সুজন কৈরী: পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনার সুযোগ আইনিভাবে বৈধ হলেও নৈতিকভাবে তা গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। শুক্রবার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে (এফডিসি) এবারের বাজেট নিয়ে আয়োজিত এক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ছায়া সংসদে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে, তা পুরোপুরি ফেরত আনা সম্ভব নয়। চুরি করা টাকা ফেরত আনার জন্য পাচার করেনি পাচারকারীরা। তাই পাচার হওয়া অর্থের খুব সামান্যই দেশে ফেরত আনা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে এক শ্রেণীর মানুষের কাছে প্রচুর টাকা রয়েছে, যে টাকা নানাভাবে পাচার হচ্ছে। যেসব দেশে টাকা পাচার করা হয়, সেসব দেশের সরকার অর্থের বৈধতা যাচাই না করেই তা বিনিয়োগের সুযোগ করে দিচ্ছে। সেক্ষেত্রে দেশে কিছু টাকা ফেরত এলে অসুবিধা কোথায়? তাই পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত মন্দের ভালো। সরকার বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থসিদ্ধির জন্য কাজ করছে না।
মন্ত্রী বলেন, পাচার হওয়া অর্থ এবারের বাজেটে দেশে ফেরত আনার সুযোগ আইনগতভাবে বৈধ করা হলেও নৈতিকভাবে তা গ্রহণযোগ্য নয়।
সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, এবারের বাজেটে দেখা যাচ্ছে, দেশের বিদ্যমান মানি লন্ডারিং আইনের যথাযথ প্রয়োগ না করে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা অর্থ পাচারকারী দুষ্কৃতিকারীদের প্রশয় দেয়ার সামিল। এতে মনে হতে পারে মাত্র ৭ শতাংশ কর পরিশোধের মাধ্যমে অর্থ পাচারকারীদের দায়মুক্তি সনদ দেওয়া হচ্ছে।
নতুন এই বাজেটে ব্যবসায়ী, বিত্তবান, মুনাফাভোগী ও অর্থ পাচারকারীদের স্বার্থ বেশি দেখা হয়েছে। জনমনে ধারণা হতে পারে যারা সরকার বানায় আর সরকার ফেলায় তাদেরকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবারের বাজেটে।
তিনি বলেন, গত ২ বছর ধরে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব করোনায় আক্রান্ত। ব্যবসা-বাণিজ্য জীবন-জীবিকা ছিলো প্রায় অচল। তারপরও কিভাবে, কাদের সহযোগিতায় অর্থ পাচারকারীরা বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমান টাকা সুইসব্যাংক, দুবাই, সিঙ্গাপুর, কানাডায় পাচার করলো তা খতিয়ে দেখা জরুরী।
কিরণ আরো বলেন, জাতীয় সংসদে যখন এই বাজেট পাশ হচ্ছে তখন সিলেট, সুনামগঞ্জসহ দেশের কয়েকটি জেলা বন্যার পানিতে ভাসছে। চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে কয়েক লাখ মানুষ। বানভাসি এসব প্রান্তিক মানুষের পুর্নবাসনের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেখা যায়নি এই বাজেটে। দুর্যোগ মোকাবিলায় এবারের বাজেটে মোট বরাদ্দের মাত্র ১ দশমিক ৫ শতাংশ রাখা হয়েছে। অথচ দেশের সার্বিক দুর্যোগের ঝুঁকি বিবেচনায় মোট বাজেটের ৩ থেকে ৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন ছিলো।
প্রতিযোগিতায় সরকারি তিতুমীর কলেজকে পরাজিত করে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিকরা বিজয়ী হন। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ট্রফি ও সনদপত্র বিতরণ করা হয়। প্রতিযোগিতাটি আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে ইউনাইটেড কর্মাশিয়াল ব্যাংক।
ছায়া সংসদে বিচারক ছিলেন উন্নয়ন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক রিজভী নেওয়াজ, সাংবাদিক কাবেরী মৈত্রেয় ও সাংবাদিক আরিফুর রহমান।
আপনার মতামত লিখুন :