জান্নাতুল মাওয়া আইনান: আজকে দেশের একটা উম্মাহ শপিং ওয়েবসাইটে দেখলাম নাক-মুখ-চোখ বিহীন নিকাবি পুতুল বিক্রি হচ্ছে। পুতুলের দাম ৭৪০ টাকা। এদিকে বাংলাদেশের মেয়ে ফুটবলারদের বেতন নাকি মাসে দশ হাজার টাকা। প্রশ্ন আসে, মধ্যবিত্তদের কালচারাল ওয়ারে দরিদ্র ফুটবলারদের ঠিক কীভাবে উপস্থাপন করলে এই মেয়েগুলোর জীবন যাপনকে আমরা সহজ রাখতে পারবো। এই প্রশ্নটা আসে, কারণ চিন্তাভাবনা করে এই মেয়েদের শ্রদ্ধার সাথে স্পেস দেওয়া, নিরাপদে থাকার ব্যবস্থা করা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
অন্যদিকে, কালচারাল ওয়ারটা কিন্তু আসলে আমরা এড়িয়ে যেতে পারবো না। বাংলাদেশ থেকে দুইহাজার মাইল দূরের একটা দেশে মেয়েরা ক্লাস সিক্সের পরে আর স্কুলে যেতে পারছে না। কিছু কিছু জায়গায় তারা গোপনে পড়াশোনা করছে বলে সংবাদ পাওয়া গেছে। তালেবরা ক্ষমতা নেওয়ার পরেই সবচেয়ে প্রথম যেই পদক্ষেপ নেয় তা হলো মেয়েদের স্কুল, চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য- ইত্যাদি সমস্ত ক্ষেত্র থেকে উৎখাত করা।
এদিকে ইরানে হিজাব আইন অমান্য করায় মাহসা আমিনি নামের এক মেয়েকে নীতি পুলিশ ধরে নিয়ে যায় এবং মেয়েটা কাস্টডিতে মারা যায়। এরপরে বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের গুলিতে আরো দুইজন মারা যায়। বাংলাদেশের মুসলিম মেয়েরা এই ঘটনাগুলো সংবাদ মাধ্যম থেকে দেখছে জানছে। এছাড়াও তাদের অনেকেরই সামাজিকভাবে মোরাল পুলিশিং এর শিকার হবার অভিজ্ঞতা আছে। এই বাস্তবতার মাঝে বসে থাকা লোকেদেরকে আপনি যদি এই মেয়েরা তোমরা কালচারাল ওয়ার কইরোনা বলে কাকুতি মিনতি করেন তাতে আসলে লাভ নাই।
সামাজিক রাজনৈতিক নানান কারনে এই অঞ্চলে কালচারাল ওয়ার যেইটা চলছে সেটা আসলে থামানোর উপায় মনে হয়না আর কারো কাছে আছে। উলের বল হাত থেকে পড়ে গেলে সুতা যেমন গড়গড় করে ছড়িয়ে যেতে থাকে এখনকার পরিস্থিতিও তেমনি। আমার মনে হয়, বাংলাদেশের ফেমিনিস্টরা এবং বাংলাদেশের পুরুষ রাজনীতিবিদেরা, লেখক-চিন্তাবিদেরা কেউই দেশের এবং দুনিয়ার বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনীতির পালাবদলে মেয়েরা যে কত শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারে এইটা অনুধাবন করতে পারছেন না। মেয়েরা যা ই করে সেটাকে হালকাভাবে দেখা তো আমাদের অঞ্চলের পুরুষদের একটা মজ্জাগত সমস্যা। ফেমিনিস্টরাও মনে হয় নিজেদের অবস্থানের ভারটা এইজন্য বুঝে উঠতে পারছে না।
বাংলাদেশের মেয়েরা আন্তর্জাতিক মাঠে ফুটবল খেলে শিরোপা জিতে বাড়ি ফিরছে। এই মেয়েরা কারা? হিসাব নিলে দেখা যায় এরা প্রায় সবাই হতদরিদ্র ঘরের সন্তান। গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ ইন্ডেক্সের হিসাব অনুযায়ীও বাংলাদেশের অবস্থান খুবই ভালো। ২০১৭ সালের একটা গবেষণা পত্র থেকে জানা যায় শ্রমবাজারে বাংলাদেশের মেয়েদের অংশ নেবার বিষয়টা মূলতঃ দারিদ্র দ্বারা তাড়িত। ভূমিহীন এবং দরিদ্র পরিবারের নারীদের পক্ষে ঘরে বসে পর্দার মত বিলাসী প্রথা রক্ষা করা সম্ভব হয়না। পর্দাপ্রথা মূলতঃ মধ্যবিত্তের বিলাসী কারবার।
সুতরাং, ফুটবল খেলায় মেয়েদের এই বিজয় নারীবাদীদের তৎপরতামূলক কোন বিজয় না।
এই মেয়েরা নিজেদের শ্রম দিয়ে এরকম একটা অসাধারণ দিন দেখিয়ে দেবার পরে একশ্রেণীর সাংস্কৃতিক বিপ্লবীরা অর্বাচীনের মত একটা রঙ্গচিত্র ছড়িয়ে দিয়েছে এতে এই মেয়েরা যদি কোন বিপদের মুখে পড়ে তার দায়ভার কি আপনারা নিবেন? আপনাদের মনে রাখা দরকার, এই মেয়েরা কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকে। তাদের বাড়ির দরজায় দারোয়ান দাঁড়িয়ে থাকেনা। তারা চাইলেই হুট করে বিদেশে চলে যেতে পারবেনা। সুতরাং, ভাবেন, ভাবা প্র্যাক্টিস করেন। খালি ফটাফট শেয়ার দিলেই হবেনা। শেয়ারের কারবারে যখন তখন গন্ডগোল লাগে জানেনই তো। সবশেষে, এই নিম্নবিত্তের শক্তিশালী মেয়েদের অভিনন্দন। তোমাদের দেখে যদি মধ্যবিত্তের লুতুপুতু মেয়েগুলো কিছু শিখে আর কী। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :