শিরোনাম
◈ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২য় উচ্চতর গ্রেডে আইনি ছাড় ◈ বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা সুবিধা চালু করেছে মালয়েশিয়া ◈ শান্তির হ্যাটট্রিক, ভুটানকে সহ‌জেই হারা‌লো বাংলাদেশের মে‌য়েরা ◈ মেট্রো স্টেশনে বসছে এটিএম ও সিআরএম বুথ ◈ ১৬ই জুলাই রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা ◈ রহস্যময় নাকামোতো এখন বিশ্বের ১২তম ধনী, বিটকয়েন সম্পদ ১২৮ বিলিয়ন ডলার ◈ শাহবাগ মোড় অবরোধ করলো স্বেচ্ছাসেবক দল ◈ বিএসবির খায়রুল বাশারকে আদালত প্রাঙ্গণে ডিম নিক্ষেপ, কিল-ঘুষি ◈ গণপ্রতিরোধের মুখে শেখ হাসিনা পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন: ভোলায় নাহিদ ইসলাম  ◈ গৌরনদীতে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বদলি আদেশ ঘিরে অবরোধ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ৩

প্রকাশিত : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ০৮:১৭ রাত
আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ০৮:২৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কিশোর অপরাধঃ আবারও হত্যা

আলোচনায় গ্যাং কালচার, আসুন পরিত্রাণ নিয়ে ভাবি 

কিশোর গ্যাং

মাসুক আলতাফ চৌধুরী: প্রেম নিয়ে বিরোধ। ফেসবুকে ঝগড়া। পরীক্ষা হল থেকে বের হয়েই বোঝাপরা,এবার সামনাসামনি তর্ক। সব বন্ধুরা এক হয়ে টার্গেটের ওপর চড়াও। আরেক বন্ধু পাশের বাসা থেকে দৌড়ে আনে ছুরি। ধস্তাধস্তি, ছুরিকাঘাত, হাসপাতালে মৃত্যু। ঘটনা এমনই,বর্ণনায় হয়তো সহজতর, তবে লোমহর্ষক। বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) পরীক্ষার পরপরই ঘটে যাওয়া  কিশোর অপরাধ কাহিনি। ঘটনাটি কিশোর কাহিনির  সাথে মিলে গেলেও  গল্প নয়, ঘটে যাওয়া অপরাধ,যার পরিনতি-মৃত্যু।

নিহত হওয়া কিশোর মোঃ সিয়াম(১৮)। বাড়ি তিতাস উপজেলার চরমোহনপুরে। সে পাশের মুন্সিগঞ্জে পলিটেকনিকের প্রথমবর্ষের ছাত্র। অপরদিকে হামলাকারীরা সবাই মাদ্রাসা পড়ুয়া দাখিল পরীক্ষার্থী। পাশের মেঘনা উপজেলার ব্রাহ্মণচর নয়াগাঁও সিনিয়র আলীম মাদ্রাসার ছাত্র। সবাই কিশোর। ঘটনাটি ঘটেছে তিতাস উপজেলার পরীক্ষা কেন্দ্র গাজীপুর আজিজিয়া সিনিয়র দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রের সামনে। বন্ধুরা সবাই পরীক্ষার জন্যে কেন্দ্রের পাশেই ভাড়া বাসায় একত্রে থাকতো।

পুলিশের ভাষ্য,  ঘটনার নায়ক নাজমুলসহ ৮ পরীক্ষার্থীকে  গ্রেফতার করা হয়েছে। ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার হয়েছে। তারা স্বীকারও করেছে প্রেম নিয়েই নিহত সিয়ামের সাথে নাজমুলের বিরোধ। কথা বলতেই সিয়াম কেন্দ্রে আসে। পরীক্ষার পরপরই নাজমুলরা সবাই এক হয়। তর্কের একপর্যায়ে সাকিব দৌড়ে গিয়ে পাশের বাসা থেকে ছুরিটি আনে। সিয়ামের তলপেটে ছুরির দু'টি আঘাত আছে। উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়। এদিকে প্রশ্ন উঠেছে ওই ৮ কিশোরের পরবর্তী পরীক্ষার কি হবে? অপরাধ গুরুতর, পুলিশের কিছু করার নেই, আদালতের ফায়সালা  লাগবে,আদালত সাপ্তাহিক ছুটিতে,তাই সম্ভাবনা শূণ্য  বলা চলে। 

গণমাধ্যমে নিহত সিয়ামের মায়ের ভাষ্য, ওই প্রেম নিয়ে আমার ছেলের সাথে এক ছেলের ফেসবুকে ঝগড়া হয়, সে আমার ছেলেকে ফেসবুকেই হুমকি দেয়। আমার ছেলে তার বাবাকে ঘটনাটি জানায়। ছেলের বাবা ওই ছেলেকে (নাজমুল) বুঝিয়ে ঝগড়া থামায়। এরপরও এতো বড় ঘটনা ঘটে গেল।

আগের দিনের, যদিও অন্য এলাকার এবং পৃথক ঘটনা তবুও আলোচনায় আনলাম। কুমিল্লা শহরের শাকতলা থেকে কিশোর গ্যাং - রয়্যাল গ্যাং স্টার প্রধান রায়হান খন্দকার শিশির ও ডেঞ্জারাস সাইলেন্ট গ্রুপের প্রধান সাইদুর রহমান সিহাবসহ আট কিশোরকে গ্রেফতার করে ব্যাব। এরা বখাটে। পদুয়ার বাজার এলাকায় আধিপত্য নিয়ে এই দু' গ্রুপে সংঘর্ষ হতো প্রায়ই। সম্প্রতি এ নিয়ে রামমালায় প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া ও সংঘর্ষ ঘটে। তাদের কাছ থেকেও চাপাতি,চাইনিজ কুড়াল, সুইস গিয়ার চাকু উদ্ধার হয়। এদের রাজনৈতিক বড়ভাই রয়েছে। কারণ এরা বাহিনী হিসেবে ব্যবহৃত হতো মাত্র। 

গত ৫ বছরে ১১টি খুনের ঘটনা ঘটলো কিশোর গ্যাং ও অপরাধীদের দৌরাত্ম্যে। সবশেষ ১৯ আগস্ট মাদ্রাসা পড়ুয়া মোগলটুলির শাহাদাত হোসেন (১৫) প্রকাশ্যে মিশনারী স্কুলের কাছে ছুরিকাঘাতে নিহত হয়। দু'টি কিশোর গ্যাংয়ের দীর্ঘ কোন্দলের জেরে ওই হত্যাকান্ড ঘটে। পুলিশ দ্রুতই অপরাধীদের ধরে ফেলে।

শহরের সবচেয়ে আলোচিত কিশোর গ্যাংকান্ড ও হত্যাকান্ড ঘটেছিল ২০১৯ সনের ১৪ মে রাতে মোগলটুলিতে ঈগল বাহিনীর সদস্যরা মডার্ণ স্কুলের দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া কিশোর আজমাইন আদিলকে ছুরিকাঘাতে ও কুপিয়ে হত্যা করে। ওই মামলার আসামিরা এখন জামিনে মুক্ত।

আর শহর জুড়ে গড়ে ওঠা কিশোর গ্যাং সম্পর্কে জানাজানি হয় ২০১৭ সনের ২৭ মে নজরুল এভিনিউতে ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শাহজাদা ইসলামকে কুপিয়ে হত্যার পর।

এখনকার অবস্থা অনেকটা ভালো বলা চলে,যদিও হত্যার মতো ঘটনা ঘটেছে। ব্যাবের সাম্প্রতিক অভিযান প্রশংসার দাবী রাখে। আরও একটু গভীরে গিয়ে বড়ভাই ও রাজনৈতিক প্রশ্রয়দাতাদের আইনের আওতায় লেফট-রাইট করানো গেলে মূলেই আটকে রাখা যেতো। পুলিশী নজরদারিও এখন বেড়েছে।  তবে সন্ধ্যারপরপরই রাস্তায় আড্ডা ভেঙে দেয়া গেলে অনেকটা সুফল আসতো। অপরাধও কমতো। দুষ্টুপরিকল্পনা  শুরুর পর্যায়েই ভেস্তে দেয়া যেতো।

বিশেষ করে কিশোর- তরুণদের মোবাইল ও মাদকাসক্তি নিয়ে ভাববার পরিণত সময়ে আমরা এখন উপস্থিত। অভিভাবক, শিক্ষক, পরিবার, সমাজ, রাস্ট্র কার কি করণীয়  নির্ধারণ হওয়া দরকার। শাসন- শৃঙ্খলার ভেতর সব থাকতো। খেলা-ধূলায় আগ্রহ নেই কিশোর-তরুণদের। উদ্যোগও নেই, ভেবে দেখা দরকার। পড়ার চাপ খুব বেশি। বখাটেদের ব্যাপারে পরিবারে নালিশ দিয়ে ফল আসছে না,শাসন নেই, অথবা মানছে না। মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে সবসময়ই উদ্বিগ্ন বাবা-মারা। সবমিলিয়ে সামাজিক-পারিবারিক  নিরাপত্তায় করনীয়-ন্যাশনাল গাইড লাইন তৈরি করা সময়ের দাবী। যেখানে একত্রে ও আলাদা করনীয় নির্ধারন হলে জানা, মানা ও অনুসরণ করে সমাজ মেরামত করে নেয়া যেতো। দায়িত্ব সবারই। 

লেখকঃ সাংবাদিক, কুমিল্লা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়