কোরআনুল কারিমের অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
সুরা : আনআম, আয়াত : ৫১-৫২
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে
وَ اَنۡذِرۡ بِهِ الَّذِیۡنَ یَخَافُوۡنَ اَنۡ یُّحۡشَرُوۡۤا اِلٰی رَبِّهِمۡ لَیۡسَ لَهُمۡ مِّنۡ دُوۡنِهٖ وَلِیٌّ وَّ لَا شَفِیۡعٌ لَّعَلَّهُمۡ یَتَّقُوۡنَ ﴿۵۱﴾
وَ لَا تَطۡرُدِ الَّذِیۡنَ یَدۡعُوۡنَ رَبَّهُمۡ بِالۡغَدٰوۃِ وَ الۡعَشِیِّ یُرِیۡدُوۡنَ وَجۡهَهٗ ؕ مَا عَلَیۡكَ مِنۡ حِسَابِهِمۡ مِّنۡ شَیۡءٍ وَّ مَا مِنۡ حِسَابِكَ عَلَیۡهِمۡ مِّنۡ شَیۡءٍ فَتَطۡرُدَهُمۡ فَتَكُوۡنَ مِنَ الظّٰلِمِیۡنَ ﴿۵۲﴾
সরল অনুবাদ
(৫১) আর আপনি এর দ্বারা তাদের সতর্ক করুন, যারা ভয় করে যে তাদেরকে তাদের রবের কাছে সমবেত করা হবে এমন অবস্থায় যে তিনি ছাড়া তাদের জন্য থাকবে না কোনো অভিভাবক বা সুপারিশকারী। যাতে তারা তাকওয়ার অধিকারী হয়।
(৫২) আর যারা তাদের রবকে ভোরে ও সন্ধ্যায় তার সন্তুষ্টি লাভের জন্য ডাকে, তাদের আপনি বিতাড়িত করবেন না। তাদের কাজের জবাবদিহির দায়িত্ব আপনার ওপর নেই এবং আপনার কোনো কাজের জবাবদিহির দায়িত্ব তাদের ওপর নেই যে আপনি তাদের বিতাড়িত করবেন; করলে আপনি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
সুরা আনআমের ৫১ নম্বর আয়াতে বলা হচ্ছে যে যারা আখিরাতে নিশ্চিত বিশ্বাসী আলোচ্য আয়াতে তাদের দিকে মনোযোগ দানের নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর কাছে একত্রিত হওয়ার আশঙ্কা করে, তাদের কোরআন দ্বারা ভীতি প্রদর্শন করুন।’ কারণ, তারাই এর দ্বারা উপকৃত হবে। অর্থাৎ এ ধরনের লোকদেরকেই ভয় দেখানোয় লাভ আছে। নচেৎ যারা পুনরুত্থান এবং হাশরের মাঠে একত্রিত হওয়া ইত্যাদির ওপর বিশ্বাসই রাখে না, তারা তো তাদের কুফরি ও অমান্য করার নীতির ওপরেই কায়েম থাকে।
এ ছাড়া এতে সেই কিতাবধারী, কাফের এবং মুশরিকদের মতের খণ্ডনও করা হয়েছে, যারা তাদের পূর্বপুরুষ এবং প্রতিমাদেরকে নিজেদের সুপারিশকারী মনে করত। অনুরূপ ‘অভিভাবক ও সুপারিশকারী থাকবে না’ কথার অর্থ হলো— তাদের জন্য, যারা জাহান্নামের আজাবের যোগ্য বিবেচিত হয়ে গেছে। কেননা মুমিনদের জন্য তো আল্লাহর নেক বান্দারা আল্লাহর নির্দেশে সুপারিশ করবেন। অর্থাৎ সুপারিশের অস্বীকৃতি কাফের ও মুশরিকদের জন্য।
৫২ নম্ব আয়াতে বলা হচ্ছে, এই সহায়-সম্বলহীন গরিব মুসলিমগণ, যারা পূর্ণ নিষ্ঠার সাথে তাদের প্রতিপালককেই ডাকে। অর্থাৎ তাঁর ইবাদত করে, আপনি মুশরিকদের খোঁটা দেওয়া অথবা এই দাবি করার কারণে তাদের আপনার কাছ থেকে এ কারণে দূর করবেন না যে- তারা বলে ‘হে মুহাম্মাদ! তোমার আশপাশে তো ফকির-মিসকিনদেরই ভিড়, তুমি ওদের দূর করো, তাহলে আমরা তোমার সাথে বসব।’ বিশেষ করে যখন তাদের কর্মের জবাবদিহির দায়িত্ব আপনার নয় এবং আপনার কোনো কর্মের জবাবদিহির দায়িত্বও তাদের নয়। আপনি যদি এ রকম করেন, তবে তা জুলুম হবে, যা আপনার মর্যাদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ থেকে উদ্দেশ্য হলো, উম্মতকে এ কথা বোঝানো যে সহায়-সম্বলহীন লোকদের তুচ্ছ ভাবা অথবা তাদের সংস্রব থেকে দূরে থাকতে চেষ্টা করা এবং তাদের সাথে কোনো সম্পর্ক না রাখা ইত্যাদি হলো মূর্খদের কাজ, ঈমানদারদের নয়।
ঈমানদাররা তো ঈমানদারদের সাথে ভালোবাসা রাখে, যদিও তারা গরিব-অভাবী হয় তবুও। উৎস: কালের কণ্ঠ