শিরোনাম
◈ ‘নতুন আরপিওতে বড় পরিবর্তন: পলাতক অযোগ্য, দুর্নীতির প্রমাণে ভোট বাতিল করতে পারবে ইসি’ (ভিডিও) ◈ বিএনপির প্রস্তাব বিবেচনায় নিলে আসন্ন নির্বাচন হবে মাইলফলক: মঈন খান ◈ বিচারকরা সরকারি পদে থাকতে চাইলেও পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠায় বাধা সংবিধান অনুযায়ী ◈ ২৮ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরাতে পরবর্তী আপিল শুনানি ◈ কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা করছে: মির্জা ফখরুল ◈ অলিখিত ফাইনালে টস জিতে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ ◈ জুলাই গণহত্যা: শেখ হাসিনাসহ তিনজনের রায়ের তারিখ জানা যাবে ১৩ নভেম্বর ◈ সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড: তদন্তে ‘শেষবারের মতো’ ছয় মাস সময় দিলেন হাইকোর্ট ◈ বর্জ্য নয়, রফতানি পণ্য: মাছের আঁশে স্বপ্ন দেখছে দেশীয় উদ্যোক্তারা ◈ জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতা, চাপে অন্তর্বর্তী সরকার

প্রকাশিত : ১১ জুলাই, ২০২৪, ০৪:১৭ সকাল
আপডেট : ১৬ মে, ২০২৫, ০৫:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

১৯০০ সালের শাসনবিধি অন্য যেকোনো আইন বা আর দশটা আইনের মতো নয়

মেহেদী হাসান পলাশ

মেহেদী হাসান পলাশ: ১৯০০ সালের হিল ট্রাক্টস ম্যানুয়াল রক্ষায় পাহাড়ি নেতৃবৃন্দ আন্দোলন করছেন কিছুদিন ধরে। তাদের দাবি, সরকার এই শাসন বিধির কিছু কিছু ধারা ও শব্দে আদালতের মাধ্যমে পরিবর্তন আনতে চাইছে। কিন্তু তারা এই পরিবর্তন চাইছে না। তারা চাইছে মূল শাসনবিধি সুরক্ষা করতে। তাদের এই বক্তব্যটি আসলে একটি প্রতারণা। এখানে শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। পাহাড়ী নেতৃবৃন্দ আদি, অকৃত্রিম হিল ট্রাক্টস ম্যানুয়াল বহাল রাখার জন্য আন্দোলন করছে না। তারাও এর কিছু কিছু ধারা বহাল রাখার জন্য আন্দোলন করছে। বাকি ধারাগুলো বাতিল চায় এবং অনেক ধারায় ইতোমধ্যেই পরিবর্তন এনেছে নতুন আইন করে। যেমন এই শাসন বিধিতে পার্বত্য চট্টগ্রামকে এক্সক্লুডেড এরিয়া বলা হয়েছে, তারা এটি বহাল রাখতে চায়। এখানে পাহাড়ের বাইরের মানুষের যাতায়াত ও বসতি স্থাপনের উপর কিছু বিধি-নিষেধ রয়েছে, তারা এগুলো বহাল রাখতে চায়। এখানে প্রথাগত আইনের কথা বলা আছে, তারা সেগুলো বহাল রাখতে চায়। এখানে যে স্বায়ত্বশাসনের কথা বলা হয়েছে, সেটাও তারা চায়।

কিন্তু এই শাসনবিধিতে জেলা প্রশাসকের যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সেটি আবার তারা বাতিল চায়। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের হাতে যে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া আছে সেগুলো তারা বাতিল চায়। তারা যাকে রাজা বলে ডাকেন, এই শাসনবিধিতে তাকে সার্কেল চিফ বলা হয়েছে। উনারা সেটাও না মেনে নিজেদের তথাকথিত রাজা দাবি করেন। এখানে সার্কেল পদটি মূলত উপদেষ্টামূলক এবং দায়িত্বে ট্যাক্স কালেক্টর। কিন্তু উনারা নিজেদেরকে ভূস্বামী মনে করেন এবং দাবি করেন। ইতিমধ্যেই এই শাসন বিধির বিভিন্ন ধারায় পরিবর্তন এনে উনারা উনাদের প্রয়োজনে নতুন নতুন আইন সৃষ্টি করেছেন। সেগুলো বহাল রাখতে চান। এটা একটা চরম স্ববিরোধী ও সুবিধাবাদী অবস্থা। 

ব্রিটিশরা উপনিবেশের একটি অংশ হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামকে ব্রিটিশরা এক্সক্লুডেড বা নন রেগুলেটেড এরিয়া আখ্যা দিতেই পারে। একটি উপনিবেশবাদী সরকারের শাসনব্যবস্থার সাথে এটা সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল এবং ভারতবর্ষে এরকম আরো অনেক নন রেগুলেটেড এরিয়া ছিল ব্রিটিশ শাসনামলে। কেননা উপনিবেশবাদী শাসক হিসেবে ব্রিটিশদের মূল উদ্দেশ্য ছিল, শোষণের জন্য শাসন করা। তাই তারা শোষণের সুবিধার্থে যেখানে নন রেগুলেটেড এরিয়া করা দরকার, করেছে। যেখানে প্রিসলি স্টেট করা দরকার, করেছে। যেখানে করদ রাজ্য করা দরকার, সেখানে তাইই করেছে। একইভাবে ভারতবর্ষ যখন এই সমস্ত এলাকাগুলোকে তার ইউনিয়নভুক্ত করে, তখন তাদের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী নানা আইন করেছে। একটি ফেডারেল রাষ্ট্র হওয়ার কারণে ভারতের পক্ষেও সেটা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু এখন তারা আবার সেগুলোতে নানা পরিবর্তন বা বাতিল করছে। যেমন, আর্টিকেল ৩৭০। 

পার্বত্য চট্টগ্রামেও একই ঘটনা ঘটেছে। কুকি ও চাকমাদের সাথে যুদ্ধে পেরে উঠতে না পেরে নেপাল থেকে জঙ্গল যুদ্ধে পারদর্শী গোর্খা এনেও যখন কোন লাভ হয়নি, তখন এক বিশেষ আইন করে তারা। এই আইনে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথাগত নেতাদের কিছু সুযোগ-সুবিধা দিয়ে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামের শাসন ক্ষমতা নিজেদের কুক্ষিগত করে ব্রিটিশরা। পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামের শাসনভার এই আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ গভর্নর কর্তৃক নিযুক্ত ডেপুটি কমিশনারদের হাতে অর্পণ করা হয়। বাজারের দায়িত্ব দেয়া হয় বাঙ্গালীদের। এটা অবশ্য ট্রাইবাল লিডাররাও করেছে সবসময়। উপজাতীয় নেতারা তাদের দপ্তরের হিসাব সামলানোর জন্য, এবং ব্যবসা-বাণিজ্য চালানোর জন্য সমতল থেকে বাঙ্গালীদের নিয়ে গেছে। তাদের জনগণ এই কাজে পারদর্শী ছিল না। ব্রিটিশদের দেয়া কতিপয় সুবিধার বিনিময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের উপরে চরম নিষ্পেষণমূলক আইনটির ব্যাপারে তখনও উচ্চবাচ্য করেনি পাহাড়ী নেতৃবৃন্দ। 

বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রাম স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের এক দশমাংশ। বাংলাদেশের সংবিধানে ফেডারেল বা প্রাদেশিক ব্যবস্থার অনুমোদন নেই। কাজেই এই দেশের বৈধ কোন আইনে স্বায়ত্তশাসনের কোন কথা থাকতে পারে না। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ তার এক দশমাংশ এলাকাকে এক্সক্লুডেড বা নন রেগুলেটেড এরিয়া হিসেবে বৈধতা দিতে পারে না। প্রথাগত আইনের নামে সেখানকার ভূমি ব্যবস্থাপনা, শাসন ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ তথাকথিত রাজার হাতে তুলে দিতে পারে না। বিশেষত এলাকাটি যখন পার্বত্য চট্টগ্রামের মত বিচ্ছিন্নতা প্রবণ এলাকা হয় সেখানে সতর্কতা অতি জরুরী। 

শুধু বিচ্ছিন্নতা প্রবণ বলেই নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তার বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে চট্টগ্রাম বন্দর ও কক্সবাজার  হাতছাড়া হয়ে যাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। কেননা চট্টগ্রাম বন্দর তখন বিদেশি শক্তির সাধারণ আর্টিলারি গানের আওতায় চলে আসবে। শুধুমাত্র চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তৎকালীন মুসলিম লীগ রাড ক্লিফের কাছে পার্বত্য চট্টগ্রামকে পূর্ব পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য মরিয়া হয়েছিলেন। কিন্তু কংগ্রেসের প্রবল দাবির মুখে মুসলিম লীগকে সেদিন পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের দুইটি অংশ ভারতের কাছে ছেড়ে দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামকে রক্ষা করতে হয়েছিল। কাজেই ১৯০০ সালের শাসনবিধি অন্য যেকোনো আইন বা আর দশটা আইনের মতো নয়। এটি আমার হাত কেটে পাওয়া হাত, অঙ্গ কেটে পাওয়া অঙ্গ। এর সাথে দেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব অখণ্ডতা, নিরাপত্তা ও কর্তৃত্বের প্রশ্ন জড়িত। ঔপনিবেশিক আইন দিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র চলতে পারে না। ৯-৭-২৪।

 https://www.facebook.com/mehadihassanpalash1

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়