দাঁতের সঠিক যত্নে নিয়মিত ব্রাশ করা কতটা জরুরি, সেটা নতুন করে বলার নেই। তবে অনেকেরই অভ্যাস সকালে ঘুম থেকে উঠে সরাসরি ব্রেকফাস্টে বসে পড়া, আর কেউ কেউ মনে করেন খাওয়ার আগেই ব্রাশ করা দাঁতের জন্য সবচেয়ে ভালো। কিন্তু বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে কোনটি দাঁতের জন্য সত্যিই উপকারী এই প্রশ্নই দীর্ঘদিন ধরে বিভ্রান্তির কারণ। দন্ত বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ বলছে, সঠিক সময় জানলেই দাঁতকে বহু সমস্যার হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব।
চিকিৎসকরা জানান, রাতে ঘুমের সময় মুখে লালার ক্ষরণ কমে যায়। এর ফলে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি দ্রুত হয় এবং দাঁতের ওপর তৈরি হয় ‘প্ল্যাক’ যা দীর্ঘমেয়াদে ক্যাভিটি, মাড়ির সংক্রমণ এবং মুখের দুর্গন্ধের কারণ হতে পারে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই ব্রাশ করলে এই জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া দূর হয়ে যায়। মুখ পরিষ্কার থাকে এবং দাঁত সারাদিনের জন্য আরও ভালোভাবে সুরক্ষিত হয়।
দাঁতের পেস্টে থাকা ফ্লুরোরাইডও এখানে বড় ভূমিকা রাখে। সকালে ব্রাশ করা মাত্র ফ্লুরোরাইড দাঁতের ওপরে একটি সুরক্ষামূলক স্তর তৈরি করে, যা খাবারের অ্যাসিড, চিনি বা চা–কফির মতো পানীয় থেকে এনামেলকে রক্ষা করে। বিশেষ করে ব্রেকফাস্টে যদি কমলালেবুর রস, দই, মিষ্টি বা কফি-চা থাকে, তবে আগেই ব্রাশ করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ এই ধরনের খাবার দাঁতের এনামেলকে সাময়িকভাবে নরম করে দেয়; আর নরম এনামেলে ব্রাশ করলে ক্ষয়ের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
তবে কেউ যদি খাওয়ার পর ব্রাশ করতে চান, সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অন্তত ৩০ থেকে ৬০ মিনিট অপেক্ষা করতেই হবে। এই সময়ের মধ্যে মুখের লালা খাবারের অ্যাসিড নিরপেক্ষ করে দেয় এবং এনামেল স্বাভাবিক শক্তি ফিরে পায়। সেই সময় ব্রাশ করা তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। খাওয়ার পরপরই হালকা গরম জল দিয়ে ভালোভাবে কুলকুচি করলেও মুখের অ্যাসিড এবং খাবারের কণা দ্রুত কমে যায়।
দন্ত চিকিৎসকদের মতে, সারাদিনে দু'বার ব্রাশ করা সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে শোওয়ার আগে সবচেয়ে উপকারী অভ্যাস। ব্রাশ অবশ্যই নরম হওয়া উচিত এবং ব্রাশ করার সময় অতিরিক্ত জোর প্রয়োগ থেকে বিরত থাকা দরকার। পাশাপাশি নিয়মিত ফ্লস করা এবং প্রয়োজনে মাউথওয়াশ ব্যবহার দাঁতের সামগ্রিক স্বাস্থ্য আরও উন্নত করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সব দিক বিচার করলে ব্রেকফাস্টের আগে ব্রাশ করাই দাঁতের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ। আর যদি কারও অভ্যাস বা পরিস্থিতির কারণে খাওয়ার পর ব্রাশ করতে হয়, তবে কিছুটা অপেক্ষা করে ধীরে ও সঠিক পদ্ধতিতে ব্রাশ করাই সর্বোত্তম। আধুনিক দন্তচিকিৎসা বলছে, এই সামান্য সচেতনতা ও সময়জ্ঞান দাঁতের দীর্ঘমেয়াদি সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সূত্র: জনকণ্ঠ