আহসান হাবিব: বিশেষ সম্প্রদায়ের উন্নতি বা মঙ্গল বা মন বলতে কী বুঝায়, আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে ঢুকে না। চিন্তাটাই আগাগোড়া সাম্প্রদায়িক মনে হয়। কেন? আসলে উন্নতি বা মঙ্গল কি কোনো সম্প্রদায়ের ঘটে? একদম না। ঘটে শ্রেণির। সামন্তবাদী সমাজে কৃষকের কী উন্নতি হয়? উন্নতি হয় সামন্ত প্রভুর। পুঁজিবাদী সমাজে কি শ্রমিকের কোনো উন্নতি হয়? ক্ষুদে মালিকদের কোনো উন্নতি হয়? না, উন্নতি হয় পুঁজিপতিদের। এখানে বিশেষ সম্প্রদায় হিন্দু, মুসলিম বা খৃস্টানের বেলায় উন্নতি বা মঙ্গলের বিষয় আসে কোথা থেকে?
[২] সেই যে আহমদ ছফা ‘বাঙালি মুসলমানের মন’ লিখে সাম্প্রদায়িকতার খাতা খুললেন, সেই খাতা আর বন্ধ হলো না। বাঙালি আবার মুসলমান। এই দুটো কি একঘাটে কখনো জল খায়? বাঙালি আবার হিন্দু- এই দুটো কি কখনো একঘাটে জল খায়? খায় না। তাহলে এই সম্প্রদায় নিয়ে এমন টানাটানি কেন? আর কিছু নয়, এটা সাম্প্রদায়িকতা। আসলে এই কাজগুলি করে রাজনীতিবিদরা। কারণ এতে তাদের রাজনীতির সুবিধা হয়। তারা যত বিভেদ তৈরি করতে পারবে, তত তাদের লাভ। ইংরেজরা এটাই করেছিলো, ডিভাইড এবং রুল।
স্বাধীনতার পরও কেউ এই বিভেদ থেকে বেরুলো না। তাদের লাভটা না হয় বোঝা গেলো, কিন্তু সাহিত্যিকরা কেন? সাহিত্যিকের কাজ হলো মানুষ নিয়ে, কোন সম্প্রদায় দিয়ে নয়। তাদের শ্রেণিচরিত্র থাকবে কিন্তু সাম্প্রদায়িক চরিত্র থাকবে কেন? তারা কেন কোন সম্প্রদায়ের মঙ্গলের জন্য সুপারিশ করবে? তারা সমগ্র মানবজাতির কথা বলবে। পুঁজিবাদ যে শোষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ, সাহিত্যিকরা তার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। সম্প্রদায় একটি বিভেদমূলক বৈশিষ্ট্য। লেখকরা কেন এই ফাঁদে পা দেবে? অথচ এই উপমহাদেশে এটাই চলছে দেদারসে..লে হালুয়া। লেখক: ঔপন্যাসিক