বাংলাদেশের ভূমি রেকর্ডে দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তির অন্যতম কারণ ছিল ভুল খতিয়ান সংশোধন করতে আদালতের দ্বারস্থ হওয়া। এবার সাধারণ মানুষের সেই দুর্ভোগ কমাতে ভূমি মন্ত্রণালয় নতুন নির্দেশনা দিয়েছে। সম্প্রতি জারি করা পরিপত্রে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, রেকর্ড খতিয়ানের মারাত্মক তিনটি ভুল আর আদালতে নয়, সরাসরি উপজেলা ভূমি অফিস থেকে সংশোধন করে নেওয়া যাবে।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, জনগণকে আর মামলা-মোকদ্দমার ঝক্কিতে যেতে হবে না। সহকারী কমিশনার (ভূমি) সরাসরি এই ভুলগুলো সংশোধনের দায়িত্ব পালন করবেন।
২০২১ সালের ২৯ জুলাই প্রকাশিত এই পরিপত্রে জানানো হয়, চূড়ান্তভাবে মুদ্রিত ও প্রকাশিত খতিয়ানে তিন ধরনের ভুল পাওয়া গেলে এসিল্যান্ড অফিসেই তা ঠিক করা হবে। এর আগে ২০১৫ সালেও একই ধরনের নির্দেশনা জারি করা হলেও মাঠপর্যায়ে কার্যকর হয়নি। এবার সেটি বাস্তবায়নে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন অ্যান্ড টেনেন্সি আইনের ১৪৩ ও ১৪৪ ধারার অধীনে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ ধরনের ভুল সংশোধনের ক্ষমতা রাখেন। ফলে নাগরিকদের আর আদালতের শরণাপন্ন হতে হবে না।
কোন কোন ভুল সংশোধন করা যাবে
পরিপত্রে স্পষ্টভাবে তিন ধরনের ভুল সংশোধনের সুযোগ রাখা হয়েছে।
প্রথমত, করণিক ভুল। অর্থাৎ অসাবধানতা, সরল বিশ্বাস বা ভুলক্রমে সৃষ্ট ভুল যা অন্য কারো স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত করবে না। এর মধ্যে রয়েছে খতিয়ানে মালিকের নামের বানান ভুল, পিতা-মাতা বা স্বামী-স্ত্রীর নামের ত্রুটি, পদবি বা বংশ পরিচয়ের ভুল, এমনকি ঠিকানার ত্রুটিও। এসব ভুল আদালতে না গিয়ে এসিল্যান্ড অফিসে সরাসরি সংশোধন করা যাবে।
দ্বিতীয়ত, দাগ নম্বরের ভুল। অনেক সময় খতিয়ানে দাগ নম্বর অদলবদল হয়ে যায়। যেমন ৫১০ নম্বর দাগ ভুলক্রমে ৫০১ লেখা হয়েছে, কিংবা ৪১০ হয়েছে ৪০১। এ ধরনের ত্রুটি থাকলেও সংশোধনের ক্ষমতা থাকবে উপজেলা ভূমি কর্মকর্তার কাছে।
তৃতীয়ত, গাণিতিক ভুল। ভূমির পরিমাণ বা পরিমাপে ভুল হলে তা সংশোধন করা যাবে। যেমন ১.২৭ একর জমি ভুলক্রমে ১২৭ শতাংশের পরিবর্তে অন্যভাবে লেখা হয়েছে, অথবা ৫০ শতাংশ জমি ভুলে ৫০০ শতাংশ হয়ে গেছে। এ ধরনের হিসাবনিকাশজনিত ভুলও সরাসরি ঠিক করা যাবে।
আদালতের ঝামেলা ছাড়াই সমাধান
ভূমি মন্ত্রণালয়ের এই নতুন পদক্ষেপের ফলে সাধারণ মানুষ আর দীর্ঘ আদালত প্রক্রিয়ার শিকার হবে না। এসিল্যান্ড অফিসেই খতিয়ানের এসব ভুল সংশোধনের সুযোগ পাওয়ায় সময়, অর্থ এবং মানসিক ভোগান্তি—সবই কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ভূমি বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে খতিয়ান সংশোধন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও গতি আসবে। পাশাপাশি প্রতারণা বা অযথা মামলা-মোকদ্দমার ঝুঁকি থেকেও মুক্তি মিলবে।
বাংলাদেশে জমির রেকর্ড নিয়ে নানা সমস্যার অভিযোগ বহু পুরোনো। এবার ভূমি মন্ত্রণালয়ের নতুন পরিপত্রে জনগণের দীর্ঘদিনের ভোগান্তির বড় সমাধান খুঁজে পাওয়া গেছে। আদালতে না গিয়ে সরাসরি উপজেলা ভূমি অফিস থেকেই ভুল সংশোধনের সুযোগ পেয়ে সাধারণ মানুষের জন্য সহজ হচ্ছে জমির খতিয়ান সংশোধন প্রক্রিয়া।