মোজাফ্ফর হোসেন: চারিদিকে লিচুগাছ। গাছগুলোর মধ্যে দোতলা একটা বাড়ি। এদিকটাই সব সময় ওৎ পেতে থাকে অন্ধকার। ওপরে একা এক কিশোর বসে থাকে, নিচে কিশোরের মা-বাবা আর ছোটোভাই। মা মারা যাবেন কয়েকদিনের মধ্যে, কিশোর জানে, মা একদিন অনেক রাতে ডেকে নিয়ে জানিয়ে দিয়েছে। মায়ের সিন্দুকের গোপন চাবি এখন কিশোরের কাছে। একটা চাবির ভার এতটা হয় কী করে কিশোর ভেবে পায় না। রাত গভীর হয়, নিশ্চুপ বাড়িটার কোথাও কোনো আলো জ্বলে না। মায়ের চাপা গোঙানির শব্দ আসে। আর কষ্ট হয় না কিশোরের। মনে হয় একটা অবশ অনুভূতিহীন শরীরের মধ্যে আটকে গেছে ও। কষ্ট সহ্য করতে না পেরে মা চিৎকার করে।
কিশোরের একবার মনে হয়: মরে যাক, তবু কষ্ট না পাক। কিশোর প্রার্থনা করে, পৃথিবীতে আর কখনো যেন কোনো রাত নেমে না আসে। রাত আরো ঘন হতে হতে জমাট অন্ধকার কেটে যেতে থাকে। ঘুমন্ত পৃথিবী তখন পাশ ফিরে শোয়। মা ক্লান্ত হয়ে পড়ে আছে বিছানায়। আর গোঙানির শব্দ আসে না। পৃথিবীতে আর কোথাও কোনো শব্দ নেই। এমন ভ্যাকুয়াম বলয়ে একাকী কিশোরের মনটা আনচান করে ওঠে। সমস্ত শরীর পুড়তে থাকে আগুনে। মাথার ভেতর কারা যেন ফুটবল খেলে। কিশোর মাথা থেকে বালিশটা সরিয়ে বিছানায় কান পেতে বোঝার চেষ্টা করে, মা কি এখনো জেগে আছে?...বেঁচে আছে তো? কিশোরের একবার মনে হয়: কষ্ট পাক তবু বেঁচে থাকুক। আজ, এতো বছর পরও, বালিশটা সরিয়ে বিছানাই কান পেতে সেই নিঃশ্বাসের শব্দ খুঁজি। লেখক: কথাসাহিত্যিক
আপনার মতামত লিখুন :