শিরোনাম
◈ চট্টগ্রাম সেনানিবাসে সেনাবাহিনী প্রধানকে বিদায়ী সংবর্ধনা  ◈ ঈদুল আজহার জামাতের জন্য প্রস্তুত জাতীয় ঈদগাহ ◈ পশু কোরবানির সঙ্গে দুর্নীতিও কোরবানি করতে হবে: জিএম কাদের ◈ ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে সুনির্দিষ্ট কোনো হামলা বা নাশকতার হুমকি নেই: র‌্যাব ডিজি ◈ জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা: ডিএমপি কমিশনার ◈ চাঁদের মাটি খুঁড়ে ‘বিশেষ’ নমুনা নিয়ে ফিরছে চ্যাং ◈ প্রধানমন্ত্রী সেন্টমার্টিন নিয়ে যে আশঙ্কা করেছেন, সেটা অমলূক নয়: কাদের ◈ ঈদ উপলক্ষে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির শুভেচ্ছা বিনিময় সোমবার ◈ আসুন ঈদুল আজহার ত্যাগের চেতনায় দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করি: প্রধানমন্ত্রী ◈ মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সেন্টমার্টিন পরিদর্শন বিজিবি মহাপরিচালকের

প্রকাশিত : ২৩ মে, ২০২৪, ০৫:৪৬ বিকাল
আপডেট : ২৪ মে, ২০২৪, ০৬:৩৪ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কিলিং মিশন আধা ঘন্টার, এমপি আনারকে টুকরো করে মশলা মাখানো হয়: ডিবি প্রধান 

মাসুদ আলম: [২] ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার পরিকল্পনা হয় দুই থেকে তিন মাস আগে। তারা পরিকল্পনা করেছিল ঢাকায় হত্যা করবে। কিন্তু বাংলাদেশ পুলিশের নজরদারি ও ঢাকায় হত্যাকাণ্ডের পরে সব হত্যার ক্লু পুলিশ বের করে নেবে বলেই হত্যাকারীরা কলকাতায় এ ঘটানা ঘটিয়েছে। নারীকে দিয়ে হানি ট্র্যাপ করা হয়েছে কি না, সেটাও আমরা তদন্ত করছি। 

[৩] বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। 

[৪] তিনি আরও বলেন, হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আখতারুজ্জামান শাহিনের গুলশান ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার দুটি ফ্ল্যাটে একাধিক বৈঠক করেছিলেন হত্যাকারীরা। অপরাধীরা বিদেশের মাটিতে অপরাধ করলে বাংলাদেশ পুলিশের নজরে আসবে না বলেই কলকাতা বেছে নেয়। বাংলাদেশের মাটিতে অপরাধ করার সাহস পায়নি। তবে তারা এ হত্যাকাণ্ডের পর পালিয়ে থাকতে পারেনি। আমরা তিনজকে গ্রেপ্তার করেছি। আরও কয়েকজনকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

[৫] হারুন বলেন, এমপি আনার প্রায়ই কলকাতায় আসা-যাওয়া করতেন। তাই কলকাতার মাটিতেই তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে সবাই মিলে। আনারকে হত্যার নেপথ্যে রাজনীতি বা অর্থনৈতিক যে কারণেই থাকুক না কেন বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে চেয়েছিল, কিন্তু পারেনি। 

[৬.১] পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা কলকাতায় গত ২৫ তারিখ একটি বাসা ভাড়া নেয়। পরিকল্পনা মোতাবেক মূল হত্যাকারী আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া তার সহযোগী তানভীর ভূঁইয়া এবং আখতারুজ্জামান শাহিনের গার্লফ্রেন্ড শিলাস্তি রহমান গত মাসের ৩০ তারিখ যান কলকাতায়। সেখানে আগে থেকেই ভাড়া করে রাখা নিউটাউন এলাকার সঞ্জিভা গার্ডেনের একটি ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটে ওঠেন তারা। 

[৬.২] কলকাতায় আগে থেকেই অবস্থান করছিলেন আখতারুজ্জামানের দুই সহযোগী সিয়াম ও জিহাদ। সেখানে বসে তারা এমপি আনারকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। কিলিং মিশনে নেতৃত্ব দেন  খুলনা অঞ্চলের কুখ্যাত সন্ত্রাসী শিমুল ভূঁইয়া। তিনি চরমপন্থী সংগঠন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম শীর্ষ নেতা। এ ঘটনায় ঢাকায় ধরা পড়ার পর পুলিশের কাছে শিমুল ভূঁইয়া নিজেকে সৈয়দ আমানুল্লাহ নামে পরিচয় দিয়েছেন। আমানুল্লাহ নামে তিনি পাসপোর্টও করেন। 

[৭] ডিবি প্রধান আরও বলেন,  হত্যার পুরো দায়িত্ব আমানকে বুঝিয়ে দিয়ে ১০ মে দেশে ফিরে আসেন আখতারুজ্জামান। এমপি আনার যে ১২ মে কলকাতায় যাবেন তা আগে থেকেই জানতেন আখতারুজ্জামান। ১২ মে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্ত দিয়ে কলকাতায় যান এমপি আনার। প্রথম দিন তিনি তার বন্ধু গোপালের বাসায় থাকেন। পরদিন ১৩ মে কৌশলে এমপি আনারকে নিউটাউনের সেই ফ্ল্যাটে ডেকে নিয়ে যায় হত্যাকারীরা।

[৬.১] হারুন বলেন, ফয়সাল নামে এক ব্যক্তি এমপি আনারকে ১৩ মে দুপুরে সাদা গাড়িতে রিসিভ করে। গাড়ি চালক ছিলো রাজা। পরে মূল হত্যাকাণ্ড সংগঠিতকারী আমানুল্লাহ ও ফয়সালসহ আনার ওই ফ্ল্যাটে যান। মোস্তাফিজ নামে আরও একজন ওই ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে। জিহাদ ও সিয়াম নামে হত্যাকণ্ডে জড়িত আরও দুজন সেখানে ছিলেন। 

[৬.২] দুপুর ২টা ৫১ মিনিটে এমপি আনার ওই বাসায় যান। এ সময় তারা এমপির কাছে আখতারুজ্জামানের পাওনা টাকা পরিশোধের কথাও বলেন। বিষয়টি নিয়ে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে সবাই মিলে আনারকে জাপটে ধরে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেন। মাত্র আধা ঘণ্টার মধ্যে সম্পন্ন করেন হত্যাকাণ্ড। হত্যার পর আমান বিষয়টি আখতারুজ্জামানকে জানান।

[৭.১] ডিবি প্রধান বলেন, আখতারুজ্জামানের পরামর্শমতো লাশ গুম করতে এমপি আনারকে টুকরো টুকরো করে হাড্ডি থেকে মাংস আলাদা করে। এরপর ফ্ল্যাটের কাছেই শপিংমল থেকে আনা হয় দুটো বড় ট্রলিব্যাগ ও পলিথিন। পরে টুকরোগুলো পলিথিনে পেঁচিয়ে ট্রলিব্যাগে ভরা হয়। এরপর লাশ খণ্ডবিখণ্ড করে মসলা মিশিয়ে ট্রাভেল ব্যাগে করে ভিন্ন ভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন দিন বাইরে বের করে নিয়ে যায়। 

[৭.২] ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে ঘরের রক্তের দাগ পরিষ্কার করে তারা। মাংস নিয়ে যাওয়ার সময় যাতে কেউ আটকালেও বুঝতে না পারে, সে জন্য মাংসের সঙ্গে মসলা মিশিয়ে খাবার উপযোগী মাংসের মতো বানানো হয়।

[৭.৩] হত্যাকাণ্ডের পরদিন বিকেলে একটি ট্রলিব্যাগ হাতে নিয়ে বাসা থেকে বের হন আমান। জিজ্ঞাসাবাদে আমান পুলিশকে জানিয়েছেন, বাসা থেকে বের হয়ে পাশের একটি শপিংমলের সামনে ট্রলিব্যাগটি তিনি সিয়ামের হাতে তুলে দেন। সিয়াম ব্যাগ নিয়ে আগে থেকেই ভাড়া করে রাখা গাড়ি নিয়ে অজ্ঞাত স্থানের দিকে চলে যান। 

[৭.৪] আরেকটি ব্যাগ বাসাতেই ছিল। ওই ব্যাগ থেকে দুর্গন্ধও ছড়ানো শুরু করেছিল। সহযোগীদের ট্রলিটি অন্য কোথাও ফেলে দেয়ার নির্দেশনা দিয়ে ১৫ মে শিলিস্তাকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন আমান। এরপর ১৬ তারিখে আসেন মুস্তাফিজ। শাহিন ১৮ মে আবারও ভারত হয়ে নেপালে চলে যান। ২১ মে নেপাল থেকে চলে যান দুবাই। ২২ মে দুবাই থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান শাহিন।

[৮] ডিবি প্রধান বলেন, মরদেহ পাওয়ার আশা খুবই কম। তারপরও চেষ্টা করছি কিছু খণ্ড অন্তত উদ্ধার করার। আমানুল্লাহ পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা। বর্তমানে আমানুল্লাহ ও মূল পরিকল্পনাকারী শাহীনের গার্লফ্রেন্ড শিলাস্তি রহমান ডিবির হাতে আটক রয়েছে। তদন্তকারী সংস্থাকে বিভ্রান্ত করতে হত্যাকারীরা ভিকটিমের মোবাইল থেকে একের পর এক মেসেজ পাঠিয়েছে একেকজনকে। একেক সময় মোবাইল নিয়ে গেছে এক একটি জায়গায় যাতে নির্দিষ্ট জায়গা লোকেট করতে না পারে তদন্তকারীরা। 

[৯] হারুন আরও বলেন, কলকাতা পুলিশের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে।  প্রয়োজনে আমরাও সেখানে গিয়ে তদন্ত করব। 

[১০] তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, এই খুনের জন্য আনোয়ারুলের বন্ধু শাহিনের সঙ্গে তার চুক্তি হয় আমানের। আনোয়ারুলের সঙ্গে শাহিনের সোনা চোরাচালান ও হুন্ডির ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথ্য পাচ্ছে। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব

এসবি২

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়