শিরোনাম
◈ গভীর সমুদ্রে মাছ আহরণের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার ◈ আ.লীগের নতুন পরিকল্পনা হাসিনাকে দেশে ফেরাতে, ঢাকায় প্রশিক্ষণ ◈ সাপুড়ের প্রাণ নেয়া সাপটিকে কাচা চিবিয়ে খেয়ে নিলো আরেক সাপুড়ে ◈ লুইস ‌দিয়াস লিভারপুল ছেড়ে দি‌লেন, চার বছরের চুক্তিতে ঢুক‌লেন বায়ার্নে মিউ‌নি‌খে ◈ রাষ্ট্র মেরামত ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার সুযোগ কোনোভাবেই মিস করা যাবে না: আইন উপদেষ্টা  ◈ দুই ছাত্র উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে: নাহিদ ইসলাম (ভিডিও) ◈ ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা: জামিন পেলেন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ফারাবী ◈ প্রথম পর্বে ৬২ বিষয়ে ঐকমত্যে রাজনৈতিক দলগুলো, তালিকা প্রকাশ করলো কমিশন ◈ জামায়াত আমিরের হার্টে তিনটি ব্লক, বাইপাস সার্জারির সিদ্ধান্ত ◈ ছোট-খাটো বিষয়গুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুৃলোকে বিভেদ সৃষ্টি না করার’ আহ্বান

প্রকাশিত : ১০ জুন, ২০২৫, ১২:১৪ দুপুর
আপডেট : ২৮ জুলাই, ২০২৫, ০৯:০০ রাত

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

আসাম থেকে নতুন পদ্ধতিতে পুশ ব্যাক হবে বাংলাদেশে?

এল আর বাদল : ভারতের আসাম রাজ্য থেকে সম্প্রতি বাংলাদেশে যে পুশ ব্যাক হচ্ছে, তা আরও বাড়বে এবং এর জন্য বহু পুরনো একটি আইনের খোঁজ তারা পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা।

ভারতের দিক থেকে কাউকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হলে সেটা ভারতের দিক থেকে পুশ ব্যাক আর একই ঘটনা বাংলাদেশের দিক থেকে দেখলে সেটা পুশ ইন।

ওই আইনটি ব্যবহার করা হলে সন্দেহভাজন বাংলাদেশিকে কোনও ট্রাইব্যুনালে নেওয়া হবে না, সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকের নির্দেশেই তাকে বহিষ্কার করা যেতে পারে। -- সূত্র, বি‌বি‌সি বাংলা

আইনজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, ১৯৫০ সালে তৈরি ওই আইনটি নির্দিষ্ট কারণে আনা হয়েছিল। এই আইন দিয়ে 'পুশ ব্যাক' করা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন গুয়াহাটি হাইকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হাফিজ রশিদ চৌধুরী। তার কথায়, বিদেশি ট্রাইব্যুনালগুলোকে এড়িয়ে এক্সিকিউটিভ অর্ডার দিয়ে মানুষগুলোকে এখান থেকে পুশ ব্যাক করারই চেষ্টা করছেন সরকার। এটা করা যায় না।

--নতুন পদ্ধতিতে 'পুশ ব্যাক' ?--

আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা জানিয়েছেন যে, ওই রাজ্য থেকে সম্প্রতি বাংলাদেশে যেসব মানুষকে 'পুশ ব্যাক' করে দেওয়া হচ্ছে, তার পদ্ধতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনার কথা ভাবছে তার সরকার।

তিনি বলেছেন, "সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে দিয়েছে যে কোনও বিদেশিকে চিহ্নিত বা প্রত্যর্পণ করতে প্রতিবার আদালতের অনুমোদন নিতে আসাম সরকার আইনত বাধ্য নয়। একটি পুরনো আইনি বিধি আছে – 'অভিবাসী (আসাম থেকে বহিষ্কার) নির্দেশ, ১৯৫০', এটা এখনও বলবত আছে।"

মুখ্যমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, এই আইন অনুযায়ী, জেলা কমিশনারদেরই অধিকার আছে আদালতে না গিয়েও বহিষ্কারের নির্দেশ দিতে পারেন, সেটা সুপ্রিম কোর্ট পুনর্ব্যক্ত করেছে।

"কোনও এক অজ্ঞাত কারণে আমাদের আইনি পরামর্শদাতারা আগে এ ব্যাপারটা আমাদের জানান নি, আমরাও এটির ব্যবহারের সম্বন্ধে জানতাম না," বলেছেন মি. বিশ্বশর্মা।

এখন থেকে কাউকে বিদেশি বলে চিহ্নিত করা হলে তাদের যে ট্রাইব্যুনালে পাঠাতেই হবে, তেমন নয়। যেসব মামলা কোনও আদালতে নেই, সেসব ক্ষেত্রে আমরা পুশ ব্যাক করে দেব। নতুন পদ্ধতিতে পুশ ব্যাকের জন্য গত কয়েকদিন ধরেই প্রস্তুতি চলছে," জানিয়েছেন মি. বিশ্বশর্মা।

তিনি এও বলছেন যে, ইতিমধ্যেই বেশ কিছু মানুষকে পুশ ব্যাক করা হয়েছে এবং চিহ্নিতকরণের তালিকা যত লম্বা হবে, ততই পুশ ব্যাক বাড়বে।

-- কী আছে ৫০ সালের সেই আইনে?--

আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা যে পুরনো আইনটি এখন ব্যবহার করার কথা বলছেন, তা তৈরি করা হয়েছিল ১৯৫০ সালে পয়লা মার্চ।

ওই আইনটি বাংলাদেশ তৈরি হওয়ার অনেক আগে পাকিস্তান আমলে তৈরি হয়েছিল। সেটির নাম দেওয়া হয়েছিল 'অভিবাসী (আসাম থেকে বহিষ্কার) নির্দেশ, ১৯৫০'।

আসাম থেকে বহিষ্কারের কথা বলা হলেও এই নির্দেশ পুরো ভারতেই বলবত করা যাবে বলে লেখা আছে আইনটিতে।

ভারতের বাইরের কোনও জায়গার নাগরিক যদি নির্দেশটি বলবত হওয়ার আগে বা পরে আসামে এসে থাকেন এবং যদি সেই ব্যক্তির আসামে বসবাস যদি ভারতের সাধারণ নাগরিকদের স্বার্থের পরিপন্থী হয়, তাহলে ভারত সরকারের কোনও অফিসার সেই ব্যক্তিকে নিজে থেকেই চলে যেতে বলতে পারেন অথবা তাকে ভারত থেকে বার করে দেওয়া হতে পারে।

কোন তারিখের মধ্যে এবং কোন পথ দিয়ে ফেরত যেতে হবে, সেটাও নির্দিষ্ট করে দিতে হবে বহিষ্কারের নির্দেশে, লেখা আছে আইনটিতে।

ওই নির্দেশটি পাকিস্তানের আমলের, তাই সেখানে এও লেখা হয়েছে যে কোনও ব্যক্তি যদি পাকিস্তানের সেই সব এলাকা থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে আসামে এসে থাকেন যে এলাকায় অশান্তি হচ্ছে, বা অশান্তি হওয়ার আশঙ্কা আছে, তার ক্ষেত্রে এই নির্দেশ বলবত হবে না।

কেন্দ্রীয় সরকার বা আসাম মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডের কোনও সরকারি অফিসার ওই নির্দেশ কার্যকর করতে পারবেন বলেও লেখা আছে আইনটিতে।

-- যাদের পুশ ব্যাক করা হচ্ছে, তারা কোন দেশের নাগরিক?--

আসাম থেকে সম্প্রতি অনেক মানুষকে বাংলাদেশে পুশ ব্যাক করা হয়েছে বলে সেখানকার মানবাধিকার সংগঠনগুলি যেমন জানাচ্ছে, তেমনই বিবিসির প্রতিনিধিরা এরকম বেশ কিছু পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছে, যাদের বাড়ির কোনও সদস্যকে পুশ ব্যাক করে দেওয়া হয়েছে।

মে মাসের ২৩ তারিখ থেকে এই বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে।

এর আগে কখনও পুশ ব্যাক করার বিষয়টি ভারতের কোনও নিরাপত্তা এজেন্সিই স্বীকার করত না। কিন্তু সর্বশেষ অভিযান চালানোর পরে যে 'ঘোষিত বিদেশি'দের পুশ ব্যাক করা হচ্ছে, তা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা নিজেই।

মানবাধিকার সংগঠন সিটিজেন্স ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিস বা সিজেপি ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে এ নিয়ে পর পর দুটি অভিযোগ জমা দিয়েছে।

সংগঠনটি মুম্বাই ভিত্তিক হলেও তারা আসামে দীর্ঘদিন ধরে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করছে।

প্রথম অভিযোগে ওই সংগঠনটি জানিয়েছিল যে তিনশোরও বেশি মানুষকে প্রথম দফায় আটক করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে প্রায় দেড়শো মানুষ ফিরে এসেছেন তাদের বাড়িতে।

কিন্তু আটক করে নিয়ে যাওয়ার দশ দিন পর পর্যন্তও ১৪৫ জনের কোনও খোঁজ পাওয়া যায় নি।

যাদের আটক করে পুশ ব্যাক করে দেওয়া হয়েছিল, এরকম ছয়জন নারী পুরুষের সঙ্গে সিজেপি সরাসরি কথা বলেছে এবং আরও পাঁচ জনের ঘটনা তারা কিছু 'বিশ্বাসযোগ্য গণমাধ্যম' থেকে পেয়েছে বলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে পাঠানো দ্বিতীয় অভিযোগে জানিয়েছে সিজেপি।

সংগঠনটির আসাম রাজ্য ইনচার্জ পারিজাত নন্দ ঘোষ জানাচ্ছেন যে, প্রতিটা ঘটনাতেই মাঝরাতে কোনও ওয়ারেন্ট বা অন্য কোনও নথি ছাড়াই আটক করে নিয়ে যাওয়ার পরে গোপনে ডিটেনশন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এরপরে সীমান্ত এলাকায় বিপদসংকুল পরিস্থিতিতে ছেড়ে দিয়ে আসছে বলে জানানো হয়েছে অভিযোগ জানিয়েছে ওই সংগঠনটি।
ওই সংগঠনটি বলছে, যেভাবে মানুষকে বাংলাদেশের সীমান্তে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, এটাকে তারা 'পুশ ব্যাক' নয়, 'পুশ আউট' বলে অভিহিত করতে চান।

সিজেপির রাজ্য ইনচার্জ পারিজাত নন্দ ঘোষ বলছিলেন, "এই যেভাবে পুশ আউট করা হচ্ছে, এটা তো অমানবিক ব্যাপার হচ্ছে। যাদের আটক করা হচ্ছে, তাদেরকে না হয় বিদেশি ট্রাইব্যুনাল থেকে বিদেশি বলে ঘোষণা করা হয়েছে, কিন্তু তারা কোন দেশের নাগরিক সেটা তো নিশ্চিত নয়। তাহলে কেন পুশ আউট করে দেওয়া হচ্ছে!

"আবার আটক করে নিয়ে যাওয়ার পরে পরিবারকে কেন জানানো হচ্ছে না যে তাদের কোথায় কীভাবে রাখা হচ্ছে। আইন অনুযায়ী তো এটা পরিবারকে জানানোর কথা," বলছিলেন মি. ঘোষ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়