জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মোবাইল ফোনকেন্দ্রিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এক নামে নিবন্ধিত সিম কার্ডের সংখ্যা আরও কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) বিপরীতে সর্বোচ্চ পাঁচটি সিম কার্ড নিবন্ধিত থাকবে। বর্তমানে এই সীমা ১০টি।
নতুন নীতি কার্যকর হলে নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত সিম কার্ড নিষ্ক্রিয় করা হবে।
তবে ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) ডিভাইসের জন্য বিশেষ সিরিজের সিম কার্ড আলাদা নিবন্ধন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিক্রির অনুমতি দেবে বিটিআরসি।
বিটিআরসি সূত্র জানায়, কিছু অসাধু বিক্রেতা সিম বিক্রির সময় গ্রাহকের অজান্তেই তাদের বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষণ করে পরবর্তী সময়ে সেই তথ্য ব্যবহার করে অবৈধভাবে অতিরিক্ত সিম নিবন্ধন করছে। বিটিআরসির মনিটরিংয়ে এমন ঘটনাও ধরা পড়েছে, যেখানে এক ব্যক্তির নামে একদিনেই একাধিক সিম নিবন্ধন করা হয়েছে। এই অনিয়ম ঠেকাতেই নিয়ন্ত্রণ আরও জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিটিআরসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক উচ্চপর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় একটি এনআইডির বিপরীতে সিম নিবন্ধনের সংখ্যা সর্বোচ্চ পাঁচটিতে সীমিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ অনুমোদন দিলে ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে এই নীতি কার্যকর হবে।
এর আগে, গত ২৬ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছিলেন, নির্বাচনের আগে ব্যক্তিপর্যায়ে ব্যবহৃত সিম কার্ডের সংখ্যা কমানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। তিনি জানান, একজন ব্যক্তির জন্য সর্বোচ্চ দুটি ব্যক্তিগত সিম কার্ড নির্ধারণ করাই সরকারের লক্ষ্য।
এর দুই দিন পর, ২৯ অক্টোবর বিটিআরসিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী জানান, ১ নভেম্বর থেকে এনআইডি প্রতি ১০টির বেশি সিম থাকলে মোবাইল অপারেটররা সেগুলো সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা শুরু করবে। তিনি বলেন, “ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ কোনও এনআইডির বিপরীতে ১০টির বেশি সক্রিয় সিম থাকবে না।”
এরপর চলতি ডিসেম্বরে বিটিআরসি চেয়ারম্যান জানান, ১ জানুয়ারি থেকে এক নামে পাঁচটির বেশি সিম থাকবে না। বর্তমানে যাদের নামে ১০টি সিম রয়েছে, তাদের সিম সংখ্যা কমিয়ে পাঁচটিতে আনা হবে।
তবে এই সিদ্ধান্তে গ্রাহক ও মোবাইল অপারেটরদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। মোবাইল অপারেটরদের মতে, সিম কার্ডের সংখ্যা কমালেই অপরাধ কমে যাবে—এই ধারণা বাস্তবসম্মত নয়।
অনেক গ্রাহক বলেছেন, বর্তমানে সিম শুধু কথা বলার জন্য নয়, ইন্টারনেট সংযোগ ও আইওটি ডিভাইসের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়। কেউ কেউ বলছেন, নেটওয়ার্ক কাভারেজ নিশ্চিত করা ও বিভিন্ন অপারেটরের প্যাকেজ ব্যবহারের জন্য একাধিক সিম প্রয়োজন হয়। আবার পরিবারের যেসব সদস্যদের এনআইডি নেই, তাদের জন্য অন্য সদস্যদের নামে সিম নিবন্ধন করতে হয়।
আবার কেউ কেউ বলছেন, দেশের অধিকাংশ পরিবারে একাধিক প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যের এনআইডি থাকায় এই সিদ্ধান্তের প্রভাব খুব বেশি পড়বে না।
তথ্য বলছে, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১৮ কোটি ৮০ লাখ সিম সংযোগ রয়েছে, যা ব্যবহার করছেন আনুমানিক ৬ কোটি ৭৬ লাখ গ্রাহক। এর মধ্যে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ গ্রাহকের গড়ে ছয়টি করে সিম রয়েছে। তবে মোট গ্রাহকের প্রায় ৮০ শতাংশই পাঁচটি বা তার কম সিম ব্যবহার করেন।