শিরোনাম
◈ সারা দেশের নেতাকর্মীদের নতুন বার্তা দিল এনসিপি ◈ যেভাবে গ্রেপ্তার হলেন তৌহিদ আফ্রিদি, ভিডিও ভাইরাল ◈ ৮ ঘণ্টা অবরুদ্ধ জবি ভিসি, দাবি আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন শিক্ষার্থীরা ◈ ইসিতে ধাক্কাধাক্কি: রুমিন ফারহানার অনুসারীদের মহাসড়ক অবরোধ, এনসিপির বিক্ষোভ ◈ সাকিব আল হাসান আবারও বিশ্ব ক্রিকেটে এক অনন্য মাইলফলক স্পর্শ করলেন ◈ যুক্তরাষ্ট্রের পর্যটন ভিসার ফি বাড়ছে প্রায় ১৫০ শতাংশ ◈ বাবার পর এবার কনটেন্ট নির্মাতা তৌহিদ আফ্রিদি গ্রেপ্তার ◈ ডাকসুতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হল সম্পাদক হতে যাচ্ছেন সাফজয়ী নারী ফুটবলার রেহানা আক্তার ◈ নেপালকে হা‌রি‌য়ে জ‌য়ের ধারায় ফির‌লো বাংলাদেশ ◈ বাংলাদেশ-পাকিস্তানের বাণিজ্য সম্পর্ক বহুগুণ বাড়ানো সম্ভব : পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৪ আগস্ট, ২০২৫, ০৩:০৮ দুপুর
আপডেট : ২৫ আগস্ট, ২০২৫, ০৩:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ত্বকের যৌবন ফেরাতে ডায়েট: যেসব খাবারে দূর হবে বার্ধক্যের ছাপ

অল্প বয়সেই ত্বকে বয়সের ছাপ বা বলিরেখা দেখা দেওয়া আজকাল একটি সাধারণ সমস্যা। কর্মব্যস্ত জীবন, দূষণ, মানসিক চাপ এবং অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এর প্রধান কারণ। অনেকেই ত্বকের লাবণ্য ফেরাতে বিভিন্ন প্রসাধনীর উপর নির্ভর করেন, কিন্তু আসল সমাধান লুকিয়ে আছে আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায়। সঠিক পুষ্টি ত্বকের ভেতর থেকে কাজ করে এর স্বাভাবিক সৌন্দর্য ও সজীবতা ফিরিয়ে আনতে পারে।

আসুন, বৈজ্ঞানিক তথ্যের ভিত্তিতে জেনে নেওয়া যাক কোন খাবারগুলো আমাদের ত্বককে বার্ধক্যের ছাপ থেকে দূরে রাখতে পারে।

১. ক্যারোটিনয়েড সমৃদ্ধ রঙিন ফল ও সবজি

কেন জরুরি: ক্যারোটিনয়েড হলো এক ধরনের শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা উদ্ভিজ্জ খাবারে পাওয়া যায়। এটি ত্বকের কোষকে ফ্রি র‍্যাডিক্যালসের (Free Radicals) ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে। ফ্রি র‍্যাডিক্যালস হলো এক ধরনের অণু, যা পরিবেশের দূষণ, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার কারণে শরীরে তৈরি হয় এবং কোষের ক্ষতি করে বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।

কী খাবেন:

  • গাজর: বিটা-ক্যারোটিনের চমৎকার উৎস, যা শরীরে ভিটামিন 'এ'-তে রূপান্তরিত হয়। ভিটামিন 'এ' ত্বকের কোষ পুনর্গঠনে এবং শুষ্কতা দূর করতে সাহায্য করে।

  • টমেটো: লাইকোপিন নামক একটি শক্তিশালী ক্যারোটিনয়েডে ভরপুর। গবেষণা বলছে, লাইকোপিন ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর UV রশ্মি থেকে রক্ষা করতে সানস্ক্রিনের মতো কাজ করে।

  • মিষ্টি আলু, পেঁপে, আম ও পালং শাক: এগুলোতেও প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিনয়েড ও অন্যান্য অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যা ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে।

সূত্র: The American Journal of Clinical Nutrition-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ক্যারোটিনয়েড সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করেন, তাদের ত্বক সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বেশি সুরক্ষিত থাকে এবং ত্বকের গঠন উন্নত হয়।

২. ভিটামিন 'সি' – কোলাজেনের প্রাকৃতিক বুস্টার

কেন জরুরি: কোলাজেন হলো এক ধরনের প্রোটিন যা আমাদের ত্বককে টানটান, মসৃণ ও দৃঢ় রাখে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরে কোলাজেন উৎপাদন স্বাভাবিকভাবেই কমতে থাকে, ফলে ত্বকে বলিরেখা দেখা দেয়। ভিটামিন 'সি' কোলাজেন উৎপাদনে একটি অপরিহার্য উপাদান। এটি ছাড়া শরীর কোলাজেন তৈরি করতে পারে না।

কী খাবেন:

  • আমলকী: ভিটামিন 'সি'-এর অন্যতম সেরা প্রাকৃতিক উৎস।

  • লেবু ও কমলা: সাইট্রাস জাতীয় এই ফলগুলো শুধু ভিটামিন 'সি' নয়, অ্যান্টি-অক্সিডেন্টেও ভরপুর।

  • পেয়ারা, ক্যাপসিকাম, ব্রকলি ও স্ট্রবেরি: এই খাবারগুলোও ভিটামিন 'সি'-এর দারুণ উৎস এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে।

সূত্র: The National Institutes of Health (NIH) অনুসারে, ভিটামিন 'সি' ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় এবং কোলাজেন সংশ্লেষণে একটি অত্যাবশ্যকীয় ভূমিকা পালন করে। এটি ত্বকের ক্ষত সারাতেও সাহায্য করে।

৩. ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড – ত্বকের রক্ষাকবচ

কেন জরুরি: ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বকের কোষের ঝিল্লি (Cell Membrane) শক্তিশালী করে, যা ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের প্রদাহ (Inflammation) কমায়, যা ব্রণ এবং অন্যান্য ত্বকের সমস্যার অন্যতম কারণ। পাশাপাশি এটি ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করতেও ভূমিকা রাখে।

কী খাবেন:

  • সামুদ্রিক মাছ: স্যালমন, সার্ডিন, ম্যাকেরেল, হেরিং ইত্যাদি মাছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ পাওয়া যায়।

  • উদ্ভিজ্জ উৎস: যারা মাছ খান না, তাদের জন্য ফ্ল্যাক্সসিড (তিসি), চিয়া সিড, এবং আখরোট ওমেগা-৩-এর চমৎকার উৎস।

সূত্র: Journal of the American Academy of Dermatology-তে প্রকাশিত একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বকের প্রদাহ কমাতে এবং UV রশ্মির ফলে হওয়া ক্ষতি মেরামত করতে অত্যন্ত কার্যকর।

৪. পর্যাপ্ত পানি ও হাইড্রেশন

কেন জরুরি: আমাদের ত্বকের কোষগুলোর সঠিক কার্যকারিতার জন্য পানি অপরিহার্য। ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা হলে ত্বক শুষ্ক, নিস্তেজ এবং ক্লান্ত দেখায়। এতে বলিরেখা ও ফাইন লাইনস আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। পর্যাপ্ত পানি পান করলে শরীর থেকে টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ বেরিয়ে যায় এবং ত্বকের কোষে পুষ্টি পৌঁছাতে সাহায্য করে।

কী করবেন:

  • দৈনিক কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস (২-৩ লিটার) পানি পান করুন।

  • পানির পাশাপাশি শসা, তরমুজ, ডাবের পানি, এবং সবুজ শাকসবজি খান, কারণ এগুলোতেও প্রচুর পানি থাকে।

৫. প্রোটিন এবং ট্রেস মিনারেলস (জিঙ্ক, কপার, আয়রন)

কেন জরুরি: ত্বক মূলত প্রোটিন দিয়ে গঠিত। পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ না করলে ত্বকের কোষগুলো সঠিকভাবে পুনর্গঠিত হতে পারে না। এর পাশাপাশি কিছু খনিজ উপাদানও ত্বকের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

  • জিঙ্ক (Zinc): কোষের বৃদ্ধি, ক্ষত নিরাময় এবং প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

  • কপার (Copper): কোলাজেন এবং ইলাস্টিন (যা ত্বককে নমনীয় রাখে) তৈরিতে সহায়তা করে।

  • আয়রন (Iron): রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাধ্যমে ত্বকের কোষে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়, যা ত্বককে প্রাণবন্ত রাখে।

কী খাবেন:

  • প্রোটিন: ডাল, ডিম, মুরগির মাংস, মাছ, বাদাম, বীজ।

  • জিঙ্ক: কুমড়োর বীজ, ডাল, বাদাম, সামুদ্রিক খাবার।

  • কপার: কাজুবাদাম, ডার্ক চকোলেট, মাশরুম।

  • আয়রন: মসুর ডাল, পালং শাক, রেড মিট, কলিজা।

শেষ কথা

ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখা কেবল বাহ্যিক যত্নের বিষয় নয়, এটি একটি সামগ্রিক জীবনযাত্রার প্রতিফলন। উপরে উল্লিখিত খাবারগুলো আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় যোগ করার পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত ব্যায়াম এবং মানসিক চাপমুক্ত জীবনযাপন করার চেষ্টা করুন। এই সমন্বিত প্রচেষ্টাই আপনাকে ভেতর থেকে সুন্দর এবং স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বক পেতে সাহায্য করবে, যা আপনার আত্মবিশ্বাস বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে।

 
 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়