বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রতিবেদন: পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা-ইন্টারপোলের রেড নোটিসে নাম ওঠার আগের দিন অর্থাৎ বুধবার রাতেই তিনি দুবাই ছাড়েন বলে গুঞ্জন উঠেছে। আরাভের যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর ক্ষেত্রে দুবাইয়ের শেখ পরিবারের প্রভাবশালী কয়েক ব্যক্তি বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন বলেও সূত্রের খবর।
এদিকে ইন্টারপোলের নোটিসে কোথাও নেই আরাভ খান। একই সঙ্গে তার বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া হলেও ঠিকানা দেখাচ্ছে বাগেরহাট। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুবাইয়ে বসবাসরত একজন ব্যবসায়ী বলেছেন, গত বুধবার রাতেই আরাভ আমেরিকা চলে গেছেন। বর্তমানে তিনি ম্যানহাটানে মেহেদী নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে আছেন। বাংলাদেশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা চাইলেই বিষয়টি যাচাই করে দেখতে পারে।
জানা গেছে, ইন্টারপোলের রেড নোটিসে বাংলাদেশির তালিকায় রবিউল ইসলাম ওরফে রবিউলই দেখানো হচ্ছে। জন্ম তারিখ ১৯৮৭ সালের ১৯ আগস্ট। কোথাও তার নাম আরাভ খান উল্লেখ নেই। যদিও বর্তমানে দেশি ও বিদেশি মিডিয়ার খবরে আরাভ খানই আসছে। আবার ভারতীয় পাসপোর্টে আরাভ খান উল্লেখ থাকলেও ইন্টারপোলে রবিউল নামের সঙ্গে আরাভ নামটি উল্লেখ নেই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আরাভ এখনো ভারতীয় পাসপোর্ট ব্যবহার করছেন। দুবাইয়ে স্থায়ী বসবাসের জন্য কার্ডেও তিনি আরাভ খান হিসেবে পরিচিত। দেশি-বিদেশি মিডিয়ায়ও আরাভ খান নামটি উঠে এসেছে। আবার ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আরাভের পাসপোর্ট বাতিল করেছে এমন খবর এখনো পাওয়া যায়নি। তাই নোটিসে রবিউলের সঙ্গে আরাভ নামটিও উল্লেখ করা উচিত ছিল।
পুলিশের এক সূত্র বলছেন, আরাভ খান বর্তমানে ভারতীয় পাসপোর্ট ব্যবহার করছেন এবং দুবাইয়ের রেসিডেন্ট কার্ড পেয়েছেন। তবে আরাভ খান যে বাংলাদেশে পুলিশ সদস্য হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র ইন্টারপোলে পাঠানো হয়েছে। ইন্টারপোল এসব বিষয়ে অবগত হয়ে রেড নোটিস জারি করেছে। বাংলাদেশের পাসপোর্টধারী না হলেও অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে বাংলাদেশ পুলিশ সদর দফতরের এনসিবি শাখা। ইন্টারপোল ও দুবাই পুলিশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন এনসিবির কর্মকর্তারা। ইন্টারপোল ও দুবাই পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে কোন প্রক্রিয়ায় আরাভকে বাংলাদেশে আনা হবে এসব বিষয়ে এনসিবির কর্মকর্তারা কাজ করছেন।
নোটিসে আরাভ নেই কেন? গত রাতে পুলিশ সদর দফতরের এনসিবি শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি এআইজি মিডিয়ার কাছে ফোন করার পরামর্শ দেন। বলেন, এআইজি মিডিয়াকে সব বলা আছে। তিনিই সবকিছু বলবেন।
পরে এআইজি মিডিয়া মো. মনজুর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে পুরোপুরি ক্লিয়ার হওয়ার পরই আপনাকে জানানো হবে। বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত ডকুমেন্টসের ভিত্তিতে ইন্টারপোল এরই মধ্যে দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানের বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারি করেছে। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোল ও দুবাই পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে এনসিবি শাখা কাজ করছে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র আরো বলছেন, রেড নোটিস জারির পর থেকেই দুবাই পুলিশের নজরদারিতে রয়েছেন আরাভ খান। দুবাই থেকে যেন অন্য কোথাও পালিয়ে যেতে না পারেন, সে ব্যাপারেও নজরদারি বাড়িয়েছে সে দেশের পুলিশ। এসব বিষয় দুবাইয়ের বাংলাদেশের দূতাবাস খোঁজখবর রাখছে। এদিকে আরাভ খান ওরফে রবিউল মাত্র কয়েক বছরে কীভাবে এত বিশাল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন, এর পেছনে কারা রয়েছেন; এসব বিষয় খতিয়ে দেখছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যরা। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ থেকে তিনি কীভাবে ভারতে পালিয়ে গেছেন, ভারতে পাসপোর্ট তৈরি করে আবার কীভাবে বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন, এসব বিষয়ও খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা। সূত্রটি জানিয়েছেন, দেশে এসে ঘুরে যাওয়ার পেছনে পুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার এক পুলিশ কর্মকর্তা তাকে সহায়তা করেছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রসঙ্গত, আরাভ খানই মূলত ঢাকার স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) পুলিশ পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম। গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার যুবক রবিউল ইসলাম নিজের নাম, জাতীয়তা পরিবর্তন করে জোগাড় করেন ভারতীয় পাসপোর্ট। এ পাসপোর্টেই পাড়ি জমান সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। দুবাই পাড়ি জমিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে তিনি হয়ে ওঠেন ‘আলাদিনের চেরাগ’। দুবাইয়ে ‘আরাভ জুয়েলার্স’ নামের ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকের নাম আরাভ খান। মূলত তিনি বাংলাদেশের নাগরিক রবিউল ইসলাম। তবে ভারতে গিয়ে নাম পরিবর্তন করে রাখেন আরাভ খান।
আপনার মতামত লিখুন :