শিরোনাম
◈ ঐক্যের ডাকে প্রমাণ হয়েছে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিই বিএনপি’র দোসর: ওবায়দুল কাদের ◈ গাজায় যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে রোমে ফের আলোচনা শুরু হচ্ছে রোববার ◈ বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করায় পাকিস্তানে কন্যার পা কেটে নিলেন বাবা ◈ দ্রুত গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি করতে নেতানিয়াহুকে বাইডেনের তাগাদা ◈ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ ও সেতু ভবন পরিদর্শনে প্রধানমন্ত্রী ◈ চলমান পরিস্থিতিতে তৈরি পোশাক খাতে আস্থার সংকটে ক্রেতারা ◈ শ্বেতাঙ্গ নারীদের জুম বৈঠকে কমলার জন্য ২০ লাখ ডলার সংগ্রহ ◈ এইচএসসির উত্তরপত্র আপাতত বোর্ডে না পাঠানোর নির্দেশ ◈ হত্যা চেষ্টার স্থলে ফিরে যাওয়ার সংকল্প ট্রাম্পের  ◈ দেশকে পঙ্গু করে ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করতে এ সহিংসতা: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১৫ মে, ২০২৪, ০২:২৫ রাত
আপডেট : ১৫ মে, ২০২৪, ০২:২৫ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সর্বমানবের সম্মিলিত সংগীত উৎসবে মুখরিত হোক পৃথিবী 

স্বকৃত নোমান

স্বকৃত নোমান: শাহ আবদুল করিমের গান শুনছিলাম, ‘কোন সাগরে খেলতেছ লাই ভাবতেছি তাই অন্তরে/ মুর্শিদ ধন হে...।’ সুরে মগ্ন ছিলাম। এমন সময় ফেসবুকে ভেসে উঠল মরমী বক্তা মুফতি গিয়াস উদ্দিন তাহেরির একখানা সুন্দর ছবি। নিচে আমি কমেন্ট করলাম, ‘নিরন্তর শুভ কামনা।’ অমনি তারা, এন্টি-তাহেরি গ্রুপ, সেই পরাজিত সৈনিকেরা, যাদের ইতিহাস কেবলই পরাজয়ের ইতিহাস, আমাকে এসে ধুয়ে দিতে লাগল। শাহবাগী, কুলাঙ্গার, নাস্তিক, ভণ্ড, কুত্তাসাহিত্যিক, চোর, বাটপাড়— এরকম মহাপবিত্র সব গালি। কেউ কেউ তাহেরি সাহবেকও দিল গালি। বিদ্রুপের বাণে বিদ্ধ করতে লাগল তাঁকে। 

তারা তো আমার কোনো পোস্টে কমেন্ট করতে পারে না। তাই একদল ঝাঁপিয়ে পড়ল ইনবক্সে। গালি বর্ষণ করতে লাগল শ্রাবণের ধারার মতো। কেউ কেউ বজ্রপাতও ঘটাতে লাগল। আমার অপরাধ, কেন আমি তাহরি সাহেবকে শুভ কামনা জানালাম। তাদের দৃষ্টিতে তাহেরি সাহেব একজন ভণ্ড। একমাত্র তারাই সৎ, তারাই বিশুদ্ধ। তারা ছাড়া জগতের সবাই খারাপ। এর আগে ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা পোস্টে কী যেন একটা কমেন্ট করেছিলাম। দুদিন পর দেখি সেখানে আমাকে হুইল ওয়াশিং পাউডার দিয়ে ধোয়া চলছে। সেই একই গালি। ‘নাস্তিক’ গালিটা খুব কমন। যেন ওরা আস্তিকতার পক্ষের এডভোকেট। যেন তারা নিশ্চিত আমি যে একজন নাস্তিক।

এবার একটা গল্প শোনাই। বুদ্ধ ও তার এক শিষ্যের গল্প। বুদ্ধের তখন বয়স হয়েছে। তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করল এক ধূর্ত লোক। ভেবেছিল, কয়েক বছর পরে তো বুদ্ধ মারা যাবেন। এই ফাঁকে তার কাছ থেকে অলৌকিক ক্রিয়াকলাপ কিছু শিখেটিখে নিতে হবে। তাতে বুড়ার মৃত্যুর পর নিজেকে বুদ্ধের অবতার বলে ঘোষণা করা যাবে। একবার লোকে অবতার ভাবতে শুরু করলে তাকে আর পায় কে। সারা জীবন পায়ের ওপর পা তুলে কাটিয়ে দিতে পারবে। পরিকল্পনা মোতাবেক সে শুরু করল কাজ। সারাদিন বুদ্ধের সেবাযত্ন করে। গুরুকে দেখায় সে কত নিবেদিত একজন শিষ্য। কিন্তু সিদ্ধার্থ তো সিদ্ধপুরুষ। সহজেই ধরে ফেললেন শিষ্যের ধূর্ততা। কিন্তু কিছু বলেন না। বছরের পর বছর পার হয়ে যায়, অথচ শিষ্যের অলৌকিক ক্রিয়াকলাপ কিছুই লাভ হয় না। সে বুঝে গেল বুদ্ধের কাছ থেকে যে কিছুই পাওয়া যাবে না। সে গেল ক্ষেপে। সিদ্ধান্ত নিল প্রতিশোধ নেওয়ার। 

একদিন সকালবেলা। বুদ্ধ তখন ধ্যান করছিলেন। ধূর্ত শিষ্য তার কাছে গিয়ে শুরু করল গালাগাল, ‘বেটা বুড়া, এতদিন তোর কাছে থাকলাম, অথচ কিছুই শিখতে পারলাম না। তুই বেটা আস্ত ভণ্ড, মহা প্রতারক।’ বুদ্ধ নির্বিকার। গালাগাল করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেল শিষ্য। দেওয়ার মতা আর গালি খুঁজে পাচ্ছিল না। এবার মুখ খুললেন বুদ্ধ। শান্ত গলায় বললেন, ‘আমি কি তোমাকে কোনো প্রশ্ন করতে পারি?’ শিষ্যের মেজাজ তো তখন চড়া। খেঁকিয়ে বলল, ‘কী বলবেন জলদি বলেন।’ বুদ্ধ বললেন, ‘ধরো তোমার কিছু জিনিস তুমি কাউকে দিতে চাচ্ছ, কিন্তু যাকে দিতে যাচ্ছ সে নিচ্ছে না। জিনিসটা তবে কার কাছে থাকল?’ ক্ষ্যাপা শিষ্য জবাব দিল, ‘এতদিন ধরে ধ্যান-জ্ঞান করছেন, অথচ এই সামান্য কথাটা জানেন না? আমার জিনিস আমি যাকে দিতে চাই সে না নিলে জিনিসটা তো আমারই থাকবে।’ বুদ্ধ হেসে বললেন, তাহলে এতক্ষণ তুমি আমাকে যেসব গালি উপহার দিয়েছ, তার কিছুই আমি নিলাম না। গল্প শেষ হলো। সর্বমানবের সম্মিলিত সংগীত উৎসবে মুখরিত হোক পৃথিবী। শত জ্যোৎস্নার মাধুরী। ১৪.০৫.২০২৪। লেখক: কথাসাহিত্যিক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়