আহসান হাবিব: জীবন মহান কিছু নয় রে পাগলা, আমরাই ওকে ফেনিয়ে তুলি। অহেতুক। জীবন মুফতে পাওয়া একটা সপ্রাণ বস্তু। একে পাওয়ার জন্য আমাদের কোনো হাত নেই। কিন্তু যখন এটা আমরা পেয়ে যাই, তখন এর প্রতি মায়া জন্মাতে থাকে, মায়া ফলাতে থাকি। এই মায়া আমাদের একসময় অন্ধ করে দেয়। যা পাওয়ার জন্য আমাদের কোনো হাত নেই, কোনো শ্রম নেই, তার প্রতি এতো মায়া কেন?
এই মায়াটা একটা ফালতু আবেগ। জীবনের প্রতি যে নিরাসক্ত নয়, সে এক নম্বরের লোভী। লোভী মানুষগুলো সবচেয়ে অশ্লীল। এই লোভ তাদের এমন একপর্যায়ে নিয়ে যায় যে জীবনকে নিরাপদ এবং উপভোগ করার নামে হিংস্র হয়ে ওঠে এবং সম্পদ কুক্ষিগত করতে থাকে। অথচ এই সম্পদ তার সৃষ্টি নয়, অন্যের সৃষ্টি। অন্যকে বঞ্চিত করে নিজে ভোগ করার এই যে সংস্কৃতি মানুষ গড়ে তুলেছে, এক চুল ছাড় দিতে নারাজ, এটাই জীবনকে ভুয়া মহান করার জন্য দায়ী। এই ভোগলিপ্সাই প্রজন্মের পর প্রজন্মে বাহিত করার জন্য প্রেমপ্রীতি ভালোবাসা মায়া ইত্যাদি সব আলগা আবেগ তৈরি করেছে। তাই মৃত্যুকে এরা মরাকান্নায় রূপান্তরিত করেছে। অথচ হওয়া উচিত ছিল জীবনকে পাওয়ার মতোই মৃত্যুও স্বাভাবিক।
মানুষ এক বিদঘুটে প্রাণী। এর পরতে পরতে লোভ। এই লোভ যে শুধু ইহকালের জন্য তা নয়, পরকালের জন্যও। পরকালে কি কি পাবে, তার বিশাল তালিকা করেছে সে! সেসব লোভের লালা দিয়ে লেখা। সেসবের জন্য লালা ইহকালেই ঝরে ঝরে পড়ছে। অথচ পরকাল বলে কোন বস্তুই নাই। আসলে জীবন কোন মহান বিষয় নয়, খুব স্বাভাবিক একটা ধারা। মৃত্যু কোন আহাজারির বিষয় নয়, খুব স্বাভাবিক প্রাকৃতিক একটা বিষয়। কেউ আত্মহত্যা করলেই লোভী মানুষেরা দেখি জীবনকে মহান করতে উঠেপড়ে লাগে আর মানুষটিকে কাপুরুষ আখ্যা দিতে থাকে। কত লোভী এরা? মানুষের মতো একটা সপ্রাণ বস্তুর বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে সে তার ইচ্ছামত কিছু করতে পারা। একটা বন্য প্রাণী যা পারে না, মানুষ তা পারে, এটাই পার্থক্য। কিন্তু তারা তাদের জীবনকে মহান বানানোর চেষ্টা করে না, মৃত্যু এবং জীবনকে একই চোখে দেখে। স্বাভাবিক তারা। মানুষের দেখছি ছিঁচকাঁদনের শেষ নাই। বন্ধ কর এসব, ছাগুর দল। লেখক : ঔপন্যাসিক