শিরোনাম
◈ শেখ হাসিনার শাসনামলের গুম, খুন, অর্থপাচার: আল জাজিরার তথ্যচিত্রে বিস্ফোরক তথ্য ◈ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ হ্যাকড ◈ এবার রিপাবলিক বাংলা বন্ধ ও ময়ূখকে গ্রেফতারের দাবিতে পশ্চিমবঙ্গে বি'ক্ষো'ভ (ভিডিও) ◈ দেশে জঙ্গি ঢুকিয়ে দিয়ে যুদ্ধের নাটক করছে বিজেপি: কীর্তি আজাদ ◈ ডেটিং নিয়ে দ্বন্দ্ব: তিন কলেজেই মেয়েরা ডেট করে, তাই হয় মারামারি', বললেন সিটি কলেজের ছাত্রীরা ◈ দেশের বাজারে কমল স্বর্ণের দাম, ভরি কত? ◈ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে একাট্টা হচ্ছে দলগুলো ◈ কাতারের আমীরের দেয়া বিশেষ এয়ার এম্বুলেন্সেই দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া ◈ ৩০০ ফিট দিয়ে রামপুরা করিডোর চালুর পরিকল্পনা ডিএনসিসির ◈ মাদক সেবনের অপরা‌ধে ক্রিকে‌টে সাময়িক নিষিদ্ধ দ‌ক্ষিণ আ‌ফ্রিকার রাবাদা

প্রকাশিত : ০৮ জুলাই, ২০২৪, ০৩:১০ রাত
আপডেট : ০১ মে, ২০২৫, ০৯:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সমাজকে সুস্থ রাখতে প্রতিবাদী মানুষ প্রয়োজন

ড. কামরুল হাসান মামুন

ড. কামরুল হাসান মামুন: একজন শিক্ষকের প্রভাব কেবল শ্রেণিকক্ষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। শিক্ষকের প্রভাব শ্রেণিকক্ষের বাইরেও বিস্তৃত। শিক্ষকের মতো শিক্ষক হলে পুরো সমাজটাই শিক্ষকের শ্রেণিকক্ষ। শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষের পাঠের সময় শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট সিলেবাসে মধ্যে থেকে এবং কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে জ্ঞান অর্জনে ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য করে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হলে লব্ধ জ্ঞানকে ছড়িয়ে দেওয়াই একমাত্র কাজ না, একইসাথে লব্ধ জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করাও শিক্ষকের কাজ। সৃষ্ট জ্ঞান আবার নিজের মধ্যে রেখে দিলে এবং মৃত্যুর আগে তা পুড়িয়ে ফেললেও সেই সৃষ্ট জ্ঞানের কোনো মূল্য নাই। জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়ার শ্রেষ্ট মাধ্যম শ্রেণিকক্ষ। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্লাস গবেষকের শ্রেণিকক্ষ পুরো বিশ্বে এক্সটেন্ডেড হয়। এজন্যই আইনস্টাইনের কাছে লিখিত বিখ্যাত চিঠিতে সত্যেন বোস লিখেছিলেন আমি আপনার ছাত্র যদিও সরাসরি শ্রেণিকক্ষের ছাত্র নই। আপনি আপনার লেখা দ্বারা আমাকে অনেককিছু শিখিয়েছেন। সেই হিসাবে আমি আপনার ছাত্র।  
আইনস্টাইন শুধু শ্রেণিকক্ষে ছাত্রদেরই না বা কেবল আর্টিকেল দ্বারা গবেষকদেরই শিক্ষক ছিলেন না। তিনি সমাজের নানা অসঙ্গতির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। মেরি কুরির স্বামী একসিডেন্টে মারা গেলে কুরি তার পদার্থবিদ সহকর্মী লেন্জাভিনের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার সংবাদ স্ক্যান্ডাল আকারে ছড়িয়ে পড়লে আইনস্টাইন সেই সময় পাশে দাঁড়িয়ে মেরি কুরিকে উদ্ধার করেন। এছাড়া আইনস্টাইন সামাজিক অনেক কাজেই জড়িত ছিলেন। যতই বিখ্যাত হচ্ছিলেন ততই বেশি করে পদার্থবিজ্ঞানের বাহিরের বিষয়েও চিন্তার দিগন্ত বাড়তে ছিল। 
সমাজে শিক্ষকদের ভূমিকা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলেই সত্যজিৎ রায় তার হীরক রাজার দেশেতে একজন শিক্ষককে সমাজ পরবর্তেনের রূপকার হিসাবে দেখিয়েছেন। শিক্ষকরা মূল্যবোধের রোলমডেল, নৈতিকতার রোলমডেল যা সমাজের সকল গোষ্ঠীর মধ্যে অনুরণিত হয়। তাদের মিথস্ক্রিয়া এবং নির্দেশিকা ভবিষ্যতের নেতা এবং দায়িত্বশীল নাগরিকদের গঠন করে, যা শেখার, সম্মান এবং সততার সংস্কৃতিকে লালন করে। আমাদের শিক্ষার মান যে দিনদিন কমছে তার প্রমান খোদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদী শিক্ষকের সংখ্যা দ্রুত শূন্যের দিকে যাওয়া। সমাজের উপর একজন শিক্ষকের প্রভাব গভীর, কারণ তারা ব্যক্তির বুদ্ধিবৃত্তিক এবং নৈতিক বিকাশে অবদান রাখে, শেষ পর্যন্ত সম্প্রদায় এবং বিশ্বের ভবিষ্যত গঠন করে। শিক্ষকরা আমাদের শরীরের রক্তের শ্বেত কণিকার মতো, কারণ তারা সমাজের নানা অসঙ্গতির বিরুদ্ধে বলে এবং প্রতিবাদ করে। 
এজন্যই ঢেউ টিনের বিজ্ঞাপনে একজন শিক্ষককে দেখা যায়। সেখানে দেখায় বাড়ি তৈরী করতে কোন টিন ব্যবহার করবে তার পরামর্শও স্কুলের শিক্ষকের কাছ থেকে নেয়। সমাজে একসময় প্রচলিত ছিল বলেই বিজ্ঞাপনে এসেছে। আমরা সকলেই সমাজে বসবাস করি। সামাজিক দায়িত্ব আমরা কেউ অস্বীকার করতে পারি না। বর্তমান বাংলাদেশে অজস্র সমস্যা। কেউ এর প্রতিবাদ না করায় সমস্যা বাড়ছে। সরকারকে চাপ না দিলে সরকার ভালো কাজ করবে না। এই ক্ষেত্রে শিক্ষকদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকার এবং আমলা মিলে শিক্ষকদের এই ভূমিকাকে দিনদিনই কঠিন করে তুলছে। প্রাথমিক স্কুলের এক শিক্ষক কয়েকদিন আগে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। পোস্টটি ছিল এমন প্রাথমিক শিক্ষার মূল চালিকাশক্তি সহকারী শিক্ষকদের ২০০৯ সাল থেকে পদোন্নতি বন্ধ, কেহ কেহ চাকরি জীবন শেষ করে অবসরে।
এই পোস্টের কারণে তাকে সরকারি কর্মচারী বিধিমালা ২০১৮ নামক এক খড়গের ব্যবহার করে তার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার নির্দেশ দেওয়া হয়। অথচ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সালের দৈনিক আজকের কাগজ পত্রিকার একটি রিপোর্টে শিরোনাম ছিল মামলায় পদোন্নতি বঞ্চিত ৩০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক। স্কুলের শিক্ষক মু মাহবুবুর রহমান এটি উল্লেখ করেই ফেইসবুকে একটি স্টেটাস দিয়েছিলেন। মানে কি? অন্যায়ের প্রতিবাদও করা যাবে না? আমার বন্ধুরা যারা কলেজে শিক্ষকতা করে তারা প্রায়ই মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো প্রজ্ঞাপনের কপি পাঠাতো যেখানে নির্দেশনা থাকে কী কী করা যাবে না। এসব মানলে শিক্ষকদের আর কখনো সমাজ পরিবর্তনের সত্যজিতের উদয়ন পন্ডিত হওয়া অসম্ভব। আমলারা নিজেরাতো কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেই না উল্টো অন্যায়ের অংশ হবে উল্টো শিক্ষকদের ভালো কাজও করতে দিবে না। তাহলে এই সমাজ ভালো হবে কীভাবে? দুঃখের বিষয় হলো যেই সমাজকে শিক্ষকরা সুন্দর করতে চায় সেই হওয়ার ফল কিন্তু আমলারাও ভোগ করবে। আজকের সমাজে প্রতিবাদী মানুষের সংখ্যা যেহেতু  এলার্মিংলি কমে গেছে ফলে যারা প্রতিবাদ করে তাদের ভলিউম বেড়ে গেছে। অনেকেই করলে অল্প যেকজন করছে তারা একটু কম করলেও পারতো। মনে রাখতে শরীর সুস্থ রাখার জন্য শরীরের রক্তে ফাইটার শ্বেত কণিকা দরকার। তেমনি সমাজকে সুস্থ রাখতে প্রতিবাদী মানুষ দরকার। লেখক: অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়