আগামী সেপ্টেম্বরের ২৯- অক্টোবরের ০৪ তারিখে অস্ট্রেলিয়ার এডিলেইড শহরে ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অন বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা (WC-IUPESM 2025)। প্রতি তিন বছরে এই কনফারেন্স হয়। এই ফিল্ডে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ন একটি কনফারেন্স এটি। তিন বছর আগে সিংগাপুরে অনুষ্ঠিত একই কনফারেন্সে আমি যোগ দিয়েছিলাম। গবেষনা নিবন্ধ উপস্থাপন করেছি।
সেই ধারাবাহিকতাতেই এবছর আবার আসর বসছে অস্ট্রেলিয়াতে। আমাদের বহু কাঙ্খিত এ কনফারেন্স। এ সংক্রান্ত একটি গবেষনা আমি এই বছরের মার্চে জমা দেই। সেটা গৃহীতও হয়। আমার নিয়োগকৃত প্রতিষ্ঠান কনফারেন্সের রেজিস্ট্রেশন ও ভ্রমন টিকেটবাবদ খরচও দিতে রাজি হয়। কিন্তু পরে ভিসা আবেদন করার পর আমি হই প্রত্যাখ্যাত! গত শুক্রবার (সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৫) এ আমি ইমেইল পেয়ে বিষ্মিত। কারন হিসাবে তেমন বড় কিছু নই। ভিসা কর্তৃপক্ষের ধারনা হয়েছে আমি নাকি ফিরবনা!
অথচ আমি একা যাব, আমার ছেলে, স্বামী, মা, ভাই সকলেই বাংলাদেশে থাকবে। আমি এর আগে পিএইচডিকালীন সময়ে (২০১১-২০১৪) সালে নরওয়ের অস্থায়ী বসবাসকারী (টিআরপি) হিসাবে বিবেচিত ছিলাম। নরওয়েজিয়ান শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অধীনে কান্ট্রি স্কলারশিপ পেয়েছি। ওখানে থাকার সময় জার্মানি, স্পেইন, ইটালি ও সুইজারল্যান্ড গিয়েছি! ২০০৯ সালে হাতে লেখা পাসপোর্টের জমানার সময় আমি সেনজেন ভিসা পেয়েছি! জার্মানি গিয়েছিলাম সেবারও, সরকারী বৃত্তি নিয়ে, একটা সামার স্কুলে অংশ নিতে।। ২০১৯ এ থাইল্যান্ড ও সিংগাপুর গিয়েছি কনফারেন্সে! অথচ সেই আমি এবার প্রত্যাখ্যাত হলাম! প্রথমবারের মত কোন দেশ আমাকে ভিসা দিতে রিজেক্ট করল! অপমানিত ও ক্ষুব্ধ হয়েছি প্রচন্ড।
আবেদনের সময়ই জানিয়েছিল কর্তৃপক্ষ যে আপীল করার সুযোগ এখানে নাই। ফলে কিছুই করার নাই। পরে আমার অফিসে জানানোর পর যে তথ্য পেলাম সেটা আরো দুশ্চিন্তার ! বিগত বেশ কিছুদিন ধরে অনেকেরই এমন করে ভিসা রিজেক্ট হচ্ছে। সিংগাপুর থাইল্যান্ডের ভিসা পাচ্ছেনা মানুষ। অস্ট্রেলিয়াও তাই।
অনেকের ছেলে মেয়ে পড়ে ওখানে, তারা আগে গিয়েছে, এমন আবেদনকারীরাও নিয়মিত প্রত্যাখ্যাত হচ্ছেন। আমার অফিসে এর আগে একজন আমেরিকাতে কনফারেন্সে যোগ দিতে যেয়ে পারেন নাই, গবেষনাপত্র গ্রহন করার পরও। ভিসা রিজেক্ট হয়েছে। প্ত্রিকাতে এই নিয়ে রিপোর্টও প্রকাশিত হচ্ছে!
অনেকে জার্নালে বাংলাদেশ থেকে পাঠানো পেপারের রিভিউ আসতে অনেক সময় লাগছে, নানান প্রশ্ন উত্থাপন করছে, প্রবন্ধপ্রেরনকারী আগে এমন পরিস্থিতির শিকার হন নাই কোনদিন। জার্নালে প্রকাশের জন্য রেজিস্ট্রেশন ফিও তো হয়ে গিয়েছে এখন আকাশছোঁয়া!
চারদিন আগে ড্যানিশ পত্রিকার এক রিপোর্টে দেখলাম যে সেখানে বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রদের জন্য ফ্যামিলি ভিসা কঠিন হয়ে গিয়েছে। এই বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য তারা প্রকাশ করেছে।
মোট কথা ভিসা সংক্রান্ত জটিলতায় ভালোভাবেই পড়েছে এখন বাংলাদেশ! এথেকে পরিত্রান পাওয়ার জন্য পদক্ষেপ নেয়া অতি জরুরী।
লেখক: ডঃ হুমায়রা ফেরদৌস
সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদ
ডেপুটি ডিরেক্টর, সেন্টার ফর বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ (সিবিআর), ডাঃ আনোয়ারুল আবেদীন ইন্সটিউট অব ইনোভেশন
humayra.ferdous@gmail.com, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ (এআইইউবি)