শিরোনাম
◈ আসিফ-ইশরাকের পরস্পর দোষারোপ, বাড়ছে উত্তাপ! ◈ উত্তরার অবৈধ ফার্নিচার মার্কেট: কোটি টাকার ভাড়া যাচ্ছে কার পকেটে? ◈ প্রতিষ্ঠানের ভুলে পরীক্ষাবঞ্চিত দুই শিক্ষার্থী: এক বছরের ক্ষতির দায় নেবে কে? ◈ উত্তরায় কিশোর গ্যাং দমনে যুদ্ধের ঘোষণা ডিসি মহিদুলের ◈ হাতিয়ায় গুজবের তোলপাড়: পুকুরে কুমির নয়, ছিল গুইসাপ! ◈ শাজাহানপুরে বিএনপিকে হুমকি দিয়ে আওয়ামী লীগের পোস্টার, রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়ানোর আশঙ্কা ◈ চুয়ান্ন বছরেও মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ হয়নি: উপদেষ্টা ফারুক ই আজম ◈ টাঙ্গুয়ার হাওরে ৫ পর্যটকের কারাদণ্ড ◈ ইরানের বিজয়ের কথা শুনেই রেজা পাহলভি হাসপাতালে ভর্তির খবর ভুয়া দাবি তাঁর কার্যালয়ের ◈ অন্তর্বর্তী সরকারের নিয়োগদাতা আমরা না: সারজিস আলম (ভিডিও)

প্রকাশিত : ২৬ জুন, ২০২৫, ০৮:৩৮ রাত
আপডেট : ২৭ জুন, ২০২৫, ০৩:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাচ্চারা কথা শুনছে না? জেদি হয়ে উঠছে? মনোবিদদের পরামর্শে জেনে নিন ৩টি কার্যকরী সমাধান

বর্তমান ডিজিটাল যুগে অভিভাবকত্বের চ্যালেঞ্জগুলো অনেকটাই ভিন্ন। স্মার্টফোনের প্রতি আসক্তি, ব্যস্ত কর্মজীবন এবং যৌথ পরিবারের অভাব—এই সবকিছুর প্রভাবে শিশুদের আচরণে পরিবর্তন আসছে। অনেক বাবা-মা অভিযোগ করেন, তাদের সন্তান কথা শুনতে চায় না, অল্পতেই জেদ করে এবং খিটখিটে আচরণ করে। এই সমস্যার সমাধানে বিশেষজ্ঞরা শাস্তিমূলক ব্যবস্থার পরিবর্তে মনস্তাত্ত্বিক এবং আচরণগত পদ্ধতি অবলম্বনের ওপর জোর দিচ্ছেন।

শিশু মনোবিজ্ঞান এবং প্যারেন্টিং বিষয়ক বিভিন্ন গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নিচে তিনটি বৈজ্ঞানিক ও কার্যকরী পদ্ধতি বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

১. কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন: শুধু নির্দেশ নয়, শুনুন এবং বুঝুন

অভিভাবকরা প্রায়শই শিশুদের নির্দেশ দেন, কিন্তু তাদের কথা শোনার ধৈর্য বা সময় দেখান না। এটি শিশুর মধ্যে একটি প্রতিরক্ষামূলক মনোভাব তৈরি করে, যার ফলে তারা নির্দেশ অমান্য করতে শেখে।

  • বিস্তারিত পদ্ধতি: শিশুকে কোনো কিছু বলার আগে তার মনোযোগ পুরোপুরি আকর্ষণ করুন। যদি সে খেলতে থাকে বা টিভি দেখে, তার সামনে গিয়ে চোখের দিকে তাকিয়ে, প্রয়োজনে তার কাঁধে হাত রেখে মৃদু স্বরে কথা বলুন। মনোবিদরা এই পদ্ধতিকে ‘সক্রিয় শ্রবণ’ (Active Listening) বলেন। শিশুর কথা বলার সুযোগ দিন। সে কী বলতে চায় বা কেন কাজটি করতে চাইছে না, তা আগে শুনুন। এতে সে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে এবং যোগাযোগের জন্য প্রস্তুত হয়।

  • বিশেষজ্ঞের মত: আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স (AAP) অনুসারে, শিশুর সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগের ভিত্তি হলো পারস্পরিক শ্রদ্ধা। আপনি যখন শিশুর কথা মন দিয়ে শোনেন, তখন সে বুঝতে পারে যে তার ভাবনা ও অনুভূতির মূল্য আছে। ফলে, সেও আপনার কথাকে গুরুত্ব দিতে শেখে। এর মাধ্যমে শুধু নির্দেশ পালন নয়, বরং একটি শক্তিশালী পারিবারিক বন্ধন তৈরি হয়।

  • উদাহরণ: "খেলনাগুলো গুছিয়ে রাখো" বলার পরিবর্তে, তার পাশে বসে বলুন, "ওয়াও! তুমি তো দারুণ একটা ঘর বানিয়েছ! খেলা শেষ হলে আমরা দুজন মিলে খেলনাগুলো বাক্সে গুছিয়ে রাখব, কেমন?"

২. নিয়ম-কানুনে স্থিরতা এবং স্পষ্টতা (Consistency is Key)

শিশুরা নিয়ম ও রুটিনের মধ্যে থাকতে ভালোবাসে। এটি তাদের সুরক্ষিত এবং স্থিতিশীল অনুভব করায়। কিন্তু বাবা-মা যদি একই ভুলের জন্য একবার বকা দেন এবং অন্যবার প্রশ্রয় দেন, তাহলে শিশুর মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। সে বুঝতে পারে না কোন আচরণটি সঠিক এবং কোনটি ভুল।

  • বিস্তারিত পদ্ধতি: পরিবারের কিছু মৌলিক নিয়ম (যেমন: ঘুমানোর সময়, স্ক্রিন টাইম, খাওয়ার নিয়ম) নির্দিষ্ট করুন এবং পরিবারের সবাই মিলে তা ধারাবাহিকভাবে পালন করুন। নিয়মগুলো কেন মানা জরুরি, তা শিশুকে তার বয়স অনুযায়ী সহজ করে বুঝিয়ে দিন। নিয়ম ভাঙলে তার পরিণতি কী হতে পারে, সেটাও আগে থেকে জানিয়ে রাখা ভালো। তবে শাস্তি যেন শারীরিক বা অপমানজনক না হয়।

  • বিশেষজ্ঞের মত: শিশু মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, অনিয়মিত বা ঘন ঘন পরিবর্তনশীল নিয়ম শিশুর মধ্যে উদ্বেগ ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করে। সে সীমানা বুঝতে না পেরে জেদি হয়ে ওঠে। একটি সুশৃঙ্খল রুটিন শিশুকে আত্মনিয়ন্ত্রণ শিখতে সাহায্য করে এবং তার আচরণকে ইতিবাচক দিকে চালিত করে।

  • উদাহরণ: যদি নিয়ম হয় রাত ৯টায় ঘুমাতে হবে, তবে প্রতিদিন ছুটির দিন নির্বিশেষে সেই নিয়ম মেনে চলুন। স্ক্রিন টাইমের নিয়ম যদি এক ঘণ্টা হয়, তবে শিশুর কান্নাকাটি বা জেদের কারণে সেই সময়সীমা বাড়াবেন না। বরং তাকে বোঝান যে সময় শেষ এবং এরপর অন্য কোনো মজার কাজ (যেমন: গল্পের বই পড়া) করা যেতে পারে।

৩. ইতিবাচক আচরণের স্বীকৃতি ও প্রশংসা (Positive Reinforcement)

শিশুরা মনোযোগ চায়। যদি তারা ভালো কাজ করে মনোযোগ না পায়, তখন তারা নেতিবাচক আচরণের মাধ্যমে হলেও মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করে। এখানেই প্রশংসার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।

  • বিস্তারিত পদ্ধতি: শিশু যখন কোনো ভালো কাজ করে, যেমন—নিজের প্লেট খাওয়ার পর বেসিনে রাখা, ভাইয়ের সঙ্গে খেলনা শেয়ার করা, বা না বলে পড়তে বসা—তখনই নির্দিষ্ট করে তার কাজের প্রশংসা করুন। শুধু "Good Boy" বা "Good Girl" না বলে, কোন কাজের জন্য প্রশংসা করছেন তা উল্লেখ করুন।

  • বিশেষজ্ঞের মত: হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির সেন্টার অন দ্য ডেভেলপিং চাইল্ড-এর গবেষণা অনুযায়ী, ইতিবাচক স্বীকৃতি শিশুর মস্তিষ্কের গঠনকে শক্তিশালী করে। যখন কোনো ভালো কাজের জন্য প্রশংসা করা হয়, তখন শিশুর মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়ে এবং সে সেই কাজটি পুনরায় করতে উৎসাহিত হয়। প্রশংসা বকাঝকার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে।

  • উদাহরণ: "তুমি খুব ভালো ছেলে"—এই সাধারণ প্রশংসার বদলে বলুন, "আমি দেখেছি তুমি আজ নিজে থেকেই পড়ার টেবিলে বসেছ। তোমার এই দায়িত্ববোধ দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে, ধন্যবাদ!"

উপসংহার

শিশুর অবাধ্যতা বা জেদ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি তার চারপাশের পরিবেশ এবং অভিভাবকদের আচরণেরই একটি প্রতিফলন। সন্তানের দোষ খোঁজার আগে অভিভাবক হিসেবে নিজেদের আচরণ ও পদ্ধতিগুলো পর্যালোচনা করা অত্যন্ত জরুরি। ধৈর্য, ভালোবাসা এবং সঠিক কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে শিশুর আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব। মনে রাখবেন, এই পরিবর্তন একদিনে আসবে না; এর জন্য প্রয়োজন ধারাবাহিক প্রচেষ্টা।

সূত্র:

  • আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স (AAP) প্রকাশিত প্যারেন্টিং নির্দেশিকা।

  • ইউনিসেফ (UNICEF) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর পজিটিভ প্যারেন্টিং সংক্রান্ত প্রকাশনা।

  • শিশু মনোবিদ্যা বিষয়ক বিভিন্ন গবেষণা এবং জার্নাল (যেমন: Journal of Child Psychology and Psychiatry)।

  • হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির সেন্টার অন দ্য ডেভেলপিং চাইল্ড-এর রিপোর্ট।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়