মনজুর এ আজিজ : প্রতি বছর নবায়ন করার নামে যে যন্ত্রণা পোহাতে হয় ব্যবসায়ীদের, তা থেকে তারা রেহাই দিতে ও ব্যবসা করার জন্য ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদ ১ বছরের পরিবর্তে ৫ বছর করা হচ্ছে। স্থানীয় সরকার ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সরকার এরকম সিদ্ধান্ত নিলে তা স্বস্তিদায়ক খবর হবে বলে মনে করছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা।
সূত্র মতে, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও প্রভাবশালী সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (এমসিসিআই) ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য সম্প্রতি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালায়ের কাছে লিখিত প্রস্তাব করে। একই সঙ্গে এর অনুমোদন প্রক্রিয়া সহজ করার কথা বলে। এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনা করছে সরকার।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ব্যবসা সহজ করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর একটি হচ্ছে ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদ বাড়ানো। সরকার এ বিষয়ে ইতিবাচক। তবে এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও দপ্তর জড়িত। আমি মনে করি, ব্যবসা সহজীকরণে এটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। আশা করছি তারাও ইতিবাচক হবে।
জানা যায়, ট্রেড লাইসেন্স হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য করার অনুমতিপত্র। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে সিটি করপোরেশন এর অনুমোদন দেয়। বাংলাদেশে বৈধভাবে ব্যবসা করতে হলে ট্রেড লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক। স্থানীয় সরকার আইন, ২০০৯ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে এটি দেয়া হয়। ট্রেড লাইসেন্স অনুমোদনের কয়েকটি ধাপ আছে। আইনে আবেদন করার সাত কর্মদিবসের মধ্যে এর অনুমোদন দেয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা হয় না। ঘুষ ছাড়া ট্রেড লাইসেন্স মেলেনা এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
প্রতিবেশি ভারতসহ অনেক দেশ এক ধাপে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করে। বাংলাদেশে এখনও সাত থেকে আট ধাপ লাগে। এ প্রসঙ্গে এর আগে এমসিসিআইয় সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, বিশ্বের সব দেশে শুধু জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে ট্রেড লাইসেন্সের অনুমোদন দেয়া হয়। বাংলাদেশেও এটি চালু করা যেতে পারে।
ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ‘বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট’ বা বিল্ড-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, সিটি করপোরশন এবং মিউনিসিপ্যাল ট্যাক্সেশন আইনে ট্রেড লাইসেন্স পাঁচ বছরের জন্য দিতে কোনো বাধা নেই।
বিল্ড বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ট্রেড লেইসেন্সের মেয়াদ পাঁচ বছর করার যে প্রস্তাব তারা করেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তা গ্রহণ করেছে। এটি এখন কার্যকরের অপেক্ষায়।
এদিকে বিশ্বব্যাংকের ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ শীর্ষক সর্বশেষ প্রতিবেদনে ব্যবসা সহজীকরণে বাংলাদেশের আট ধাপ এগোনোর কথা উল্লেখ করা হলেও সার্বিক বিবেচনায় অগ্রগতি বলা যায় না। বিশ্বের ১৯০টি দেশের মধ্যে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৮তম। অর্থাৎ বাংলাদেশ এখনও পেছনের সারিতে রয়ে গেছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ শুধু আফগানিস্তান থেকে এগিয়ে।
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি সামস মাহমুদ জানান, ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদ একবারে পাঁচ বছর করলে ব্যবসা আরও সহজ হবে। এতে হয়রানি কমবে।