ঢাকা রেঞ্জ এলাকায় নিষিদ্ধ ঘোষিত কোনো সংগঠনের কার্যক্রম চলতে দেওয়া হবে না বলে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক। এমন সংগঠনের কেউ কোনো ধরনের তৎপরতায় জড়ালে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে রেঞ্জের আওতাধীন সব এসপিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
রোববার (১১ মে) সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রেঞ্জ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। এসময় রেঞ্জের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ডিআইজি রেজাউল করিম বলেন, “বিগত সময়ে কিছু উচ্চ বিলাসী ও অপেশাদার আচরণকারী পুলিশ সদস্যের কারণে জনসাধারণের সঙ্গে পুলিশের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন থেকে কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও জানান, থানাকে সাধারণ মানুষের আস্থার জায়গা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করছে পুলিশ প্রশাসন। কোনো পুলিশ সদস্য অপরাধে জড়ালে সরাসরি শুনানি নিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ সময় তিনি ‘টক টু ডিআইজি’ নামের একটি মোবাইল অ্যাপ চালুর ঘোষণা দেন, যার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ কোনো অভিযোগ বা তথ্য দিতে পারবেন, এবং তথ্যদাতার পরিচয় গোপন রাখা হবে।
ঢাকা রেঞ্জের আওতাধীন থানা-ফাঁড়ি-সার্কেল অফিস, এসপি অফিসে কোনো রকম অন্যায়-অবিচার ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, ঘুষ বাণিজ্য, বদলি বাণিজ্য আমার রেঞ্জে বরদাশত করা হবে না। যেকোনো ধরনের চাঁদাবাজি কঠোর হাতে দমন করা হবে।
ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, বিগত সময়ের উচ্চাভিলাষী ও অপেশাদার কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তা সমগ্র পুলিশ বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। এরূপ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ পুলিশ যে অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামলাচ্ছে, এর পেছনে যার অবদানের কথা না বললেই নয়, তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের প্রাচীন, অন্যতম বৃহত্তম ও গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ঢাকা রেঞ্জ পুলিশ। ভৌগোলিকভাবে এটি পুলিশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট। কারণ রংপুর বিভাগ ব্যতীত অন্যান্য সব বিভাগের সাথে ঢাকা বিভাগের সীমানা রয়েছে। রাজধানী ঢাকা এই রেঞ্জের আওতাধীন জেলাসমূহ দ্বারা পরিবেষ্টিত। বাংলাদেশ পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ এই ইউনিটের দায়িত্ব গ্রহণ করতে পেরে নিজেকে সম্মানিতবোধ করছি।
ঢাকা রেঞ্জের অধীনে সব থানা-ফাঁড়ি-সার্কেল এসপি অফিস হবে জনগণের উল্লেখ করে ডিআইজি মল্লিক বলেন, জনগণের সেবা করার জন্যই আমরা দায়িত্ব পালন করি। আমার রেঞ্জের অধীন সব থানা হবে জনগণের। যে কোনো বিপদে ফাস্ট রেসপন্ডার থানাকে জনগণের সেবাকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। যারা ভুক্তভোগী এবং অসহায়, তাদের কথা আমি সরাসরি শুনতে চাই। তাদের কী রকম আইনগত সহায়তা দেওয়া যায়, সেটি নিজে দায়িত্ব নিয়ে দেখবো। থানাকে সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভালোবাসার স্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। নতুন স্বাধীন বাংলাদেশে ঢাকা রেঞ্জের প্রত্যেকটি থানা হবে ভুক্তভোগীদের প্রথম ভরসাস্থল।
তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, সাধারণ মানুষ যেন সুবিচার পায়, অন্যায়-জুলুম থেকে বাঁচতে পারে সেটি নিশ্চিত করা হবে। এমনকি আমিও আইনের ঊর্ধ্বে নই। আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছি, ঢাকা রেঞ্জের কোনো পুলিশ সদস্য যদি কোনো ধরনের অনৈতিক ও অপেশাদার কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত হয়-তাদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। এসপি ওসিরাও যদি কোনো অন্যায় করেন, সরাসরি আমাকে জানাবেন। যদি প্রমাণিত হয়, আমি তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবো। এ লক্ষ্যে, ঢাকা রেঞ্জ পুলিশের প্রতিটি থানা-ফাঁড়ি-ক্যাম্প-সার্কেল অফিস-এসপি অফিস এবং আমার অফিসেও অভিযোগবক্স স্থাপন করা হবে। কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেলে অভিযোগ বক্সে সেবা গ্রহীতাগণ তাদের অভিযোগ জানাতে পারবেন এবং আমি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবো।
দায়ের করা জিডি, অভিযোগ, মামলা নিজে মনিটরিং করার ঘোষণা দিয়ে ডিআইজি বলেন, একটি দক্ষ টিম দ্বারা প্রত্যেকটি জিডি, অভিযোগ, মামলা সুনিপুণভাবে মনিটরিং করা হবে। ঢাকা রেঞ্জের আওতাধীন ৯৮টি থানায় সিসিটিভি সংবলিত মনিটরিং সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। আমি নিজে মনিটরিং সেন্টারে থানায় সেবাগ্রহীতাদের এবং ভুক্তভোগীদের সাথে ভিডিও কলে সরাসরি কথা বলব যাতে একজন ভুক্তভোগী থানায় এসে সর্বোচ্চ সেবাটি পেতে পারেন। ঢাকা রেঞ্জের প্রতিটি থানাকে বাংলাদেশ পুলিশের রোল মডেল থানা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।