এ কে আজাদ: [২] ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২.১ মিনিটে নতুন ইংরেজি বছরকে স্বাগত জানিয়েছে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। বর্ণিল উৎসবে নতুন বছর ২০২৪ বরণ করে নিয়েছে বিশ্ববাসী। বাংলাদেশেও বছরটিকে স্বাগত জানানো হয়েছে নানাভাবে। নুতন বছরে একে অন্যকে শুভেচ্ছা জানানো একটি সুন্দর রীতি। তবে বাংলাদেশে বছরের প্রথম দিনে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি আরেকটি বিষয়েও শুভেচ্ছা জানানোর আধিক্য দেখা গেছে। আর সেটি হলো জন্মদিনের শুভেচ্ছা। বছরের প্রথম দিনে সবাই যে শুধু নতুন বছরকেই স্বাগত জানাচ্ছে তা নয়, এদিন অনেকে অনেককে জন্মদিনের শুভেচ্ছাও জানাচ্ছেন।
[৩] সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই যুগে ফেসবুকে যে কারো বন্ধু তালিকায় বছরের এই দিনটিতেই সবচেয়ে বেশি মানুষের জন্মদিন দেখা যায়। এমনকি বাংলাদেশের জন্ম নিবন্ধন সনদ ও পাসপোর্টের জন্ম তারিখ যাচাই করলে দেখা যাবে, বছরের অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি মানুষের জন্ম তারিখ ১ জানুয়ারি।
[৪] কেন এইদিনে এত মানুষের জন্মদিন, এ বিষয়ে তেমন কোনো নির্ভরযোগ্য গবেষণা নেই। তবে বিচ্ছিন্ন কিছু জরিপের ফলাফলে জানুয়ারির ১ তারিখে জন্মদিনের প্রাধান্য দেখা গেছে। শিশুদের নিয়ে কাজ করেন, এমন বিশেষজ্ঞরাও এই প্রবণতা লক্ষ্য করেছেন।
[৫] এ বিষয়ে শিশু বিশেষজ্ঞ ড. ইশতিয়াক মান্নান ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেন, “বিষয়টি এমন না যে, জানুয়ারির এক তারিখে বেশিরভাগ শিশুর জন্ম হচ্ছে। আসলে এখনও আমাদের দেশের বেশিরভাগ শিশুদের জন্ম হয় বাড়িতে, বিশেষ করে যারা গ্রামীণ এলাকায় থাকে। সেখানে এখনও শিক্ষার হার ততটা ভালো না। ফলে অধিকাংশ অভিভাবক জন্ম নিবন্ধনের ব্যাপারে ততটা সতর্ক নন। আবার আমাদের জন্ম নিবন্ধনও সঠিকভাবে সঠিক তারিখে হয়না। বাড়িতে বা হাসপাতালে জন্ম নেওয়া শিশুদেরও ঠিকভাবে নিবন্ধন হচ্ছে না। পরবর্তী একসময় যখন তারা স্কুলে ভর্তি হয় বা কোনো সার্টিফিকেট পরীক্ষার সময় তার জন্ম তারিখটা দরকার হয়ে পড়ে, তখন অনুমাননির্ভর যে কোনো একটা তারিখ দিয়ে জন্মনিবন্ধন করে নেন, এ সময় বেশীরভাগ ক্ষেত্রে বছরের প্রথম মাসের প্রথম দিনটিকে বেছে নেওয়ার প্রবণতা বেশী দেখা যায়।”
[৬] স্কুলে ফরম ফিলাপের সময়ও এমন ঘটনা ঘটে থাকে। এ সময় স্কুলের শিক্ষক ও অভিভাবকরা ইচ্ছেমত একটি জন্ম তারিখ বসিয়ে দেন। অনুমাননির্ভর জন্ম তারিখ বসাতে গিয়ে তারা সাধারণত এমন একটি তারিখ বেছে নেন, যা সহজে মনে রাখা যায়। তাই বেশিরভাগ সময়েই সেটা বছরের প্রথম দিন বা জানুয়ারির ১ তারিখ হয়ে যায়। মূলতঃ এ কারণেই বাংলাদেশের মানুষের জন্ম তারিখে ১ জানুয়ারির আধিক্য চোখে পড়ে।
[৭] বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয়, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভিয়েতনাম ও আফগানিস্তানেও এই প্রবণতা রয়েছে। তবে শিশু বিশেষজ্ঞ ড. ইশতিয়াক মান্নান জানান, অনেকের জন্মতারিখ বানিয়ে দেওয়া হলেও, এই তারিখেও কিন্তু সত্যিকারে বাংলাদেশে অনেক শিশুর জন্ম হচ্ছে, যাদের জন্মদিন আসলেই ১ জানুয়ারি।
একেএ/এইচএ