শিরোনাম

প্রকাশিত : ২৩ মে, ২০২৪, ০৪:২০ সকাল
আপডেট : ২৩ মে, ২০২৪, ০৪:২০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আর কিছু না হোক, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র কম দামে বিশ্বসেরা ক্লাসিকগুলো পড়ার যে সুযোগ করে দিয়েছে 

শারফিন শাহ্: গত বছর সম্ভবত ফেসবুকবাসী আবিষ্কার করেছিল, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে কোরআন শরিফ নেই, অথচ মহাভারত, রামায়ণ আছে। পরে বের হলো যে, কোরআন শরিফ সুন্দরভাবেই বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র লাইব্রেরির ধর্মীয় বইয়ের সেকশনে রাখা আছে। এবার অধ্যাপক আসিফ নজরুল বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ঘুরে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন যে, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র তাঁর দুটি বই পিএইচডির গল্প এবং সংবিধান বিতর্ক লাইব্রেরিতে রাখেনি। অথচ নীচে একাধিক পাঠক মন্তব্য করেছেন যে, বই দুটি আছে এবং তারা পড়ে ফেলেছেন। আসিফ নজরুল পুরো লাইব্রেরি না ঘুরে শুধু ম্যাগাজিন সেকশনের একটি ছবি তুলেছেন, যেখানে আনন্দলোক, আনন্দবাজার পত্রিকা, আনন্দমেলা গুছিয়ে রাখা আছে এবং তাঁর মতে, এখানে শুধুই ভারতীয় রুচিহীন ম্যাগাজিন দিয়ে ভরা। অথচ পাশেই বাংলা একাডেমির উত্তরাধিকার, প্রথম আলোর বিজ্ঞানচিন্তা, কিশোর আলো, নতুন দিগন্ত রাখা আছে। যদিও ভালো কিছু লিটলম্যাগ ওখানে নেই, তবু পাঠকের চাহিদার তুলনায় বেশ ভালো কালেকশন। কিন্তু আসিফ নজরুলের এসব চোখে পড়েনি। তিনি সম্ভবত আনন্দলোক পূজাবার্ষিকীর প্রচ্ছদে দীপিকার গ্ল্যামারাস ছবিটি দেখেই রুচির বিচার করে নিয়েছেন। আনন্দলোকের ওই সংখ্যাটি আমার সংগ্রহে রয়েছে। খুবই চমৎকার কিছু লেখা আছে এতে। 
ইন্দ্রনীল স্যান্যালের ইউক্রেনের দিনগুলোতে প্রেম নামে অসাধারণ একটি রচনাও আছে, যা ইউক্রেন যুদ্ধের পটভূমিতে লেখা। আসিফ নজরুল তাঁর জীবনে এমন লেখা লিখেছেন বলে মনে হয় না। তাঁর যে কয়টা বই আমি পড়েছি  কোনোটিই মনে ধরেনি। এমনকী যে 'পিএইচডির গল্প-এর কথা তিনি লিখেছেন তার চেয়ে হুমায়ূন আহমেদের হোটেল গ্রেভার ইন এবং মুহম্মদ জাফর ইকবালের আমেরিকা আমেরিকা কিংবা রাগীব হাসানের আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা আরও বেশি মুগ্ধকর। তিনি একটি সায়েন্স ফিকশনও লিখেছেন। খুব সম্ভব সেটা মুহম্মদ জাফর ইকবালকে লক্ষ্য বস্তু হিসেবে বিবেচনা করেই। কিন্তু সেটাও একটা অখাদ্য হয়েছে। যে আনন্দলোকের প্রচ্ছদ দেখে তিনি লেখার মান বিবেচনা করলেন, এ নিয়ে তাঁর কাছে আমার প্রশ্ন পপ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে কি নয়া দিগন্ত পত্রিকার ঈদসংখ্যার মতো হিজাব পরা রূপসীর ছবি থাকবে? আনন্দলোক সেই ম্যাগাজিন যা যুগের পর যুগ ধরে বহু লেখক তৈরি করে আসছে। চলচ্চিত্র নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ লেখা, সমালোচনা, চলচ্চিত্র তারকাদের জীবনী প্রভৃতি আনন্দলোক যত্ম সহকারে প্রকাশ করে। 

আমাদের এখানে একসময় চিত্রালী, বিচিত্রাও এসব করতো। কিন্তু এখন এসব ম্যাগাজিন বিলুপ্ত। তো বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ভারতীয় ম্যাগাজিন রাখবে না তো কী রাখবে? বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র নিয়ে সমালোচনার বহু জায়গা আছে। সায়ীদ স্যার সবার সমালোচনা মাথা পেতে নেন। তাঁর মতো রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিকভাবে সচেতন মানুষ অন্ততপক্ষে আসিফ নজরুলরা নন। সায়ীদ স্যার নিজেই বলেন, আমার স্বপ্ন ব্যর্থই হয়েছে। কিন্তু এই পৃথিবীতেই বা সফল কে? আমাকে দেখাও তো সবচেয়ে সফল হয়ে মারা গেছেন এমন মানুষ পারবে না। সাফল্য একটা ক্ষুদ্র জিনিস। এটার আয়ু খুবই কম। আমি যেটা চেয়েছি সেটা হলো একটি স্বপ্ন জিইয়ে রাখা। আমি চাই সেই চাওয়াটা আমার পরও কেউ ধরে রাখুক! এমন একজন সহিষ্ণু মানুষ আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক মহলে বিরল। আর কিছু না হোক, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র কম দামে বিশ্বসেরা ক্লাসিকগুলো পড়ার যে সুযোগ করে দিয়েছে, তার জন্যই আমি এই প্রতিষ্ঠানকে আমৃত্যু মনে রাখব। লেখক: গবেষক ও প্রাবন্ধিক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়