বর্তমান সময়ে জমি ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গী একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ওয়ারিশান সম্পত্তি। বিশেষ করে, মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টন ও মালিকানা নিয়ে অনেকেই আইনি জটিলতায় পড়ছেন। এ ধরনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় যখন বণ্টন দলিল তৈরি করা হয় না, অথবা মৌখিকভাবে জমি বন্টন করা হয়। ফলে, এমন অনেক ঘটনা ঘটছে যেখানে ক্রয়কৃত জমির নামজারি বাতিল হচ্ছে, দখল সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে, এমনকি আদালত পর্যন্ত যেতে হচ্ছে। তাই, ওয়ারিশান সম্পত্তি ক্রয় করার সময় কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, তা জানা অত্যন্ত জরুরি।
ওয়ারিশান সম্পত্তির বণ্টন দলিলের গুরুত্ব
ওয়ারিশান সম্পত্তি তখনই সঠিকভাবে বণ্টিত হতে পারে, যখন প্রতিটি ওয়ারিশের মধ্যে একটি বণ্টন দলিল তৈরি করা হয়। এই দলিলটি নিশ্চিত করে যে, মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির সীমানা, মালিকানা এবং ভাগ সঠিকভাবে নির্ধারিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো ব্যক্তি মারা যান এবং তাঁর পাঁচ একর জমি ১০টি দাগে বিভক্ত থাকে, তবে সেই জমির ভাগ সঠিকভাবে বণ্টন করতে হবে। বণ্টন দলিল ছাড়া এমন কোন সম্পত্তি ক্রয় করা হলে মালিকানা ও দখল সম্পর্কিত আইনি সমস্যা তৈরি হতে পারে।
যেসব ঝামেলায় পড়তে পারেন, তা বিস্তারিতভাবে জানুন
১. দখল ছাড়তে হতে পারে:
ওয়ারিশান সম্পত্তি ক্রয়ের ক্ষেত্রে, যদি বণ্টন দলিল না থাকে, তবে আপনার ক্রয়কৃত সম্পত্তির দখল অস্থির হতে পারে। আপনি যে জায়গায় এখন ভোগ দখল করছেন, তা অন্য একজন ওয়ারিশ দাবি করতে পারে। যেহেতু বণ্টন দলিল তৈরি হয়নি, সেখানে কোনো সীমানা বা মালিকানা নির্ধারণ করা হয়নি, তাই আদালত আপনার দখল কেটে দিয়ে অন্য কাউকে দেওয়া হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, দীর্ঘদিনের ভোগ দখল থাকা সত্ত্বেও আপনার দখল মুছে দেওয়া হতে পারে।
২. নামজারি বাতিল হতে পারে:
নামজারি হল জমির মালিকানা প্রমাণের একটি বৈধ দলিল। যদি বণ্টন দলিল না থাকে এবং আপনি ওই সম্পত্তি ক্রয় করেন, তাহলে আপনার নামজারি বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষত, যদি অন্য কোনো ওয়ারিশ ঐ সম্পত্তি নিয়ে অভিযোগ জানিয়ে মিসকেস দায়ের করে, সেক্ষেত্রে নামজারি বাতিল হয়ে যেতে পারে। এই ধরনের সমস্যায় পড়লে, আপনি যে জমির মালিকানা দাবি করছেন, তা আইনি ভাবেই অস্বীকার হয়ে যেতে পারে।
৩. সম্পত্তির সীমানা পরিবর্তন হতে পারে:
এছাড়া, যদি বণ্টন দলিল না থাকে, তবে সম্পত্তির সীমানা পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। আপনি যে জমির ভোগ দখল করছেন, সেটি হতে পারে অন্য জায়গায় চলে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি রাস্তার পাশের জমি ক্রয় করেন এবং সেখানে বণ্টন দলিল না থাকে, তবে কোনো সময় ওই সীমানা অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত হয়ে যেতে পারে, যা আপনার দখলকে সংকটাপন্ন করে তুলবে।
৪. দলিল বাতিল হতে পারে:
অনেক সময় আদালতে দলিল বাতিলের মামলা হয়। যদি আপনি ওয়ারিশান সম্পত্তি বণ্টন দলিল ছাড়া ক্রয় করেন, তবে আদালত সেই দলিল বাতিল করতে পারে। এই কারণে, সম্পত্তির ক্রয়-বিক্রয়ের সময় বণ্টন দলিলটি সঠিকভাবে প্রস্তুত করা জরুরি। আদালত হতে পারে আপনার ক্রয়কৃত সম্পত্তির দলিল বাতিল করে দেবে, কারণ তা আইনি সঠিকতা পায়নি। এই পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে, আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে এবং যথাযথ দলিল তৈরি করতে হবে।
কেন সতর্ক থাকবেন?
জমি ক্রয়ের আগে, আপনি যাঁর কাছ থেকে সম্পত্তি ক্রয় করছেন, তার বণ্টন দলিল সঠিকভাবে তৈরি হয়েছে কিনা, সেটি নিশ্চিত করুন। শুধু ক্রয় চুক্তি ও নামজারি দিয়ে জমির মালিকানা নিশ্চিত হয় না, বরং তা একটি আইনি দলিলের ওপর ভিত্তি করে হতে হয়। কোনও একাধিক ওয়ারিশ থাকা অবস্থায়, সবাই যদি বণ্টন দলিল স্বাক্ষর না করে, তাহলে পরবর্তীতে আপনি আইনি জটিলতায় পড়তে পারেন। তাছাড়া, জমির সীমানা ও মালিকানা সম্পর্কিত কোনো অনিশ্চয়তা আপনার দখলে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
ওয়ারিশান সম্পত্তি ক্রয়ের ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ
১. বণ্টন দলিল নিশ্চিত করুন:
যেকোনো সম্পত্তি ক্রয় করার আগে, প্রথমে বণ্টন দলিল তৈরি হয়েছে কিনা নিশ্চিত করুন। বণ্টন দলিলের মাধ্যমে সম্পত্তির মালিকানা ও সীমানা সঠিকভাবে নির্ধারণ করা হয়। তাই বণ্টন দলিল ছাড়াই জমি ক্রয় করবেন না।
২. আইনি পরামর্শ নিন:
সম্পত্তি ক্রয়ের আগে, একজন আইনি পরামর্শক বা আইনজীবীর সাথে কথা বলুন। জমির বণ্টন, সীমানা এবং মালিকানা সম্পর্কিত সমস্ত বিষয় যাচাই করে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৩. মৌখিক বণ্টন থেকে বিরত থাকুন:
মৌখিক বণ্টন বা মুখে মুখে জমি বণ্টন করার প্রথা পরিত্যাগ করুন। মৌখিক বণ্টন থেকে জমি ক্রয় করার ফলে আইনি জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে এবং তা দীর্ঘ সময় ধরে আপনার দখলে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
অতএব, ওয়ারিশান সম্পত্তি ক্রয়ের ক্ষেত্রে বণ্টন দলিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি নিশ্চিত করে যে জমির মালিকানা এবং সীমানা সঠিকভাবে নির্ধারিত হয়েছে এবং আইনি ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকা যাবে। জমি ক্রয় করার আগে বণ্টন দলিল এবং আইনি পরামর্শ গ্রহণ করুন। এতে ভবিষ্যতে আপনাকে কোনো ধরনের আইনি জটিলতার সম্মুখীন হতে হবে না এবং আপনি নিশ্চিন্তে জমির মালিক হতে পারবেন।