শিরোনাম
◈ স্কুলে ভর্তির নীতিমালা সংশোধন, বয়সসীমা শিথিল করল মাউশি, রেজিস্ট্রেশনের বয়সে কঠোর বোর্ড ◈ ভূমিকম্প মোকাবিলায় জাপানের কাছ থেকে যা শিখতে পারে বাংলাদেশ ◈ খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে এভারকেয়ারে প্রধান উপদেষ্টা ◈ তালাক হলেও ফিরে আসার পথ—ইসলামী বিধান অনুযায়ী করণীয় ◈ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নির্বাচন দায়িত্বে নতুন এসপিদের ব্রিফ করবেন প্রধান উপদেষ্টা ◈ ইসির নিবন্ধন সার্টিফিকেট পেলো এনসিপি, প্রতীক ‘শাপলা কলি’ ◈ ক্লাসে না ফিরলে প্রাথমিক শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি ◈ ইসিকে তফসিল ঘোষণায় সময়সুবিধা বিবেচনার আহ্বান নাহিদ ইসলামের ◈ র‌্যাং‌কিং‌য়ের সেরা আটে মোস্তাফিজ, রিশাদ-ইমন-সাইফদের উন্ন‌তি ◈ ঢাকায় আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের ক্লাব, খেল‌বে লাতিন বাংলা সুপার কাপ

প্রকাশিত : ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৮:২৫ রাত
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৯:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বরেন্দ্রভূমিতে দ্রুত কমছে ফসলি জমি, খাদ্য নিরাপত্তায় বাড়ছে শঙ্কা

ইফতেখার আলম বিশাল, রাজশাহী প্রতিনিধি: রাজশাহীতে দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে কমছে কৃষিজমির পরিমাণ। উর্বর জমি দখল করে আবাসন, শিল্পকারখানা, পুকুর ও বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে ওঠায় কৃষিকাজে আগ্রহ হারিয়ে অনেক কৃষক শহরমুখী হচ্ছেন। তিন-চার ফসলি জমিও বসতবাড়ি, কলকারখানা ও পুকুর খননের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে কৃষিনির্ভর বরেন্দ্র অঞ্চলে খাদ্য ঘাটতির ঝুঁকি বাড়ছে।

প্রভাবশালী ভূমিগ্রাসী চক্র কৌশলে প্রথমে ফসলি জমির মাঝখানে ছোট আকারে পুকুর খনন করে। পরবর্তীতে ওই পুকুরের কারণে আশপাশের জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বাধ্য হয়ে জমি লীজ দিতে সম্মত হন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুকুর ব্যবসায়ী জানান, “বিঘাপ্রতি ৩০ হাজার টাকা খরচ করলেই রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসন ও সাংবাদিক সবাইকে ম্যানেজ করে ফসলি জমিতে পুকুর খনন করা যায়।”

তানোর ও আশপাশের চাঁন্দুড়িয়া, কামারগাঁ, নেজামপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় বিএমডিএর গভীর নলকূপ–সুবিধাভুক্ত শত শত একর ফসলি জমিতে পুকুর তৈরি হয়েছে। এসব জমি এখনো কৃষি শ্রেণিভুক্ত থাকায় পুকুর মালিকরা বছরে মাত্র ৬৪ টাকা খাজনা দিচ্ছেন, যেখানে প্রকৃত খাজনা এক হাজার টাকার বেশি হওয়া উচিত। এতে সরকার বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে। একইসঙ্গে জলাধার গড়তে গিয়ে গভীর নলকূপগুলোও অকেজো হয়ে পড়ছে।

ঐতিহাসিক বরেন্দ্রভূমির ৯ হাজার ৩২৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা একসময় ছিল মৌসুমি বৃষ্টিনির্ভর কৃষির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা শস্যভাণ্ডার। কিন্তু গত চার দশকে এই অঞ্চলের প্রায় ১ লাখ ৩২ হাজার হেক্টর কৃষিজমি কমে গেছে। ধানের জমিতে গড়ে উঠছে বাড়িঘর, ইটভাটা, ক্ষুদ্র শিল্পকারখানা, পুকুর ও ফলের বাগান। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ এলাকার হিসাব অনুযায়ী, গত দশকে রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৯০ হাজার হেক্টর আবাদি জমি হারিয়েছে।

অপরদিকে, নদীভাঙনে উদ্বাস্তু শত শত পরিবার প্রতিবছর বরেন্দ্র এলাকায় কৃষি জমিতে বসতি গড়ে তুলছে। বিশেষ করে রাজশাহীর পবা-গোদাগাড়ী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়নে এই প্রবণতা বাড়ছে।

কৃষিজমি রক্ষায় সরকার প্রণয়ন করেছে ‘ভূমি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও কৃষি ভূমি সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’। এই আইনে অনুমোদন ছাড়া কৃষিজমিতে পুকুর, আবাসন, শিল্পপ্রতিষ্ঠান নির্মাণকে দণ্ডনীয় অপরাধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে মাঠ পর্যায়ে এই আইন কার্যকর না হওয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক নাসির উদ্দিন বলেন, “আবাসন-নির্মাণ, পুকুর খনন ও ইটভাটা স্থাপনের কারণে লাগাতার আবাদি জমি কমছে। আইনের প্রয়োগ ও প্রশাসনের কার্যকর উদ্যোগ ছাড়া এই প্রবণতা থামানো কঠিন হবে। জমি কমতে থাকলে ভবিষ্যতে বর্ধিত জনসংখ্যার খাদ্যচাহিদা পূরণ বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।”

দেশে বর্তমানে মাথাপিছু কৃষিজমির পরিমাণ মাত্র ১৪ শতাংশ। জোনিং প্রকল্পের সর্বশেষ জরিপ জানায়, বরেন্দ্রভূমিতে প্রতিদিনই ২২০ হেক্টর কৃষিজমি হারিয়ে যাচ্ছে। এভাবে জমি কমতে থাকলে ২০৫০ সালে মাথাপিছু জমি দাঁড়াবে মাত্র ৬.২০ শতাংশে।

কৃষকেরা বলছেন, “আইন থাকলেও স্থানীয় প্রশাসন কার্যকর ভূমিকা নেয় না। ফলে একের পর এক কৃষিজমি উজাড় হয়ে যাচ্ছে।”

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন-এখনই সমন্বিত উদ্যোগ না নিলে বরেন্দ্রভূমির কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা ও সামগ্রিক অর্থনীতি বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়