আমরা অন্য দেশে যেতে হলে কী চিন্তা করি? প্লেনে যেতে হবে। কিন্তু যেসব দেশে বিমানবন্দরই নেই, সেখানে কীভাবে যাব? ভাবছেন, এমনটা আবার হয় নাকি! হয়। বিশ্বের এমন পাঁচটি দেশ আছে, যেখানে আসলে নিজেদের কোনো বিমানবন্দরই নেই। তাহলে সেসব দেশে পর্যটকেরা কীভাবে যান? যেতে চাইলে একটু বেশি পরিকল্পনা, কখনো মনোরম সড়কপথ, কখনো নৌযাত্রা, আবার কখনো দুর্গম পথে হাঁটার প্রয়োজনও হতে পারে। প্রশান্ত মহাসাগরের লুকানো দ্বীপ থেকে ইউরোপের নির্জন কোণ—এসব দেশে পৌঁছানো যেমন চ্যালেঞ্জিং, তেমনই দারুণ অভিজ্ঞতার দরজা খুলে দেয়। চলুন জেনে আসি বিমানবন্দরবিহীন পাঁচটি দেশে যাওয়ার উপায়।
লিখেটেনস্টাইন
মধ্য ইউরোপের ছোট দেশ লিখটেনস্টাইন। এর চতুর্দিকে স্থলসীমা। দেশটি অস্ট্রিয়া ও সুইজারল্যান্ডের মাঝখানে অবস্থিত। একটি সমৃদ্ধ সাংবিধানিক রাজতন্ত্র হিসেবে দেশটিকে রাজপুত্র শাসন করেন।
উচ্চ মাথাপিছু আয়, শক্তিশালী ব্যাংকিং ব্যবস্থা, কম অপরাধ এবং শিল্পোন্নত অর্থনীতির জন্য পরিচিত। সরকারি ভাষা জার্মান, রাজধানী ভাদুজ। এর মুদ্রা সুইস ফ্রাঁ। মাত্র ৬২ বর্গমাইল (১৬০ বর্গকিলোমিটার) আয়তনের লিখটেনস্টাইন বিশ্বের ষষ্ঠ ক্ষুদ্রতম দেশ। এটি মনোরম ইউরোপীয় আল্পস পর্বতের আপার রাইন ভ্যালিতে অবস্থিত।
কীভাবে যাবেন
লিখটেনস্টাইনে কোনো বাণিজ্যিক বিমানবন্দর নেই, তবে বালজার্সে একটি হেলিপোর্ট আছে। নিকটতম বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে আছে সুইজারল্যান্ডের সেন্ট গ্যালেন–আলটেনরাইন এবং জার্মানির ফ্রিডরিখশাফেন।
আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক জুরিখ বিমানবন্দর। সেখান থেকে ট্রেন বা বাসে বুচস বা সারগানস পৌঁছে, তারপর পোস্টাল বাস বা লোকাল ট্রেনে লিখসটেনস্টাইন যাওয়া যায়।
অস্ট্রিয়া থেকেও একইভাবে ফ্লাইট ও সংক্ষিপ্ত সড়ক বা রেলপথ মিলিয়ে পৌঁছানো সম্ভব চতুর্দিকে স্থলবেষ্টিত ছোট্ট দেশটিতে।
বিশ্বের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম দেশ মোনাকো, যা ফ্রেঞ্চ রিভেইরার কোলে অবস্থিত এক আভিজাত্যপূর্ণ রাজ্য। বিলাসবহুল জীবনযাপন, ক্যাসিনো এবং আইকনিক গ্রাঁ প্রির জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত এই দেশ। মোনাকো জাতিসংঘের সদস্য হলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য নয়; অথচ এখানে ইউরো মুদ্রা ব্যবহার করা হয়।
কীভাবে যাবেন
মোনাকোয় কোনো বাণিজ্যিক বিমানবন্দর নেই, তবে ফন্টভিয়েতে একটি হেলিপোর্ট আছে। কাছের প্রধান বিমানবন্দর ফ্রান্সের নিস কোত দা’জুর বিমানবন্দর। সেখান থেকে ট্রেন, বাস বা ফ্রেঞ্চ রিভেইরার মনোরম সড়কপথে মোনাকো পৌঁছানো যায়। বিলাসবহুল অভিজ্ঞতা চাইলে নিস থেকে হেলিকপ্টারে করেও যাওয়া যায়।
ভ্যাটিকান সিটি
পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট স্বাধীন রাষ্ট্র ভ্যাটিকান সিটি, যা ইতালির রোম শহরের ভেতরে অবস্থিত একটি নগর রাজ্য। এটি রোমান ক্যাথলিক চার্চের প্রশাসনিক ও আধ্যাত্মিক কেন্দ্র এবং সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা, ভাটিকান মিউজিয়াম, সিস্টাইন চ্যাপেলসহ অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনায় সমৃদ্ধ।
১৯২৯ সালের ল্যাটারান চুক্তির মাধ্যমে আধুনিক ভ্যাটিকান সিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। নিজস্ব সরকার, মুদ্রা (ইউরো), ডাক বিভাগ ও পুলিশ বাহিনী আছে দেশটির। এর জনসংখ্যার বড় অংশই ধর্মযাজক ও কর্মীদের নিয়ে গঠিত।
কীভাবে যাবেন
নিকটতম বিমানবন্দর ইতালির রোমের লেওনার্দো দা ভিঞ্চি–ফিউমিচিনো বিমানবন্দর। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে, ট্যাক্সিতে বা গণপরিবহনে সহজেই ভ্যাটিকান সিটিতে পৌঁছানো যায়। রোমের কেন্দ্রস্থলে অবস্থান হওয়ায় এই নগর রাজ্যে যাতায়াত অত্যন্ত সহজ।
সান ম্যারিনো
চারদিকে ইতালির স্থলসীমা পরিবেষ্টিত ছোট্ট পর্বত রাষ্ট্র সান ম্যারিনো, যা বিশ্বের প্রাচীনতম প্রজাতন্ত্র। এটি ৩০১ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত। রাজধানী সিটা ডি সান ম্যারিনো মধ্যযুগীয় সৌন্দর্য অনবদ্য। পর্যটন এ দেশের প্রধান আয়ের উৎস। পাশাপাশি সিরামিক, টেক্সটাইল, ওয়াইনসহ বিভিন্ন শিল্প আছে।
কীভাবে যাবেন
সান ম্যারিনোতে কোনো বাণিজ্যিক বিমানবন্দর নেই, তবে বোরগো মাজিওরে একটি হেলিপোর্ট এবং টোরাচ্চিয়ায় একটি ছোট ঘাসের রানওয়ে আছে। নিকটতম প্রধান বিমানবন্দর হলো রিমিনির ফেদেরিকো ফেলিনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং বোলোনিয়া গুইলেমো মারকোনি বিমানবন্দর। সেখান থেকে গাড়ি, বাস বা বিভিন্ন গণপরিবহনের মাধ্যমে সান ম্যারিনোতে পৌঁছানো যায়।
অ্যান্ডোরা
স্পেন ও ফ্রান্সের মাঝখানে পিরিনিজ পর্বতমালায় অবস্থিত ছোট্ট রাজ্য অ্যান্ডোরা। মনোরম পাহাড়, বিশ্বমানের স্কি রিসোর্ট এবং ডিউটি-ফ্রি কেনাকাটার জন্য বিখ্যাত। রাজধানী অ্যান্ডোরা লা ভেলা ইউরোপের সর্বোচ্চ উচ্চতার রাজধানী শহর। সরকারি ভাষা কাতালান এবং অর্থনীতি মূলত পর্যটন ও ব্যাংকিং খাতনির্ভর।
কীভাবে যাবেন
অ্যান্ডোরায় কোনো বিমানবন্দর বা রেলসেবা নেই, তাই পুরোপুরি সড়কপথেই যাতায়াত করতে হয়। স্পেন থেকে নিকটতম বিমানবন্দর হলো আন্দোরা–লা সেউ দ’উর্জেল (১২ কিলোমিটার দূরে), ইয়েইদা–আলগুয়ের এবং জিরোনা–কস্টা ব্রাভা বিমানবন্দর।
ফ্রান্স থেকে কারকাসন ও পেরপিগনান-রিভেসালতেস বিমানবন্দর সবচেয়ে কাছে। এসব বিমানবন্দর থেকে বাস, ট্যাক্সি বা গাড়ি ভাড়া করে সহজেই অ্যান্ডোরায় পৌঁছানো যায়।
সূত্র: আউটলুক ট্রাভেলার