শিরোনাম
◈ খান ইউনুসে চলছে প্রচণ্ড লড়াই : আটকা পড়েছে প্রায় ২ লাখ ফিলিস্তিনি ◈ দেশের ৮ জেলায় দুপুরের মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা ◈ ভালোবাসার শহর প্যারিসে বৃষ্টিভেজা রাতে শুরু হলো অলিম্পিকস ২০২৪ ◈ সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৩তম জন্মবার্ষিকী আজ ◈ কারফিউ আরো শিথিলের সিদ্ধান্ত হবে আজ, জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ একদফা দাবিতে জাতীয় ঐক্যের ডাক বিএনপির ◈ শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে শ্রীলঙ্কা  ◈ ডিবি হেফাজতে কোটা আন্দোলনের ৩ সমন্বয়ক ◈ কোটা আন্দোলন: ঢামেকে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীসহ তিন জনের মৃত্যু ◈ হেলিকপ্টার দিয়ে মানুষ হত্যার জবাব জনগণ একদিন আদায় করে নেবে: মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত : ০৪ মার্চ, ২০২৪, ০১:৫৪ রাত
আপডেট : ০৪ মার্চ, ২০২৪, ০১:৫৪ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নীতি নির্ধারকেরা চাইলে দেশের প্রতিটি সমস্যার সমাধান সম্ভব 

শরিফুল হাসান

শরিফুল হাসান: বেইলি রোডে যে ভবনে আগুন লেগে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, সেই গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের মালিক বা এই ভবনের ডেভেলপার কারা? কারা এই ভবনের নিয়ন্ত্রক? গত তিনদিনে গণমাধ্যমে তাঁদের নাম খুঁজে পাইনি। কী জাদুবলে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে তারা অচল করে রাখলেন জানার খুব আগ্রহ আমার। এই যে দেখেন ১৮ জন নারী, ৮ শিশুসহ ৪৬ জন মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যু, অথচ তাদের কোনো অপরাধ ছিল না। অপরাধ যদি কারো থাকে সেটা এই ভবনের নিয়ন্ত্রকরা আর তার চেয়েও বড় দায় এই রাষ্ট্রের নানা দপ্তরের যাদের ঘুম ভাঙে না। আপনারা জেনে থাকবেন একটা বাণিজ্যিক ভবন পরিচালনার জন্য সরকারের আটটা সংস্থার অনুমোদন লাগে। আচ্ছা, এই আটটি সংস্থা কী করে তাদের অনুমোদন দিলো? আর না দিলে কীভাবে চলছিল? আর এ কারণেই আমি সবসময় বলি এগুলা হত্যাকাণ্ড। 

এই যে দেখেন এই শহরের সব ভবনের অনুমোদন দেওয়ার অভিভাবক রাজউক এখন বলছে, বেইলি রোডের ওই ভবনে রেস্তোরাঁ করার অনুমোদন ছিল না। আচ্ছা, যে ভবনে একটা রেস্তোরাঁ করারও অনুমোদন ছিলো না সেই ভবনে কী করে আটটি রেস্তোরাঁ, একটি জুস বার ও একটি চা-কফি বিক্রির দোকান চলতো? কেউ কেন এতোদিন দেখলো না? রাজউক থেকে বেইলি রোড কতোদূর? ওদিকে  ফায়ার সার্ভিস বলেছ, ভবনটিতে অগ্নিনিরাপত্তার কোন ব্যবস্থা ছিল না। ঝুঁকিপূর্ণ জানিয়ে ভবন কর্তৃপক্ষকে তিনবার চিঠি দেওয়া হয়েছিল। আচ্ছা, অগ্নিনিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা ছিল না জানার পরও ওই রেস্তোরাঁগুলো কীভাবে চলছিল? কেন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কেন গণমাধ্যমকে জানানো হয়নি? কেন ওই ভবনের সামনে নোটিশ ঝোলানো হয়নি যে এটি অগ্নি নিরাপদ নয়? এগুলো কেন করা হয়নি? আচ্ছা, এই ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব কার? 

এজন্যই বলছি, ভবনের মালিকের নামটা জানতে চাই যে কী এতো প্রভাব যে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে তিনি ঘুম পাড়িয়ে রাখলেন। অবশ্য শুধু এই ঘটনা নয় কী এক জাদুবলে প্রতিবার দুর্ঘটনার পরেই এগুলো জানা যায়, আর তার আগে সবাই ঘুমায়। অনেকবার লিখেছি, এই দেশে বাস বা লঞ্চ দুর্ঘটনায় অনেক মানুষের মৃত্যুর পর জানা যায় ফিটনেস নেই। সুন্নতে খতনা করাতে গিয়ে সন্তানের মৃত্যুর পর জানা যায় হাসপাতালের অনুমোদন নেই। আগুন লাগার পর জানা যায় ভবনের অনুমোদন নেই। তার আগে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কারো ঘুম ভাঙে না। দারুণ এক জাদু। রাজউক বলেন, বিআরটিএ বলেন, ওয়াসা বলেন, তিতাস বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেন কতো যে সরকারি সংস্থা আর মন্ত্রনালয় আছে। কিন্তু প্রত্যেকটা সরকারি সেবা সংস্থার সবাই যেন ঘুমায়। এরপর সেখানে গড়ে ওঠে দুর্নীতির পাহাড়।  
আচ্ছা, এই যে অনুমোদনহীন ভবনে ৪৬ জন মানুষ আগুনে পুড়ে মরলো এই ঘটনার দায়ে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা কেন জবাবদিহিতায় আওতায় আসবে না? ৪৬ জন মানুষ হত্যার দায়ে তাদের কোন বিচার হবে না? আচ্ছা এর আগে বনানীর ভবন থেকে শুরু করে প্রতিটি আগুনের ঘটনার পর যেসব ব্যবস্থা নেওয়ার কথা কেন হয়নি? এর দায় কার? এসব কারণেই আমি এগুলোকে আর এখন দুর্ঘটনা বলি না। এগুলো হত্যাকাণ্ড। কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড। আপনি খেতে গিয়ে মরবেন, হাসপাতালে সুন্নতের খতনা করতে গিয়ে মরবে আপনার সন্তান, এন্ডোসকপি করতে গিয়ে মরবে আপনার ভাই, নির্মাণাধীন ভবনের রড পড়ে মারা যাবে কোন বাবা, বাস দুর্ঘটনা, ট্রেনে আগুন কিংবা ভবনের আগুনে মারা যাবে সাধারণ মানুষ। গার্মেন্টস বা কারখানায় মরবে শ্রমিক এই যেন নিয়তি। 
কেউ কেউ বলবেন সাধারণ মানুষের দোষ। তারা সচেতন নয়। অবশ্যই কথা সত্য। কিন্তু সাধারণ মানুষকে আইনের আওতায় আনার দায়িত্ব কার? যারা আইন ভাঙে তাদের বিরুদ্ধে কেন কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয় না? আমি মনে করি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হলে সবাই নিয়ম মানতে বাধ্য। আফসোস প্রতিবারই মৃত্যুর ঘটনার পর নতুন করে তদন্ত কমিটি হয়, নানা আলোচনা হয়, তারপর আমরা ফের অপেক্ষা করি নতুন কোন দুর্ঘটনার। আচ্ছা, স্বাধীনতার তো ৫৩ বছর হলো। এভাবে আর কতোদিন চলবে? আর কতো মানুষ মরলে আমাদের হুশ হবে? আর কতো মানুষ মরলে তদারকি কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতা আসবে? আর কবে আমরা বুঝবো উন্নয়ন মানে শুধু বড় বড় ভবন নয় জবাবদিহিতা ও সুশাসন জরুরি। 

বারবার বলছি, নীতিনির্ধারকেরা চাইলে দেশের প্রত্যেকটা সমস্যার সমাধান সম্ভব। এজন্য শুধু প্রয়োজন সুশাসন ও জবাবদিহিতার সংস্কৃতি। আপনারা যারা দেশ চালান, যারা প্রশাসন চালান, আপনারা যারা ক্ষমতাবান, আপনারা যারা নীতিনির্ধারক, আপনাদের কাছে তাই হাতজোড় করে বলি, জেগে উঠুন। আপনাদের বোধ ছাড়া এই দেশকে বাঁচানোর কোনো উপায় নেই। কাজেই ফের মানুষের আহাজারি ফের অভিশাপের আগে যথাযথ ব্যবস্থা নিন। দোহাই লাগে ঘুম থেকে জেগে উঠুন। লেখক: কলামিস্ট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়