শিরোনাম

প্রকাশিত : ২৩ মে, ২০২৪, ০৩:১৭ রাত
আপডেট : ২৩ মে, ২০২৪, ০৩:১৭ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ডা. বাবর আলী আমাকে নতুন করে বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তি সম্প্রদায়ের মানসপট ব্যবচ্ছেদ করতে ভাবিয়েছে 

মিরাজুল ইসলাম

মিরাজুল ইসলাম: ডা. বাবর আলীর এভারেস্ট-লোৎসে বিজয় ঘিরে অনেক কথা মনে জমা হচ্ছিলো। এক্ষেত্রে বিজয় শব্দটি আমার চোখে যথার্থ। জানি না বাংলাদেশের চিকিৎসকদের সংগঠন বিএমএ ডা. বাবর আলীকে কোনো সংবর্ধনা দেবার আয়োজন করেছে কিনা। অথবা রাষ্ট্রপক্ষ বিশেষ বিবৃতি দিয়ে তার কৃতিত্ব মহিমান্বিত করবে কিনা। সম্ভবত করেনি, হয়তো করবে না। অথবা চাপে পড়ে করলেও করতে পারে। বাবর আলীর ‘ডাবল-হেডার’ (এভারেস্ট + লোৎসে) অভিযান নিয়ে কোনো কোনো মহলের দায়সারা গোছের অভিনন্দন দেখে বুঝে নিলাম বাংলাদেশিদের হিংসা প্রবৃত্তির প্রবৃদ্ধির হার আশংকাজনক। ক্রমশ এদেশ যেন নিম্ন রুচির টিকটকার, মানসিকভাবে অসুস্থ সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার এবং ক্ষমতার কাছে নতজানু অক্ষম বুদ্ধিজীবীদের হাতে জিম্মি হতে যাচ্ছে। 

তবে সবকিছু ছাপিয়ে ডা. বাবর আলী পৌরাণিক হারকিউলিসের মতো যে অসাধ্য সাধন করেছেন তা নিয়ে কতিপয় বুদ্ধিজীবীদের সাথে তাল মিলিয়ে কিছু আমজনতার অবস্থান দেখে মনে হয়েছে বাংলাদেশের বৃহত্তর চিকিৎসক সমাজ দায়ী এমন মানসিকতার পেছনে। কারণটা ব্যাখ্যা করা দরকার। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশের চিকিৎসক সমাজ একটি কূপমণ্ডুক সম্প্রদায়। পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করতে পারাটাই যাদের জীবনের মাউন্ট এভারেস্ট। তারা নিজের পেশার গণ্ডির বাইরে যেতে অস্বস্তি এবং মানসিকভাবে অসুস্থবোধ করেন আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের কারনে। হাতে গোনা কয়েকজন চিকিৎসক আছেন যারা নিজের পেশাগত দায়িত্ব বজায় রেখে কিংবা পেশার গণ্ডির বাইরে বাইরের দুনিয়ায় কী হচ্ছে তার খবর রাখেন। 

যদিও সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে আজকাল চোখ বন্ধ রাখার উপায় নেই, কিন্তু স্বেচ্ছায় কেউ শখ করে অবসর সময়ে নান্দনিক কিংবা বৈচিত্রময় জগতে পা বাড়ান না। একটা চটচলদি সমীক্ষা নিলে দেখা যাবে শতকরা আশি শতাংশ চিকিৎসক জানেন না কতজন বাংলাদেশি এভারেস্ট চূড়ায় আরোহন করেছেন এবং তাদের পরিচয়। গুগল করে তারা সহজে জবাব দিতে পারবেন কিন্তু না দেখে পারবেন না। তখন তারা বলবেন, এটা তাদের জানার কথা না। কারণ তাদের চোখে এসব ‘আউটনলেজ’ নিয়ে আলাপ একজন ব্যস্ত চিকিৎসকের পক্ষে সিলেবাস বহির্ভূত। আরো হতাশার বিষয়, বাংলাদেশে কিছু আমজনতা ডাক্তার বলতেই বোঝে হাসপাতালে কমিশন খাওয়া সাদা পোশাক পরা মানুষদের। উপজেলার একজন ইউএনও থেকে যার সামাজিক অবস্থান নীচে। তাই ডা. বাবর আলীর চিকিৎসক পরিচয় অনেকে অবিশ্বাস-দ্বন্দ্বের চোখে দেখে। 

শুধু চিকিৎসক পেশা নয়, মোটামুটি সব পেশাতেই ‘নির্দিষ্ট গণ্ডি’তে আবদ্ধ থেকে জ্ঞান অন্বেষণ চর্চা প্রচলিত। কিন্তু নির্দিষ্ট করে চিকিৎসকদের ‘কূপমণ্ডুকতা’ নিয়ে আমার আজকের আলাপ। একজন ডা. বাবর আলীর মতো মানুষদের অনুধাবন করা যাদের পক্ষে আপাত সম্ভব নয়। তাদের দৃষ্টিতে বাবর আলীর মতো পাস করা ডাক্তারদের জীবনের চূড়ান্ত সাফল্য একটা পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন কিংবা কোনো কর্পোরেট হাসপাতালের বিজ্ঞাপনের লিফলেটে থাকাটাই বাস্তবসম্মত। ডা. বাবর আলী আমাকে নতুন করে বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তি সম্প্রদায়ের মানসপট ব্যবচ্ছেদ করতে ভাবিয়েছে। ইচ্ছে আছে এই বিষয় নিয়ে আরো কিছু বলতে।  লেখক ও চিকিৎসক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়