শিরোনাম
◈ দিনদুপুরে প্রাইভেট কারে থাকা বিএনপি কর্মীকে এলোপাতাড়ি গুলি করে হত্যা ◈ হজের নিবন্ধন করা যাবে মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট দিয়েই  ◈ একদিনের ব্যবধানে আবারও বাড়ল স্বর্ণের দাম ◈ ইউনেস্কোর ৪৩তম সাধারণ সম্মেলনের সভাপতি নির্বাচিত হলো বাংলাদেশ ◈ নতুন ২ জাতীয় দিবসে ছুটি থাকবে? যা জানাগেল ◈ অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারে বাংলাদেশের পাশে থাকতে চায় জার্মানি ◈ জাতীয় নির্বাচনকে ভিন্ন খাতে নিতে ‘গভীর ষড়যন্ত্র’ চলছে : মির্জা ফখরুল ◈ বাংলা‌দেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের সূচিতে পরিবর্তন ◈ ভারতের নাগরিকত্ব নিতে চলেছেন পাকিস্তানের সা‌বেক ক্রিকেটার দানিশ কানেরিয়া? ◈ অবৈধ অভিবাসীদের তাড়িয়ে দিলে অ্যামেরিকার লাভ না ক্ষতি?

প্রকাশিত : ০৭ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:১০ দুপুর
আপডেট : ০৮ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:০০ রাত

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

দেশজু‌ড়ে প্রশ্ন, পুলিশ মবের শিকার হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কীভাবে-কতটুকু সম্ভব? 

এল আর বাদল: গত বছর ৫ অগাস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে গত এক বছরে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নানা সময় প্রশ্ন উঠেছে। এ সময় সারা দেশে নানারকম 'মব' হামলার ঘটনা ঘটেছে, যাতে শুধু সাধারণ মানুষই নয়, অনেক ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও হামলার শিকার হয়েছে। অনেক মব হামলার ঘটনা ঘটেছে পুলিশের সামনে, এমনকি অনেক ঘটনায় পুলিশকেও পালিয়ে যেতে দেখা গেছে।

ফলে গত এক বছর ধরেই আইনশৃঙ্খলা ইস্যুতে সাধারণ মানুষের পুলিশের ওপর আস্থা ছিল নড়বড়ে। - বি‌বি‌সি বাংলা

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনীকে মাঠে নামানো হলেও তাতে পরিস্থিতির খুব বেশি বদল হয়নি।

এর মধ্যেই গত তিন দিনে পুলিশের ওপর এমন হামলা ও মবের ঘটনায় কয়েকজন আহত হলে নতুন করে আবার আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

প্রশ্ন উঠেছে, এমন পরিস্থিতিতে পুলিশের ওপর মানুষের আস্থা কতটা ফিরবে? পুলিশই যদি মবের শিকার হয়, তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় অবস্থার পরিবর্তন কিভাবে সম্ভব?

নিরাপত্তা পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগ ও শঙ্কার? ----------

বছরের পাঁচই অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য বেশ কয়েকটি অভিযান চালানোর কথা বলা হয়েছিল। বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনা বাহিনীকেও মাঠে নামানো হয়, যা এখনো বহাল রয়েছে।

কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এক বছর পরে এসেও দেশের বিভিন্ন স্থানে এখনো মবসহ নানান বিশৃঙ্খলা সংঘটিত হতে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে, পুলিশ বাহিনীও পুরোপুরিভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।

অভিযান চালানোর পরও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি হয়নি বলে বিভিন্ন সময় মানবাধিকার সংগঠনগুলোও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

বরং অভিযান চলার মধ্যেই একের পর এক ডাকাতি, প্রকাশ্যে অস্ত্র ঠেকিয়ে ছিনতাই, গণপিটুনি দিয়ে হত্যা, ধর্ষণ, 'তৌহিদী জনতার' ব্যানারে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাধা, মব সৃষ্টি করে বাড়িঘরে হামলা-লুটপাট, এমনকি পুলিশের ওপর হামলার মতো ঘটনাও ঘটতে দেখা গেছে।

সর্বশেষ নরসিংদীতে সড়কে যানবাহন থেকে চাঁদা তোলার সময় শনিবার আটক ব্যক্তিদের ছিনিয়ে নিয়ে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় সেখানকার একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহত হয়েছেন। এছাড়া সিলেটে শুক্রবার পুলিশের ওপর হামলায় শাহপরান থানার ওসিসহ পাঁচজন আহত হন।

গতকাল রোববার ওই বিভাগেরই কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় 'মব' সৃষ্টি করে পুলিশের ওপর হামলায় পাঁচজন আহত হয়েছেন।

পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের জানুয়ারি থেকে অগাস্ট মাস পর্যন্ত আট বিভাগেই পুলিশের ওপর হামলা বেড়েছে। আট মাসে সারা দেশে হামলার এমন ৪১৫ টি ঘটনা ঘটেছে।

পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, মাদক অভিযান, অবৈধ দখল উচ্ছেদ কিংবা চাঁদাবাজি-ছিনতাই রোধের অভিযানে গিয়ে পুলিশ উল্টো হামলার মুখোমুখি হচ্ছে।

যদিও, গত এক বছরে বিভিন্ন সময়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মবের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান অথবা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, এমন দাবি করেছেন।

পুলিশের ওপর হামলা কী বার্তা দেয়? -----------

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব যাদের উপর, তাদের উপরেই যখন হামলার শিকার হয়, তখন তাদের ওপর মানুষের আস্থা মৃয়মান হয়ে যায়।

পাঁচই অগাস্টের পরে গত এক বছরে পুলিশের ঘুরে দাঁড়ানো বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার প্রশ্নে তাদের নিজেদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ করছেন বিশেষজ্ঞরা।

অপরাধ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বিবিসি বাংলাকে বলেন, "পুলিশের মাঠ পর্যায়ের সদস্যদের সাথে নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে চোখে পড়ার মতো সমন্বয়হীনতা আছে। এটা তারা কাটিয়ে উঠতে তো পারেইনি বরং তা আরো বাড়ছে, ফলে এর প্রভাব পড়ছে শৃঙ্খলা রক্ষায়।

 এমন পরিস্থিতির সুযোগ নেয় অপরাধীরা। তারা যখন বুঝতে পারে পুলিশের ভিতরে সমন্বয়হীনতা আছে, তাদের ওপর আক্রমণ করলে কিছু হবে না, পুলিশ নিজেই ভিন্ন পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে যাবে। এক বছরে পুলিশ নিজের অবস্থান পরিবর্তনে জোরালো কোনো ব্যবস্থা এই পর্যন্ত গ্রহণ করতে পারেনি বলেই এই অবস্থা বলেন অপরাধ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক।

এমনকি গণঅভ্যুত্থানের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরকারের দিকে এবং সরকার 'মব' এর মতো অপরাধকে 'নমনীয়' করার চেষ্টা করায় পুলিশ নিজেই এর শিকার হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

এ বিষয়ে কথা বলতে পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলমকে ফোন করলে মোবাইল ব্যস্ত পাওয়া যায়। টেক্সট করলেও কোনো রিপ্লাই দেননি তিনি।

এদিকে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী এ বিষয়ে কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।

তবে পুলিশের ওপর এসব হামলা কি ধরনের বার্তা দেয় এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, একটা বড় গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, গণঅভ্যুত্থানের পরে তো অনেক কিছুই সমাজে হয়। এখন কমে গেছে, এখন তো এগুলা নাই-ই বলা যায়।

একইসাথে ঢাকা সিটিতে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলেও জানান তিনি।

অন্যদিকে, পুলিশ হেডকোয়ার্টারের মুখপাত্র এবং মিডিয়া অ্যান্ড পিআর বিভাগের এআইজি এ এইচ এম শাহাদাত হোসাইন 'মব' করে পুলিশের ওপর হামলা রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলার জন্য সরাসরি হুমকি বলে মন্তব্য করেন।

হোসাইন বিবিসি বাংলাকে বলেন," পুলিশের ওপর হামলা মূলত আইনের শাসনের প্রতি চ্যালেঞ্জ। এমন ঘটনা সমাজে এক ধরনের ভুল বার্তা দেয়, যেখানে অপরাধীরা মনে করে তারা আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারে। এটি শুধু পুলিশের জন্য নয়, বরং সমগ্র সমাজ ব্যবস্থার জন্য হুমকি, আর এতে অপরাধীরা উৎসাহিত হয়।

এমন পরিস্থিতিতে পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে পারবে কী না জানতে চাইলে, তা নিঃসন্দেহে পুলিশের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ বলে দাবি করেন মি. হোসাইন।

হামলার পর মনোবল কিছুটা কমে যাওয়া স্বাভাবিক, তবে বাহিনীর কাঠামো ও প্রশিক্ষণ এমনভাবে তৈরি যে পুনরুদ্ধার সম্ভব এবং পুলিশ সেই লক্ষেই এগোচ্ছে " বলেন বাংলাদেশ পুলিশের মুখপাত্র মি. হোসাইন।

তবে অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাঁচই অগাস্টের পরে পুলিশের যে মনোবল ঘাটতি তৈরি হয়েছে, নানা উদ্যোগের কথা বলা হলেও সেখানে এখনো খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি। সরকারের তরফ থেকেও পুলিশকে সেই আশ্বস্ততা দেওয়া যায়নি।

এই অবস্থার পরিবর্তন আনতে হলে বড় ধরনের পরিবর্তন জরুরি বলে মনে করেন অধ্যাপক তৗেহিদুল হক।

পুলিশ যদি বর্তমান ব্যবস্থা বা নিজেদের পরিবর্তন করতে না পারে, তাহলে সাধারণ মানুষের আস্থা বা নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি করতে পারবে না, বলেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়