নিজস্ব প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগের টানা কয়েক মেয়াদে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার সময় দেশে শিকারি সংবাদিকতা হয়েছে দাবি করে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেছেন, সামনের দিনে যাতে শিকারি সাংবাদিকতার ফাঁদে না জড়িয়ে যাই সেই চেষ্টা করতে হবে। এজন্য সাংবাদিক সংগঠনগুলো বেশি ভূমিকা রাখতে পারে। নিজের ঘর নিজেকে পরিষ্কার করতে হবে। সাংবাদিকরা গণমাধ্যমকে যদি ফ্যাসিবাদের দোসরদের হাত থেকে বের করে না নিয়ে আসে তাহলে তো সরকার করতে পারবে না।
তিনি বলেন, সরকার আইন করে, পুলিশ দিয়ে গণমাধ্যম থেকে সাংবাদিকদের তুলে নিয়ে যাবে সেটা তো হতে পারে না। কারও বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধ থাকলে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু কেউ রাজনৈতিকভাবে ফ্যাসিবাদের সমর্থক ছিলো সেই কারণে কাউকে গ্রেফতার, চাকরিচ্যুতি চাই না।
রোববার (১১ মে) বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি’র (ডিআরইউ) শফিকুল কবির মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকদের মধ্যে সার্টিফিকেট বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
গত ১৮ এপ্রিল আন্তর্জাতিক প্রেস এজেন্সী- প্রেসেঞ্জা এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি’র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘রিপোর্টিং অন নন-ভায়োলেন্স এ্যাপ্রোচ’ শীর্ষক কর্মশালায় অংশ নেয়া শতাধিক সাংবাদিকের মধ্যে অনুষ্ঠানে সার্টিফিকেট তুলে দেয়া হয়।কর্মশালাটি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, আর্জেন্টিনা, চিলি এবং ইটালী থেকে একযোগে ওয়েবিনার-এ পরিচালিত হয়।
অনুষ্ঠানে ডিআরইউ’র পক্ষ থেকে প্রধান অতিথির হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেয়া হয়।
আওয়ামী লীগের টানা কয়েক মেয়াদে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার সময় দেশে শিকারি সংবাদিকতা হয়েছে দাবি করে ফারুক ওয়াসিফ বলেছেন, সামনে শিকারি সাংবাদিকতার ফাঁদে না জড়িয়ে যাই, সেই চেষ্টা করতে হবে। এজন্য সাংবাদিক সংগঠনগুলো বেশি ভূমিকা রাখতে পারে।
জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের সময়ের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, নানা ধরণের চাপের মধ্যেও সাংবাদিকদের মধ্যে অনেকে দেশের মানুষের কাছে সত্যটা সাহসের সঙ্গে তুলে ধরেছেন। মানুষকে জানাতে পেরেছে। সবাই না হলেও আমরা অনেকেই ছিলাম। আর আমরা ছিলাম বলেই আলোটা জ্বলেছিলো। একটা ফ্যাসিবাদ তাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিলো। এটা আশার জায়গা। এগুলো আমাদের মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে।
গত ১৫ বছরে পিআইবির বাজেট বাড়েনি এমনটা জানিয়ে তিনি বলেন, সাড়ে ১০কোটি টাকার বাজেট এতদিন ধরে চলে আসছে। এরমধ্যে বেতন ভাতা দেয়ার পর আড়াই কোটি থাকে। যা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে বাকি কাজ করতে হয়। এবার আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। আশা করি বাজেট বাড়বে।
অনুষ্ঠানে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা বলেন, সাংবাদিকদের কাজ করার ক্ষেত্রে সবদিক, সব পরিস্থিতির বিষয় মাথায় রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে নন-ভায়োলেন্স এ্যাপ্রোচ নিয়ে কর্মশালা হয়েছে এটা রিপোর্টারদের জন্য কাজ করতে সহায়ক হবে বলে আমার বিশ্বাস।
সংবাদ সংস্থা প্রেসেঞ্জাকে এমন সুযোগ করে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আবু সালেহ আকন বলেন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সদস্যদের পেশাগত দক্ষতা বাড়াতে ভবিষ্যতে আরও দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে আমরা কাজ করবো। যাতে সদস্যরা সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন বিষয়ে নিজেদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন।
অনুষ্ঠানে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল বলেন, প্রেসেঞ্জা-ডিআরইউ আগামী দিনে আরও নতুন নতুন বিষয় নিয়ে কাজ করবে। পাশাপাশি পিআইবির মতো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাসহ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে কাজ করা হবে। যাতে সদস্যদের নিজ নিজ অঙ্গনে পেশাগত কাজ করা আরও সহজ হয়।
‘রিপোর্টিং অন নন ভায়োলেন্স এ্যাপ্রোচ' শীর্ষক কর্মশালায় অংশগ্রহনকারীদের সার্টিফিকেট প্রদান অনুষ্ঠানে প্রেসেঞ্জা, ঢাকা ব্যুরো'র প্যানেল এডিটর শামসুল হক বসুনিয়া বলেন, প্রেসেঞ্জা ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যানিষ্ট মুভমেন্ট এর একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। এটি শান্তি ও অহিংসার খবরের স্বার্থে নিবেদিতপ্রান সংবাদ প্রতিষ্ঠান। যারা সারা বিশ্বের সাংবাদিকদের পেশাগত দক্ষতা ও উৎকর্ষতায় নন ভায়োলেন্স এ্যাপ্রোচকে এড্রেস করে থাকে।
ঢাকা ব্যুরো'র প্যানেল এডিটর শেখ আরীফ বলেন, আন্তর্জাতিক প্রেস এজেন্সী- প্রেসেঞ্জা বর্তমানে ১২টা ভাষায় সংবাদ প্রকাশ করে । অচিরেই বাংলা ভাষাকে তাদের সংবাদ পরিবেশনায় যুক্ত করতে যাচ্ছে। এতে করে বাংলা ভাষাভাষী মানুষ সহজে বিশ্বের সব গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ প্রেসেঞ্জার মাধ্যমে পড়ার সুযোগ পাবেন। শুধু তাই নয়, অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও প্রেসেঞ্জা তাদের কার্যালয় চালু করবে। এটা আমাদের অনেক বড় পাওয়া।
ডিআরইউ’র তথ্য-প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক বোরহান উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হাই তুহিন, নারী বিষয়ক সম্পাদক রোজিনা রোজী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মিজান চৌধুরী, কল্যাণ সম্পাদক রফিক মৃধা, কার্যনির্বাহী সদস্য আমিনুল হক ভুঁইয়া, সুমন চৌধুরী প্রমুখ।