গানের কথায় আছে– ‘চোখ যে মনের কথা বলে’। মানুষের সবচেয়ে সুন্দর অঙ্গ সম্ভবত চোখ। ‘চোখের ভাষা’ বলেও একটা বিষয় আছে, যা প্রেমিক যুগল অনুশীলন করেন। কখনও চাহনিতে অমৃতের ধারা, বৃষ্টি রোদ; কখনও সেখানে ক্ষোভ, ক্রোধ। চোখ যেন এক অপার বিস্ময়। এতে আঁকা হয় বাইরের পুরো পৃথিবীর রং, সৌন্দর্য।
এত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও নানা কারণে চোখের দৃষ্টি কমতে থাকে। তাই আমরা চিকিৎসকের পরামর্শে চশমা ব্যবহারসহ বিভিন্ন চিকিৎসা নিই। অনেক ক্ষেত্রে সমস্যার সমাধান না হয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। চশমা হয়ে ওঠে অস্বস্তির কারণ। তবে এবার গবেষকরা বলছেন, এক ধরনের ‘আই ড্রপ’ বা চোখের ড্রপ ব্যবহার চশমার সেই প্রয়োজন মেটাবে। প্রশ্ন হলো– কীভাবে কাজ করবে এ আই ড্রপ?
বয়সের সঙ্গে প্রেসবায়োপিয়ার (কাছে বস্তু দেখতে সমস্যা) মতো সমস্যা বাড়তে থাকে। কোনো কিছু পড়তে গেলে প্রয়োজন হয় চশমার। কিন্তু বিশেষ ওই আই ড্রপ দিনে দুই থেকে তিনবার দিলে চশমার প্রয়োজন হবে না। গত ১৪ সেপ্টেম্বর ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব কাটারেক্ট অ্যান্ড রিফ্রেক্টিভ সার্জনসের (ইএসসিআরএস) ৪৩তম কংগ্রেসে এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ৭৬৬ রোগীর ওপর গবেষণা চালিয়ে এটি প্রস্তুত করা হয়েছে। গবেষকরা দেখেছেন– বিশেষভাবে তৈরি ওই আই ড্রপ ব্যবহারের পর অধিকাংশ রোগীই আগের চেয়ে ভালোভাবে কোনো কিছু পড়তে পারছেন। তাদের এ অগ্রগতি দুই থেকে তিন বছরের বেশি সময় ধরে স্থায়ী হয়।
আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্সের সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ফর প্রেসবায়োপিয়ার পরিচালক ডা. জিওভান্না বেনোজ্জি বলেন, ‘প্রেসবায়োপিয়ার চিকিৎসার চাহিদার কারণে আমরা গবেষণাটি পরিচালনা করি। চশমা বা অস্ত্রোপচারের মতো প্রচলিত সমাধানের রয়েছে অনেক সীমাবদ্ধতা। এগুলোর অসুবিধা আছে; আছে সামাজিক অস্বস্তি, ঝুঁকি বা জটিলতা। প্রেসবায়োপিয়া রোগীদের মধ্যে অনেকেই আছেন চশমা ছাড়া তাদের বিকল্প খুব সীমিত। যারা অস্ত্রোপচার করতে চাচ্ছেন না, তাদের কথাও আমরা ভেবেছি। এসব বিবেচনা করেই সুবিধাজনক ও কার্যকর বিকল্প খুঁজতে থাকি আমরা।’
ডা. জিওভান্না বেনোজ্জির বাবা প্রয়াত ডা. জর্জ বেনোজ্জি এ চোখের ড্রপ তৈরি করেছেন। এতে দুটি সক্রিয় উপাদানের সংমিশ্রণ রয়েছে। একটি হলো পাইলোকারপাইন, যা চোখের মণিকে সংকুচিত করে। অপরটি ডাইক্লোফেনাক। এটি একটি নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগ (এনএসএআইডি)। চোখের প্রদাহ ও পাইলোকারপাইনের কারণে সৃষ্ট অস্বস্তিকে কমাতে এটি ভূমিকা রাখে।
পরীক্ষাকালে রোগীদের দিনে দুবার চোখের ড্রপ দেওয়া হতো। সাধারণত ঘুম থেকে ওঠার পর প্রথম ড্রপ। এর ছয় ঘণ্টা পর আবার আরেকটি ড্রপ দেওয়া হতো। দৃষ্টি সীমাবদ্ধতার লক্ষণ দেখা গেলে বা চোখের আরাম প্রয়োজন হলে ঐচ্ছিক তৃতীয় ডোজ দেওয়া হতো। রোগীদের মধ্যে ৩৭৩ জন নারী ও ৩৯৩ জন ছিলেন পুরুষ। তাদের গড় বয়স ৫৫। তিনটি চোখের ড্রপের ফর্মুলেশনের মধ্যে একটি গ্রহণের জন্য তিনটি দলে ভাগ করা হয়েছিল।
প্রথম ড্রপ দেওয়ার এক ঘণ্টা পর চশমা ছাড়াই রোগীরা লেখা কতটা ভালোভাবে পড়তে পারছেন, গবেষকরা তার অগ্রগতি মূল্যায়ন করেছিলেন। তারা দুই বছর ধরে এটা পর্যবেক্ষণ করেন। ডা. বেনোজ্জি কংগ্রেসকে বলেন, প্রথম ড্রপ দেওয়ার এক ঘণ্টা পর রোগীদের দৃষ্টি শক্তির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। এ ড্রপ ব্যবহারের গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই। সূত্র: সায়েন্স ডেইলি।