শিরোনাম

প্রকাশিত : ১৬ অক্টোবর, ২০২৩, ১১:০৯ দুপুর
আপডেট : ১৬ অক্টোবর, ২০২৩, ০৩:০৭ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

গুরুতর কিছু অনিয়ম ও অবহেলায় আজ অর্থনীতির এই অবস্থা, বলছেন বিশেষজ্ঞরা 

মুসবা আলিম তিন্নি: [২] আমাদের নতুন সময়কে অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেন, প্রতিদিন অর্থনীতি নিয়ে যেসব সংবাদ প্রচার হচ্ছে সেগুলোর সার্বিক বিবেচনায় বলা যায়,বাংলাদেশের অর্থনীতির সূচক বর্তমানে নিচের দিকেই রয়েছে। এবং খুব দ্রুতই এই সমস্যা থেকে বের হওয়া সম্ভব হবে বলেও আমার মনে হয় না। কারণ রিজার্ভ, রেমিটেন্স, আমদানি-রপ্তানি, খেলাপি ঋণ এই সবকিছুই একটি আরেকটির সাথে সম্পৃক্ত কাজেই যেহেতু সবকিছুতেই ধস চলছে সেহেতু জোর করেও বলার উপায় নাই যে বাংলাদেশের অর্থনীতি ভালো অবস্থানে রয়েছে।

[৩] রিজার্ভ কতটুকু নেমে গেলে দুশ্চিন্তা রয়েছে এবং করণীয় কি এমন প্রশ্নে আবুল বারকাত বলেন, আমি মনে করি ১৭/১৮ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ নেমে গেলে এটা আমাদের দেশের জন্য দুশ্চিন্তার বিষয় হবে। তবে প্রবণতা যেহেতু তলার দিকে সেহেতু এখনই গুরুত্বপূর্ণভাবে যা যা করণীয় রয়েছে তা করতে হবে। রেমিটেন্সের হিসেব যদি আমরা ডলার দিয়ে করি তাহলে কমেছে কিন্তু যদি টাকা দিয়ে করা হয় তাহলে আমার মনে হয় না কমেছে বরং আরও বেড়েছে কারণ রেমিটেন্সের ফিগার যখনই বলা হয় তখন ফরমাল চ্যানেলে আনুষ্ঠানিক ভাবে যা আসে সেই পরিমাণটা বলা হয় এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা আসে না সেখানে ডলার আসে তাহলে ব্যাংকিং চ্যানেলে যদি ২০ বিলিয়ন ডলার আসে তাহলে আরও ২০ বিলিয়ন হুন্ডি হয়ে আসে কিন্তু সেটা ডলার আসে না সেখানেই এটা পরিবর্তন হয়ে যায় আমাদের দেশী মূদ্রায় অর্থাৎ যিনি পাঠালেন তিনি ডলারে পাঠালেন কিন্তু তার পরিবার যখন সেটা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তুলবে তখন সেটা টাকার হিসেবেই পাবে অতএব হিসেব অনুযায়ী রেমিটেন্স কমে গেছে এই কথাটা ঠিক না। 

[৪] তিনি বলেন, যদি ডলারে হিসেব করেন তাহলে রেমিটেন্স কমে গেছে এবং যেটার সাথে রিজার্ভের সম্পর্ক আছে কারণ রিজার্ভের হিসাবটা ডলারেই হয়। আর রিজার্ভ পাওয়া যায় রেমিটেন্সের মাধ্যেমে অথবা রপ্তানির মান ভালো করলে এছাড়া আর কেনো পথ নাই। রেমিটেন্স যদি টাকার অংকে না কমে থাকে অর্থাৎ যে ফিগার দেখানো হচ্ছে তার দ্বিগুণ হয়ে থাকে তাহলে যেসব পরিবারে আসছে সেসব পরিবার কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে চাঙ্গা থাকছে তবে জিনিষপত্রের দাম বাড়ার কারণে হয়তো কিছুটা অস্বস্তি সবারই হচ্ছে কিন্তু সেটা অন্য বিষয় ।

[৫] আবুল বারাকাত বলেন, আমরা মূলত রেমিটেন্সের ফিগারটা জানতে পারি সেটা ডলারের হিসেবে এবং এভাবে চলতে থাকলে রিজার্ভ কমতে থাকবে কারণ যারা রেমিটেন্স পাঠায় তারা ব্যাংকিং চ্যানেলে না পাঠিয়ে হুন্ডির মাধ্যেমে পাঠান।  ডলারের যেই এক্সচেইঞ্জ রেট বাজারে যেটা সরকারিভাবে নির্ধারিত আছে আর ওপের মার্কেটে যেই গ্যাপটা রয়েছে সেটা তো প্রায় ১৫ থেকে ২০ টার মতো, এই গ্যাপটা ৩/৪ টাকার মধ্যে নামিয়ে আনলে রেমিটেন্সটা ব্যাংকিং চ্যানেলে আসতে পারে। কারণ এমন পাগল সাধারণত কেউ-ই নাই যে টাকা পাঠাবে আবার প্রতি ডলারে ১৫/২০ টাকা করে লস করবে। এই ক্ষেত্রে সরকার আড়াই পার্সেন্ট করে ইনসেন্টিভ দেয় সেই ইনসেন্টিভটা যদি ১০ পার্সেন্ট হয় তাহলে হয়তো রেমিটেন্সটা ব্যাংকিং চ্যানেলে যা আসার তাই আসবে তাহলে আরও কমপক্ষে ১০ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ বাড়বে। 

[৬] তিনি বলেন, টাকার যে মূল্যমান সেটা যেকোনোভাবেই হোক বাড়াতে হবে। আর যেসব দেশ অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে ছিলো এবং বর্তমানে ভালো অবস্থানের দিকে যাচ্ছে যেমন পাকিস্তান, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা এসব দেশ কিভাবে নিজেদের অল্প সময়ের মধ্যেই অর্থনৈতিক ভাবে সচ্ছল করে তুলেছে সেটা খেয়াল করেতে হবে। অর্থাৎ দেশের অর্থনীতিকে সচ্ছল করতে হলে যদি কিছু অপ্রিয় রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হয় তাহলে সেটাই করতে হবে। যেমন, বিদেশে অর্থ পাচার পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে , এক্সচেইঞ্জ রেট ঠিক করতে হবে, সুদের হার বাড়াতে হবে, টাকার দামটা বাড়ানো দরকার টাকাকে কেনোভাবেই সস্তা না করা, সঞ্চয় করতে হবে , ব্যাংক ঋণ সহজ করতে হবে, মোটকথা কঠিন কিছু সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে কারো উপর নির্ভরশীল থাকা যাবে না তাহলেই দেশের অর্থনীতি আবারও সচল হতে পারে। 

[৭] অর্থনীতিবীদ এ. বি. মির্জ্জা মোঃ আজিজুল ইসলাম আমাদের নতুন সময়কে বলেন, আমাদের এখন চেষ্টা করতে হবে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর এবং রেমিটেন্স বাড়ানো। দেশীয় অর্থনীতির মূল অংশে অনিয়মের কারণেই আজকের এই পরিস্থিতি বলে আমি মনে করি। খেলাপি ঋণের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। মানি এক্সচেঞ্জটার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। 

[৮] মির্জ্জা আজিজ বলেন, বর্তমানে ঋণের সুদের হার বাড়তে শুরু করেছে। আমদানি পণ্য, ডলার ও গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ফলে পণ্যের দাম বাড়ছে। এদিকে অর্থনৈতিক মন্দায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমায় পণ্যের বিক্রি কমছে। এতে শিল্প খাতের উৎপাদনও কমছে। সব মিলে সার্বিকভাবে বেসরকারি খাত নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। দেশে কর্মসংস্থানের ৯৫ শতাংশই বেসরকারি খাতে। কাজেই এ খাতের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হলে পুরো অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়বে। ডলার সংকট, এর দাম বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধিতে উদ্যোক্তারা উদ্বিগ্ন। ডলার সংকটসহ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বহু বিনিয়োগকারী হাত গুটিয়ে বসে আছেন। দ্রুত এ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বেসরকারি খাতও বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে পারে। দেড় বছর আগে প্রতি ডলার পাওয়া যেত ৮৪ টাকায়; এখন তা বেড়ে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা হয়েছে। এ দামেও মিলছে না ডলার। ফলে পণ্য আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎস রেমিট্যান্স। 

[৯] তিনি বলেন, দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে নিম্নমুখী প্রবণতায় স্পষ্ট যে, রেমিট্যান্স বাড়াতে অতীতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তাতে ত্রুটি রয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে কেন উৎসাহবোধ করছেন না তার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে হবে। বস্তুত কী কারণে ডলার সংকট দূর হচ্ছে না, তা খুঁজে বের করতে হবে। পাশাপাশি ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে যারা বিশেষজ্ঞ রয়েছেন তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। দেশে বিনিয়োগের বাধাগুলো দূর করতে হবে। বিনিয়োগকারীরা যাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হন, তেমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। দেশে বেসরকারি খাত ঘিরে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হলে সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। সম্পাদনা: রাশিদ 

এমটি/আর/এইচএ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়