শিরোনাম
◈ উড্ডয়নের সময় পড়ে গেল চাকা, ৭‌১ যাত্রী নিয়ে শাহজালালে নিরাপদে অবতরণ ◈ গভীর রাতে সীমান্তে ৭৫০ জনকে পুশইন চেষ্টা, বিজিবি ও জনতার প্রতিরোধে পিছু হটলো বিএসএফ ◈ আর্জেন্টিনা দলে ফিরলেন মেসি, খেলবেন চিলি ও কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে  ◈ রা‌শিয়ার `সম্রাট" বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র, দাম ৩৫ মি‌লিয়ন ডলার ◈ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকি আসলে কতটা? ◈ নয়া কৌশলে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ ! ◈ ভারতের আরও একটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি পাকিস্তানের, চারদিনে উত্তপ্ত সীমান্ত সংঘর্ষ ◈ এবার মমতাজের তৃতীয় স্বামী যে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন! ◈ মিশা সওদাগরকে ঘিরে ভাইরাল মারধরের ভিডিও ভুয়া, হাঁটুর অস্ত্রোপচারের জন্যই হাসপাতালে ◈ কাতারের ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বিমান 'উপহার': ট্রাম্পের বিপক্ষে যাচ্ছেন তার সমর্থকরাও

প্রকাশিত : ০৩ জুন, ২০২৪, ০৪:১৩ সকাল
আপডেট : ০৩ জুন, ২০২৪, ০৪:১৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সাহিত্য পাঠ কি সবার জন্য জরুরি? 

মোজাফ্ফর হোসেন

মোজাফ্ফর হোসেন: সাহিত্য পাঠ কি সবার জন্য জরুরি? মানে কৃষক, মুচি, দিনমজুর, শিক্ষক, চিকিৎসক, আমলা, ব্যবসায়ী (ধনী, মধ্যবিত্ত, গরিব) সবার জন্য?’ প্রশ্নটা সাগর মল্লিক ফেসবুকে করেছেন। আমার উত্তর হচ্ছে, পৃথিবীতে জরুরি বা অপরিহার্য বলে কিছু নেই। হ্যাঁ, বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন, জল, খাবার অপরিহার্য। কিন্তু বেঁচে থাকা কি অপরিহার্য? এইটা মানুষের জন্য দার্শনিক প্রশ্ন। কিন্তু পৃথিবীর কাছে সমগ্র মানুষের বেঁচে থাকা অপরিহার্য কিছু না। সে তুলনায় সাহিত্যপাঠ অনেক গৌন বিষয়। কিন্তু সাহিত্যচর্চা মোটেও গৌন বিষয় না। পাঠ আর চর্চা আলাদা বিষয়। সাহিত্যপাঠের সঙ্গে জড়িত লিখিত সাহিত্য, যা ঐতিহ্য হয়তো পাঁচ হাজার বছরের, তাও মুষ্টিমেয় মানুষের জন্য। কিন্তু লক্ষ লক্ষ বছর আগে (বিবর্তনবাদের মাধ্যমে হোক বা থিওলজি অনুযায়ী হোক) মানুষ নামক প্রাণী অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা হয়েছে সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে। এই লিটারেচার ভাষিক ব্যাপার না, অনুভূতিরও। একজন নিরক্ষর জেলের গহিন গাঙে রাতের আকাশে থালার মতো চাঁদাটা দেখে বউয়ের চোখা মুখটা মনে পড়ে যাওয়ার নাম লিটারেচার। একজন রাখালের হঠাৎ সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের দিকে মুখ করে উদাস হয়ে ওঠার নাম লিটারেচার। জুতো সেলাই করতে বসে মুচির গুনগুন করে ওঠার নাম লিটারেচার। 
এক আদিম শিকারির শিকারের মুহূর্তে কোনো বুনো ফুলের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ অচেতন হওয়ার নাম লিটারেচার। কৃষক যখন একটা সাধারণ ঘটনাকে রঙচড়িয়ে বউকে শোনায়, কিংবা কোনো বাবা ছোট্ট শিশুকে গল্প বলে মিথ্যা বাঘের, উড়ন্ত পরীর, ওইটা লিটারেচার। গ্রামে চুলোচুলি না করে যখন দুই নারী অশ্রাব্য (সিমিলি মেটাফোর দিয়ে) ঝগড়াঝাটি করে, সেটা সাহিত্য। টিএসসির মোড়ে দুজন রিকশাচালক যখন নিজেদের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত একসঙ্গে ঘেঁটে ব্যক্তিগত ইতিহাস তৈরি করে, ওইটাও লিটারেচার। একজন নাগরিক মানুষের ওষ্ঠা খেয়ে অস্পষ্টস্বরে "মাগো" বা ”আল্লাগো" বলে ওঠার নাম লিটারেচার। নাসার দূরবীনে লক্ষ তারকার মধ্যে দৃষ্টি চুবিয়ে শতশত সম্পর্ক ও সংযোগের সেতু কল্পনা করার নাম লিটারেচার। বীমা কর্মকর্তার গ্রেগর সামসার কথা মনে হওয়া, কর্পোরেট বসের সিসিফাস হয়ে ওঠা কিংবা বন্ধুর মৃত্যুসংবাদে শূন্যপদের জন্য শালার নামটি মনে আসার নামও লিটারেচার। 
কাজেই সাহিত্যপাঠ কি সবার জন্য অপরিহার্য? আমার উত্তর: না। আর সাহিত্যচর্চা? আমার উত্তর: মানুষ হতে হলে তার একটা গল্প থাকতে হবে, চিনুয়া আচেবে বলেছিলেন। কথাটা আমি অন্যভাবে বলতে চাই: সাহিত্যচর্চা মানুষের মানবিক অস্তিত্বেরই অংশ। আমরা মানবিকতা বলতে বুঝি, সমস্ত ভালো গুণাবলি। আর পাশবিকতাকে হিংস্রতা ও বদগুণাবলির সঙ্গে এট্রিবিউট করি। পাশবিকতা এসেছে পশু বা অন্যান্য প্রাণী থেকে। পশুরা কি জীবনকে ভালোবাসে না? তারা কি শুধু হিংস্রতা প্রকাশ করে? মানুষও জৈবিক কারণে আর পাঁচটা প্রাণীর মতোই হিংস্রতা প্রকাশ করতে পারে। এই আচরণটা পাশবিক না, প্রাণবিক বা জৈবিক। প্রাণীকুলের কমন বিষয় এটা। আনকমন হলো মানবিকতা। মানবিকতা হলো মানুষের সৃষ্টিশীল চেতনা, লিটারেচার তৈরি করার সক্ষমতা। ইভেচুয়ালি, যে প্রশ্নটা জেগে ওঠে, লিটারেচার কি মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য? উত্তর হলো, না। কিন্তু মানুষ হওয়ার জন্য অপরিহার্য। 
আমরা গল্প বলি এই জন্য না গল্পগুলো সুন্দর। আমরা গল্প বলি কারণ মানুষের গল্প বানানোর এক ইউনিক ক্ষমতা রয়েছে। এই কারণে শ্রোতা না পেলেও আমরা গল্প তৈরি করি। আমাদের আবেগ আছে, প্রকাশের ভাষাও আছে, ভার্বাল কিংবা ননভার্বাল। (ডেড পোয়েটস স্যোসাইটিতে নায়ক যেমনটি বলছেন) আমরা চাষাবাদ করি, ব্যাবসা করি, চিকিৎসক হই, প্রকৌশলী হই, কারণ এগুলো আমাদের পেশা। জীবনের চাহিদা মেটানোর জন্য এসব পেশার প্রয়োজন আছে। কিন্তু এগুলো হব বলে আমরা বেঁচে থাকি না। আমরা বেঁচে থাকি ভালোবাসার জন্য, সৌন্দর্যচেতনার জন্য, রোমান্স ও বিরহবোধের জন্য, নিজেদের অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎকে পুনঃপুন বিনির্মাণের জন্য। আমরা বেঁচে থাকি একটা গল্পের জন্য, একটা কবিতার জন্য। খুব কম মানুষই সেটা লেখে (তাদের আমরা লেখক বলি), কিন্তু প্রত্যেকে সেটা তার জীবন দিয়ে রচনা করে। যদি, বাই এনি চান্স, কোনো মানুষ সেটা করতে সক্ষম না হন, তাহলে সে মানবিক প্রাণী না, মানুষরূপী প্রাণবিক বা জৈবিক প্রাণী। ভালো খারাপের প্রশ্ন এটা না, মানবিক বলেই কেউ শ্রেষ্ঠ প্রাণী হয়ে যায় না। এটা জাস্ট প্রাণীজগতে মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য।  বাঘ-হাতি মানুষের চেয়ে শক্তিশালী; পাখি উড়তে পারে, মানুষ পারে না; গিরগিটি ত্বকের রঙ বদলাতে পারে, মানুষ পারে না; পিঁপড়ে অতি ক্ষুদ্র একটা গর্ত দিয়ে চলাচল করতে পারে, মানুষ পারে না, চিতার গতিতে মানুষ দৌড়াতে পারে না, শতচিকিৎসার পর বৃক্ষের মতো দীর্ঘজীবন বাঁচতে পারে না মানুষ। এই পারা, না-পারাই প্রাণীজগতে ডাইভার্সিটি। বিচ্ছিন্নভাবে অক্ষমতা নয়, সমষ্টিগতভাবে সৃষ্টির সম্পূর্ণতা। এটাই পৃথিবীর লিটারেচার। লেখক: কথাসাহিত্যিক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়