শিরোনাম

প্রকাশিত : ২৩ মে, ২০২৪, ০৩:১৮ রাত
আপডেট : ২৩ মে, ২০২৪, ০৩:১৮ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আমার শিক্ষক বিল্বমঙ্গল ভট্টাচার্য্য

প্রবীর বিকাশ সরকার

প্রবীর বিকাশ সরকার: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে একসময় কিংবদন্তিসম শিক্ষকরা ছিলেন, যাদের মুখ দেখলেই শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে যেত। যেমন তাদের জ্ঞান-ধ্যান, তেমনি অভিভাবকীয় গুরুগম্ভীর আচার-আচরণ। তাদের প্রিয় শিক্ষাপ্রার্থীদের কাছে আজও সশ্রদ্ধ অবিস্মরণীয়। পৃথিবীর যেকোনো দেশে, যেকোনো সমাজে একজন সত্যিকার শিক্ষক চিরকালই শিক্ষক, যেমন একজন নিরপেক্ষ বিচারক। আমার যৌবনের ঊষালগ্ন কেটেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শাখায়। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি প্রবল আকর্ষণ অনুভব করেছিলাম, তেমনি একজন শিক্ষকের কাছে যিনি ছিলেন কলেজের শ্রণিকক্ষেই শুধু নয়, পথে-ঘাটে, বাজারে, খেলার মাঠে, গ্রন্থের দোকানে, পাঠাগারে, চায়ের দোকানে, হাসপাতালে, ট্রেন-বাসে, জন্মদিন, বিয়ের অনুষ্ঠানে, শোকানুষ্ঠানে সর্বত্র সজাগ এবং কড়া অভিভাবকের ভূমিকায় সর্বদা সরব আর স্নেহশীল। তার দৃষ্টি থেকে পালাবার উপায় ছিলো না। 

অজস্র মানুষের ভিড়ে যার মাথা সবচেয়ে উঁচু তিনিই শিক্ষক। দেশ-বিদেশে খ্যাত ভিক্টোরিয়া কলেজের কিংবদন্তিতুল্য আমার বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় বিল্বমঙ্গল ভট্টাচার্য্য স্যার। বাংলা ভাষা এতো মধুর হতে পারে! বাংলা সাহিত্য এতো সংবেদনশীল কেন, স্যার না শেখালে হয়তো কোনোদিন অনুধাবন করতে পারতাম কিনা সন্দেহ থেকেই যায়। জানুয়ারি মাসে এক ঝটিকা সফরে কুমিল্লায় গিয়ে প্রাক্তন শিক্ষাগুরুর একদা বসতবাড়ির খোঁজে গিয়েছিলাম প্রফেসর পাড়ায়। বহু বছরের ব্যবধানে চিনতেই পারছিলাম না আ-কৈশোর চেনা পাড়াটি। কোথায় বাস করতেন বিল্বমঙ্গল স্যার, তার একটি চিহ্নও নেই। অনেক খুঁজতে খুঁজতে একজনকে পেলাম যিনি স্যারের নাম জানতেন, এপাড়ায় একসময় ছিলেন, ফলে জায়গাটি দেখালেন। 

আবর্জনার খোলা ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলাম। সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে স্যার, তার দুপুত্র সুকান্ত চট্টোপাধ্যায় এবং সুমন্ত চট্টোপাধ্যায়কে স্মরণ করলাম। তারা আজ দেশান্তরি। গাইডের কাছে শুনলাম, মৃত্যুর প্রাক্কালে স্যার নাকি জায়গাটি ভিক্টোরিয়া কলেজকে দান করে দিয়েছিলেন। দানের যে কী দুর্গতি হয় বাঙালি সমাজে, তার জ্বলন্ত উদাহরণ বুঝি এই জায়গাটি। মর্মাহত হলাম। জীবদ্দশায় বাঙালি সমাজে এটাই বুঝতে পারছি যে, যেখানে রাজনীতি কলুষিত যেখানে শিক্ষা ও শিক্ষক চরম অবহেলিত, উপেক্ষিত এবং মূল্যহীন। মানুষের বাহ্যিক চেহারা তৈলাক্ত, চকচকে। কিন্তু ভেতরে গোবরে পোকার ডিবি। গোবরে পোকা গোয়াল ঘরেই থাকে। তার কাছে উত্তরণের আলো পৌঁছাবে সেই শিক্ষক কোথায়? Ñজাপান প্রবাসী লেখক ও গবেষক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়