বাংলাদেশের টাঙ্গাইল শাড়ি বুনন শিল্পকে অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। মঙ্গলবার ভারতের নয়াদিল্লিতে ইউনেস্কো ২০০৩ কনভেনশনের চলমান ২০-তম আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের দলনেতা এবং ইউনেস্কো সাধারণ পরিষদের সভাপতি বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম তালহা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানান, এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের জন্য একটি অসামান্য গৌরবের বিষয়। দীর্ঘ দুই শতকের অধিক সময় ধরে টাঙ্গাইলের তাঁতিদের অনবদ্য শিল্পকর্মের বৈশ্বিক স্বীকৃতি এটি। টাঙ্গাইল শাড়ি বাংলাদেশের সকল নারীদের নিত্য পরিধেয় যা এই শাড়ি বুনন শিল্পের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের পেছনে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। রাষ্ট্রদূত এই অর্জন বাংলাদেশের সকল তাঁতি এবং নারীদের প্রতি উৎসর্গ করেছেন।
এই কনভেনশনের আওতায় এটি বাংলাদেশের ষষ্ঠ একক নিবন্ধন। এর আগে পাওয়া অন্য পাঁচটি স্বীকৃতি হলো: বাউল সংগীত (২০০৮), জামদানি বুনন (২০১৩), পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রা (২০১৬), শীতল পাটি (২০১৭) ও রিকশা পেইন্টিং (২০২৩)।
এ বছরের এপ্রিলে এই নিবন্ধন অর্জনের লক্ষ্যে প্যারিসস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ইউনেস্কো সদরদপ্তরে ২০০৩ কনভেনশন দ্বারা নির্ধারিত ছকের মাধ্যমে আবেদন করে। নিয়ম মোতাবেক প্রতিটি আবেদন ইউনেস্কো সদস্য দেশ কর্তৃক নির্বাচিত একটি মূল্যায়ন কমিটির প্রাথমিক অনুবেদন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এই প্রক্রিয়ার সকল ধাপ সফলতার সাথে উত্তরণের পর নিবন্ধনের আবেদন সম্বলিত নথি আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদের আনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হয়। কারিগরি দৃষ্টিকোণ থেকে এই নথি প্রস্তুতকরণ একটি জটিল প্রক্রিয়া হলেও বাংলাদেশ দূতাবাস সম্পূর্ণ নিজস্ব দক্ষতায় এই নথিটি প্রস্তুত করে এবং তা গৃহীত হয়।
বিগত ২০২৩ সালে ভারত টাঙ্গাইল শাড়িকে তাদের নিজস্ব ভৌগলিক পণ্য হিসেবে ঘোষণা করলে তা নিয়ে বাংলাদেশের সর্বস্তরের নাগরিকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। তবে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই নিবন্ধন অর্জনে জটিলতার আশংকা থাকলে আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদ বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক প্রস্তুতকৃত নথিটিকে ২০০৩ কনভেনশন অনুযায়ী উচ্চমান সম্পন্ন নিবন্ধন হিসেবে ঘোষণা করে। এই নিবন্ধনের ফলে টাঙ্গাইল শাড়ি নিয়ে অতীতে সৃষ্ট জটিলতার অনেকটা সমাধান হয়েছে-এমনটাই মনে করেন অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিষয়ক গবেষক এবং পেশাজীবীগণ।
ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মু. রিয়াজ হামিদুল্লাহ জানান, এই নিবন্ধন আন্তর্জাতিক কনভেনশনের মাধ্যমে হয়েছে যেখানে ভারত ও বাংলাদেশ উভয়েই সদস্য। উভয় দেশের নারীদের কাছে শাড়ি একটি জনপ্রিয় পরিধেয়। তাই এই নিবন্ধন শাড়ি অনুগ্রাহী সকল নারীকে তার প্রিয় পোশাক নিয়ে গর্ববোধ করার নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।
গত ২০২২ সালে এক তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ নির্বাচনে জয়লাভের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ চার বছরের জন্য ইউনেস্কো ২০০৩ কনভেনশনের আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদের সদস্যপদ লাভ করে। এই জয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সামগ্রিক সুরক্ষা উদ্যোগে নতুন মাত্রা যোগ করে। এই পর্ষদের ১৮ তম সভায় ‘ঢাকার রিক্সা ও রিক্সাচিত্র’ এই স্বীকৃতি লাভ করে।
এর আগে গত ০৭ ডিসেম্বর আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদের চলমান ২০তম সভা উদ্বোধন করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর। অনুষ্ঠানে ইউনেস্কোর নবনিযুক্ত মহাপরিচালক মিশরের নাগরিক খালেদ এল এনানি যোগ দেন। আগামী ১৩ ডিসেম্বর এই সভার সমাপ্তি হবে বলে বাংলাদেশ দূতাবাস, প্যারিস প্রেরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বরাতে জানা যায়।