সালেহ্ বিপ্লব: পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী উৎসবের বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যদিয়ে ‘বিশ্বায়নে ৭ই মার্চের মহাকাব্য ও ভারতের ভূমিকা’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উম্মোচন করা হয়েছে। বাংলাদেশী লেখক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক মোহাম্মদ সেলিম রেজার লেখা গবেষণাধর্মী এই বইটি প্রকাশ করেছে যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু রিসার্চ এন্ড কালচারাল ফাউন্ডেশন এবং পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রকাশনা সংস্থা বঙ্গবন্ধু পাবলিশিং হাউজ।
সোমবার বিকেলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ইনস্টিটিউট অডিটোরিয়ামে বইটির মোড়ক উম্মোচন করেন কোলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের মিনিস্টার (পলিটিক্যাল) এন্ড হেড অব চ্যান্সারি শিকদার মোহাম্মদ আশরাফুর রহমান। বঙ্গবন্ধু রিসার্চ এন্ড কালচারাল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী সভাপতি সুকেশ কুমার মন্ডলের সভাপতিত্বে বই প্রকাশ ও গুণীজন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে লেখক মোহাম্মদ সেলিম রেজাসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক. গবেষক, কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, সাংবাদিক এবং শিক্ষাবিদরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশের বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সাব্রিনা খান তন্দ্রার সূচনা সংগীতের মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী উৎসব ও বই প্রকাশ অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। প্রাণবন্ত আলোচনায় বক্তারা বিশ্বের প্রামাণ্য ঐতিহ্যের (ডকুমেন্টারী হেরিটেজ) অংশ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণকে মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে সমগ্র বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ এবং স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে বিশ্ব ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
তারা বলেন, কোনো ধরনের আপোসের পথে না গিয়ে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে ৩০ লাখ মানুষ জীবন উৎসর্গ করে, যা বিশ্ব ইতিহাসে নজীরবিহীন। এই ভাষণের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, নেতৃত্বের সর্বোচ্চ দেশাত্ববোধ, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে স্থির এবং লক্ষ্য অর্জনে ¯পষ্ট দিকনির্দেশনা। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের মূল লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ ও নিয়ন্ত্রণ থেকে বাঙালির জাতীয় মুক্তি। সময়ের পরিসীমায় গণ্ডিবদ্ধ না থেকে তা হয় কালোত্তীর্ণ ও প্রেরণাদায়ী। এ ভাষণের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো এর কাব্যিক গুণ, শব্দশৈলী ও বাক্যবিন্যাস- যা হয়ে ওঠে গীতিময় ও সারাবিশে^ অনুরণিত মহাকাব্য হিসেবে।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারতের অবদান চিরস্মরণীয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি মানুষকে ভারত যেমন আশ্রয়-খাদ্য-রসদসহ সবরকম সহায়তা দিয়েছে, তেমনি হাজার হাজার ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। সে কারণে ভারত-বাংলাদেশ দুদেশের বন্ধুত্ব রক্তের অক্ষরে লেখা। ভারত সরকারের সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুরাগী নেতৃবৃদ কলকাতাসহ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থান করে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন। সেসময় কলকাতার কবি-সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবীসহ সকলেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য ভূমিকা রেখেছিলেন।
অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে তার আত্মার শান্তি কামনা করা হয়। সেইসঙ্গে গভীর কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করা হয় বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের জনগণের একাত্মতা ও আত্মত্যাগ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশ ও ভারত দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মৈত্রীর বন্ধন দৃঢ় থেকে আরো দৃঢ়তর হবে বলে বক্তরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে দুই বাংলার শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এছাড়া কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধী ও বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে স্মারক দু’টি গাছ রোপন করা হয়।
আপনার মতামত লিখুন :