৫৪ রাত
আপডেট : ০৮ অক্টোবর, ২০২২, ০৩:৫৪ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

তোমার মায়া কবিতার মতো ঘন, কবি

অজয় দাশগুপ্ত

অজয় দাশগুপ্ত: তোমার কবিতা ও কবি খ্যাতি বিশ্বজোড়া। যে খানে বাঙালি সেখানেই তুমি আছো। তোমার সাথে পরিচয় তোমার লেখার সাথে পরিচয় অনেক কালের। কিন্তু ঘনিষ্ঠতার বয়স খুব বেশি নয়। সেই যে তোমার সাথে প্রধানমন্ত্রীর   কথোপকথন ও পুরস্কার নেওয়া তখনই  নেগেটিভ তলোয়ার নিয়ে নেমে পড়েছিলেন এক কবি। তিনি তোমার চেয়ে কম খ্যাতিমান নন বরং বেশি। তাঁর কবিতা অমরত্ব লাভ করলেও তিনি হয়তো সে পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেননি। পদ পদকে টইটম্বুর হবার পরও তোমার বিপক্ষে তাঁর লেখা তাঁর, বিরদ্ধাচারণ আমার ভালো লাগেনি। 

ছেলেবেলা থেকে আমি ঠোঁট কাটা স্বভাবের। লেখা বা বলায় কখনো কোনো মানুষের  আনুকূল্য কিংবা রক্তচক্ষু কোনোটারই তোয়াক্কা করি না। সেবারও করিনি। যাঁর কথা বলছি তিনিও প্রিয়। বরং ঘনিষ্ঠ ছিলেন তোমার চেয়ে বেশি। তাতে কী, অন্যায় ও ঈর্ষার বিরোধিতা তো করতেই হবে। তিনি এই প্রতিক্রিয়া সহজভাবে নিতে পারেননি। আমাকে ফেসবুকে আনফ্রেন্ড করা ছাড়াও মন্দ বলতে দ্বিধা করেননি। অথচ তোমার সাথে তখনো আমার না ঘনিষ্ঠতা না এ বিষয়ে কোনো যোগসূত্র ঘটেছিল। 
পরেরবার ঢাকা গিয়ে প্রেসক্লাবে দেখা হয় তোমার সাথে। গল্প আড্ডা ডালপুরিও চা মিলে জমজমাট দুপুরটির ভাগিদার হয়েছিল কবি হাসান হাফিজ। পকেটে ডলার ভাঙানো টাকা আছে জেনেও একটি পয়সা বিল দিতে দাও নি। মনে করিয়ে দিয়েছিলে, এটা বাংলাদেশ। অগ্রজের মুখের ওপর না বলা নিষেধ। তোমাকে পছন্দ না করার কারণ খুব কম। তবে দুটি কারণে তোমাকে ভালোবাসি। এক. বহু প্রজননের দেশ ও সমাজে যখন কবি সাহিত্যিক সবাই বছর বছর বই পয়দা করায় ব্যস্ত সেখানে সুযোগ হাতের মুঠোয় নিয়েও তুমি সবসময় পরিমিত। মাত্র দুটো কবিতার বইয়ে ভুবনজুড়ে আসন পাতা বিস্ময়ের বৈকি। কবিতায় তুমি গদ্যে ওয়াহিদুল হক, পান্ডিত্যে প্রফেসর আবদুর রাজ্জাক এ কারণে চিরপ্রণম্য। 

দুই.  মুখে বললেও এক বয়সে প্রায় সবাই ঘর সংসার করে বা না করেও গৃহবাসী। তাদের বোহেমিয়ান জীবন ওখানেই ইতি টানে।  তুমি চির কিশোর ঘরহীন মানুষ। করোনার সময় ভাইয়েরা জোর করে ঘরে তুললেও তুমি টেকোনি। অথচ কোনো অভিযোগ নাই তোমার, অবলীলায় বললে, বুঝলি অজয় ওদের কষ্ট হয় আমি থাকলে, মেয়েগুলো বড় হইছে ওদের রুম দরকার। তারপর ফের হোটেল বাস। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তোমাকে চিকিৎসা করাতে চাইলে হাসপাতাল যাও নয়তো ওই হোটেলের একটা রুমই তোমার পৃথিবী। কতো প্রশংসা তাদের। কোনোদিন একটি অভিযোগও শুনিনি। 
গেলো বার হোটেলের বোর্ডার ও বয় বেয়ারা মিলে তোমার জন্মদিন পালন করেছিলো। তুমি বলছিলে টিভি বা বড় বড় অনুষ্ঠানের চাইতেও এটি তোমার মন কেড়ে নিয়েছিল। এবার তুমি হাসপাতালে। সামাজিক মিডিয়ার ছবিতে দেখলাম শুয়ে আছো। মাথার কাছে টেবিলে ফুলের সমাহার। কেমন জানি লাগলো  বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো কেন জানি। শোন তাড়াতাড়ি সুস্থ হও। তুমি ছাড়া কে আছে যে আপনি ডাকলে তুমি ডাকে তুমি বললে তুই বলে? তোমার মতো কে বলে, বৌমাকে শুভেচ্ছা, ছেলেকে আদর দিস। তোমার মায়া কবিতার মতো ঘন কবি। তোমার কথাতেই বলি, এখন বাঁচার তার শ্রেষ্ঠ সময়। মনে রেখো ডালপুরি চা এখনো বাকি অগ্রজ বন্ধু আমার। হেলাল হাফিজের জন্মদিন ছিলো ৭ অক্টোবর। তাঁকে শুভেচ্ছা। তাঁর সুস্থ জীবন কামনা করছি।

লেখক: কলামিস্ট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়